‘ঢের হয়েছে’, রেজ্জাক ফিরলে বলবেন সাকেদা
লো চলে গিয়েছে।
রাত ৯টাতেই অন্ধকারে ডুবে বাঁকড়ি। যেন সকলেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
শীত গিয়ে সবে বসন্তের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এমনি দিনে এই সময়ে পাড়ার মোড়ে আড্ডা চলে। ক্যারম খেলে ছেলেরা। চায়ের দোকান গমগম করে।
কিন্তু বুধবার রাতটা অন্য রকম। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে রেজ্জাক মোল্লার গ্রাম একেবারে নিঝঝুম। আগের দিন পাশের গাঁয়ে খুন হয়েছে। সেই আতঙ্ক বসতির গায়ে হালকা চাদরের মতো জড়িয়ে ছিলই। সন্ধ্যায় টিভি বলল, প্রবীণ নেতা রেজ্জাককে তাড়িয়ে দিয়েছে তাঁর দল, সিপিএম।
লোডশেডিংয়ে চুপ মোল্লাপাড়ায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল একতলা মাটির বাড়িটা। সামনে দু’টা ঘর কেবল পাকা। একটায় অফিস, পাশে ছোট ঘরে শোওয়ার ব্যবস্থা। রেজ্জাক যদিও মাটির ঘরেই থাকেন।
বাড়ির সামনে লোহার গেটে তালা। খাওয়া-দাওয়া সেরে শোওয়ার আগে নমাজের জন্য তৈরি হচ্ছিলেন রেজ্জাক-জায়া সাকেদা বিবি। গেটে ধাক্কা দিয়ে ডাকাডাকি করতে তিনিই অন্ধকার হাতড়ে বেরিয়ে আসেন। পকেট-টর্চ এগিয়ে দিতে তার আলোয় লম্ফ খুঁজে দেশলাই ঠুকে জ্বালেন।
বাড়ির অন্য বাসিন্দা, রেজ্জাকের নব্বই পার করা মা রাজিয়া বিবি তত ক্ষণে ঘুমে। রোজ সন্ধেতেই তিনি খেয়ে-দেয়ে শুয়ে পড়েন। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

বাড়িতে রেজ্জাক-জায়া।—নিজস্ব চিত্র।
দাদা ফোন করেছিলেন?
না, রেজ্জাক ফোন করে বাড়িতে খবরটা দেননি। সন্ধ্যায় গ্রামেরই এক যুবক এসে বলেন, ‘চাচিমা, টিভিটা খুলুন। চাচাকে দল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।” চমকে ওঠেন সাকেদা। চোখে চশমা দিয়ে টিভি খুলে সাকেদা দেখেন, পর্দা জুড়ে বড়-বড় হরফে বারবার ভেসে উঠছে ‘সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত রেজ্জাক’।
সেই কলেজে পড়তে-পড়তেই রেজ্জাক বিয়ে করেছিলেন তাঁকে। তবে রোজকার ঘরকন্নার কথার বাইরে রাজনীতির আলোচনা করতেন না বললেই চলে। সাকেদা কখনও ঘর ছেড়ে দল করতে যাননি। রেজ্জাকও তাঁকে কখনও বলেননি যে তিনি দলে এতটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন যে পার্টি তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।
সাকেদা বলেন, “পার্টি কখনও ওঁর প্রতি সুবিচার করেনি। ওঁকে সারা জীবন ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে। যখন উনি গরিবগুরবো মানুষের কথা বলতে শুরু করেছেন, তখনই ওঁকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হল।” কিন্তু দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা কি ওঁর ঠিক হয়েছে? “ও সব আমি জানি না। কিন্তু উনি এলাকার বিধায়ক, উনি তো মানুষের কথা বলবেনই।”
দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দুই ছেলে কলকাতায় থাকেন। রেজ্জাক থাকলে বাড়িটা লোকজনের আনাগোনায় গমগম করে। চা করতে-করতে ক্লান্ত হয়ে যান সাকেদা। কিন্তু এ দিন খবরটা ছড়িয়ে পড়ার পরে কেউই সাকেদার সঙ্গে দেখা করতে আসেননি। ফোনও করেনি কেউ। ছেলেমেয়েরাও না। ফাঁকা অফিসঘরে অন্ধকার দেওয়ালে একা স্থির হয়ে আছেন জ্যোতি বসু।
“খবরটা শুনে থেকে মনে হচ্ছে ওঁকে বলি, ‘ঢের হয়েছে, সারাটা জীবন পার্টিকে দিয়ে যা পাওয়ার তা তো পেলে। বয়সও তো অনেক হল, এ বার বাড়িতে বসে বিশ্রাম নাও।” থেমে বড় করে শ্বাস নেন সাকেদা “কিন্তু সে কি শোনার লোক? যা ভাল মনে করবে, সেটাই করবে...।”

এই সংক্রান্ত খবর:






First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.