৪ আশ্বিন ১৪১৮ বুধবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০১১ |
|
|
|
|
|
|
কলকাতার প্রথম বাড়ির পুজো |
বেহালা সখেরবাজার অঞ্চল। খানিকটা ভেতর দিকে গেলেই চোখে পড়বে দ্বাদশ শিবমন্দির। ঠিক ভগ্নদশা বলা যায় না, তবে রক্ষণাবেক্ষণ না করলে পরের প্রজন্ম হয়তো তাই-ই বলবে। অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তারা।
মোগল সেনাপতি মানসিংহ কামদেব ব্রহ্মচারীর পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে তার পুত্র লক্ষ্মীকান্তকে তিনটি গ্রামের জমিদারী দান করেন। সাবর্ণ গোত্রীয় রায়চৌধুরী পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে, শহর কলকাতার গোড়াপত্তন এই ঘটনা থেকেই। কলিকাতা, গোবিন্দপুর, সুতানুটী— এই তিন গ্রামের আর্থিক ও সামাজিক উন্নতির জন্য জমিদার লক্ষ্মীকান্ত, হালিশহরের আদি বসতি ছেড়ে বরিষায় (এখনকার বেহালার সখেরবাজার অঞ্চল) গৃহ নির্মাণ করলেন, সঙ্গে আটচালা দেবদালান এবং ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে আয়োজন করেন কলকাতা শহরের প্রথম পারিবারিক পুজো।
মহানবমীর ১৫ দিন আগে দেবীর বোধন হয়। পুজো হয় “দুর্গাভক্তি তরঙ্গিনী” মতে ও “নবমাদী কল্পে”। প্রথম পুজোর আচারবিধি মেনেই হয়ে আসছে এই পারিবারিক দেবী আরাধনা। পুজো দালানে তৈরি হয় মাতৃমূর্তি। ব্যবহৃত হয় সেই পুরনো কাঠামোই। সপ্তমী ও অষ্টমীতে পাঁঠা বলি এবং নবমীতে মোষ বলির প্রথা ছিল। ২০০৭ সাল থেকে পশুবলির জায়গায় হয় চালকুমড়ো, আখ বলি।
দশমীর সিঁদুর খেলাও বেশ জনপ্রিয়। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠা, সারাদিন উপোস থেকে মাকে বরণ করেন, সিঁদুর দান করার পর বাকিরা তাঁকে সিঁদুর দিয়ে খেলা শুরু করেন। আগে নিয়ম করে আদি গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জন করা হত। দেবীকে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হত। গত কয়েক বছর হল বিসর্জনের জন্য যাওয়া হয় বড় গঙ্গায়। আদি গঙ্গার দূষণের জন্যই এই ধারাবাহিকতা থেকে সরে এসেছেন পরিবারের সদস্যরা।
ষষ্ঠী থেকে নবমী অবধি মাছ ভোগই প্রধান। দশমীতে পান্তা ভোগ।
লক্ষ্মীকান্তর পারিবারিক পুজোর দায়িত্ব বহন করে চলেছেন এ প্রজন্মের রতিকান্ত রায়চৌধুরী। আশি ছুঁই ছুঁই রতিকান্তবাবু বললেন, “সাবর্ণদের দুর্গাপুজোর পুরোহিত আগে আসত বাংলাদেশ থেকে। পরবর্তীকালে তাঁদের বংশধররা এ পেশায় না থাকায় এখন এখানকার পুরোহিতই পুজো সম্পন্ন করেন।” পুত্রবধূ সাগরিকা রায়চৌধুরী জানালেন, “পুজোর দিনগুলি কোথা দিয়ে কাটে বোঝাই যায় না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পুজো দালানে আচার-বিচার-আনন্দে খাওয়াদাওয়া করে চারটে দিন যেন ফুৎকারে শেষ হয়ে যায়। সকল আত্মীয়-পরিজন মিলে দু’বেলা একসঙ্গে খাওয়া দাওয়ার মজাটাই আলাদা।”
আদি রায়চৌধুরী পরিবার বৃদ্ধি পেয়ে এখন বড়বাড়ি, মেজোবাড়ি হয়েছে। সে সব বাড়িতেও ঘটা করে দুর্গাপুজো হয়। তবে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে, শহর কলকাতার সব থেকে পুরনো পুজোর বয়স এখন ৪০২ বছর।
|
ছবি: গৌতম বসুমল্লিক |
|
|
|
|