পাত্রসায়রে বালক-খুন
নজর ঘোরাতেই মুক্তিপণের ফোন, দাবি পুলিশের
পারিবারিক শত্রুতার জেরেই পাত্রসায়রের বাঁকিশোল গ্রামের বালক রানা বাগদিকে খুন করা হয়েছে। খুনের পরে মোটা টাকার মুক্তিপণ চেয়ে অভিযোগের তির অন্যদিকে ঘোরাতে চেয়েছিল আততায়ী। পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জেরায় খুনের অভিযোগে ধৃত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সে কথাই তাদের কাছে জানিয়েছে।
তবে যে ভাবে ১০ বছরের বালক রানার হাত-পা বেঁধে, গলায় তার পেঁচিয়ে খুন করা হয়েছে, তাতে পুলিশের অনুমান ওই খুনের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। এ ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা শুরু করেছে পুলিশ। বুধবার ধৃতকে বিষ্ণুপুর আদালত তিন দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয়। জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “ওই বালককে খুনের ঘটনায় ধৃত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে আরও জেরা করার জন্য পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ওই খুনের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।”
গত শনিবার দুপুরে পাড়ার সম্পর্কিত দাদা ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে সাইকেলে ঘুরতে বেরিয়েছিল রানা। তারপর থেকে তার খোঁজ না পেয়ে রবিবার পুলিশের কাছে নিখোঁজ ডায়েরি করেন রানার বাবা হীরালাল বাগদি। এরপরেই ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে ফোন আসে হীরালালবাবুর কাছে। মুক্তিপণ হিসাবে এক লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। মুক্তিপণ দেওয়ার আগেই মঙ্গলবার বিকেলে পাশের হবপুকুর গ্রাম লাগোয়া একটি সেচনালা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রানার দেহ উদ্ধার হয়। মৃত বালকের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সেই রাতেই পড়শি ওই কিশোরকে গ্রেফতার করে।
এ দিকে, দশ বছরের একটা বালককে এমন নৃশংস ভাবে খুনের ঘটনায় উত্তেজনায় ফুঁসছেন বাঁকিশোল, হবপুকুর গ্রামের বাসিন্দারা। দেহ উদ্ধারের পর মঙ্গলবার রাতে ধৃতের বাড়িতে চড়াও হন স্থানীয় বাসিন্দারা। তার আগেই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন ধৃত ছাত্রের পরিবারের লোকেরা।
পেশায় ক্ষুদ্র চাষি হীরালাল বাগদির এক মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে রানা ছিল ছোট। স্থানীয় বাঁকিশোল অক্ষয়কুমার বিদ্যায়তনে পঞ্চম শ্রেণিতে সে পড়ত। ছেলে খুন হওয়ায় কার্যত ভেঙে পড়েছেন তার পরিবারের লোকজন। এ দিন সকাল থেকেই অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া এই বাগদি পরিবারের বাড়ির সামনে স্থানীয় বাসিন্দারা ভিড় করেন। এই বাড়ির পাশে আর একটা বাড়ি। তারপাশেই অভিযুক্তের বাড়ি। রানার মা পুতুল বাগদি কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। বাড়িতে হাঁড়ি চড়েনি। পুতুলদেবীর আক্ষেপ, “বেশ কিছুদিন আগে দুই পরিবারের মধ্যে সামান্য ঝগড়া হয়েছিল। মাস খানেক আগে পুকুরে স্নান সেরে বাড়ি ফেরার সময় ওই ছেলেটার গায়ে নাকি জল দিয়েছিল রানা। সেই সময় ওই ছেলেটা আমার ছেলেকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছিল। সেটা যে ওই ছেলেটা সত্যি সত্যিই ঘটিয়ে দেবে, তা কে জানত!”
নিহতের বাবা হীরালালবাবুর অভিযোগ, “আমার ছেলেকে খুন করার পরে লক্ষাধিক টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ঘটনাটি অন্য দিকে ঘোরাতে চেয়েছিল ওই ছেলেটা। বিষয়টি পুলিশকে প্রথমে জানিয়েছিলাম। পুলিশ একটু তৎপর হলে এমন পরিণতি হয়তো হত না।”
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক এ দিন বলেন, “ওই কিশোর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হওয়ায় এতদিন তাকে সে ভাবে আটকে জেরা করা যায়নি। মুক্তিপণ চাওয়ার পরে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ওকে চিহ্নিত করা গিয়েছিল। তারমধ্যেই দেহটি উদ্ধার হয় ও খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। তাই ওই কিশোরকে ধরা হয়েছে।”
এ দিন পুলিশের গাড়ি থেকে আদালতে প্রবেশের সময় ভাবলেশহীন মুখেই দেখা গিয়েছে ধৃত কিশোরকে। এ দিন বারবার চেষ্টা করেও ধৃতের বাবা মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তার এক আত্মীয় দাবি করেন, “সামান্য ঝগড়ার জেরে ও কী করে রানাকে খুন করতে পারে, তাই তো বুঝতে পারছি না। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক এটাই আমরা চাইছি।”
গ্রামবাসী অসিত বাগদি, ভূতনাথ বাগদি অবশ্য দাবি করেন, “দুই পরিবারে মাঝেমধ্যে ঝগড়া হত। তবে তা খুনোখুনির পর্যায়ে কী করে চলে গেল, ভেবে পাচ্ছি না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.