কপি-রাইটারদের বিরুদ্ধে আর্থিক ‘জুলুমে’র অভিযোগ। তারই প্রতিবাদে গত সোমবার থেকে কর্মবিরতি করছেন দলিল লেখক সমিতির মুর্শিদাবাদ জেলার সদস্যরা। ওই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন আইনজীবী এবং ল ক্লার্করাও। ফলে মুর্শিদাবাদ জেলার সব ক’টি রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রয়েছে। এতে প্রশাসনের আয় যেমন বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তেমনই অসুবিধায় পড়ছেন সাধারণ মানুষজনও। রাজ্যের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিআর) বিশ্বজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় অচলাবস্থা কাটাতে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন। বুধবার বিষয়টি জানতে পেরে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বিকেলে জেলার রেজিস্ট্রেশন দফতরের কর্তা ও বিবদমান সব পক্ষকে নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকে সব অফিস চালু করতে হবে। সরকারি হারের চেয়ে বেশি পয়সা আদায় করতে পারবেন না কেউ। সমস্যা হলে আমাকে সঙ্গে-সঙ্গে তা জানাতে বলা হয়েছে।”
জমি-সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন করার পর দলিল দিয়ে দেওয়া হয় ক্রেতা, অর্থাৎ সম্পত্তির নতুন মালিকানা পাওয়া ব্যক্তিকে। বিভিন্ন কাজে লাগে বলে সেই দলিলের ‘কপি’ রেজিস্ট্রি অফিসে থাকা আব্যশিক। লাইসেন্সপ্রাপ্ত কপি-রাইটাররা এই কাজটাই করে থাকেন। অভিযোগ, এঁরা সরকার নির্ধারিত মজুরির অতিরিক্ত আদায় করছেন। যদিও এই সব অভিযোগ মানতে রাজি নন কপি-রাইটার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক কবীর হোসেন। তিনি বলেন, “দলিল কপি করার জন্য আমরা সরকার নির্ধারিত হারেই টাকা নিই। কোথাও হয়তো সামান্য বেশি টাকা নিতে পারে। কিন্তু সেটি ব্যতিক্রম মাত্র।”
এ দিকে এখন যেখানে রেজিস্ট্রির আগে দলিল স্ক্যান করা হয়, সেখানে কপি রাইটারের প্রয়োজনীয়তা কোথায় তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তবে তার চেয়েও বড় বিষয় হল গত তিন দিন রেজিস্ট্রি অফিস বন্ধ থাকায় বিস্তর ভোগান্তি হয়েছে। জেলা জুড়ে সব অফিসে কাজ বন্ধ থাকায় রাজস্ব আদায় যেমন বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তেমনই জমি কেনা-বেচা বন্ধ থাকায় হয়রানির একশেষ হতে হচ্ছে মানুষজনকে। গফুরপুরের আরমান শেখ মেয়ের বিয়ের জন্য প্রসাদপুরের মাঠে এক বিঘে জমি দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। দলিলের জন্য স্ট্যাম্পও কিনেছিলেন শুক্রবার। আরমান বলেন, ‘‘সোমবার জঙ্গিপুর অফিসে গিয়ে শুনি অনির্দিষ্ট কালের জন্য অফিস বন্ধ। নিরুপায় হয়ে শেষ পর্যন্ত বীরভূমের নলহাটি থেকে রেজিস্ট্রি করতে হয় জমি। বাড়তি প্রায় ৬০০ টাকা খরচ হয় যাতায়াতের জন্য।’’ সুতির আজেম শেখ কানপুরে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। নিমতিতায় ২ কাঠা বসত জমি কিনবেন বলে টাকা পয়সা নিয়ে মঙ্গলবার নিমতিতা রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে ঘুরে এসেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ট্রেনের টিকিট কাটা ছিল বলে বুধবার ভোরে রওনা হতে হয়েছে আমাকে। আপাতত ব্যাঙ্কে টাকাটা রেখে দিতে হয়েছে। জমি হাতছাড়া যাতে না হয় তার জন্য ৫০ হাজার টাকা জমি মালিককে দিয়েছি।”
মুর্শিদাবাদ রেজিস্ট্রেশন দফতরের ডিআইজি দ্বিজেন বিশ্বাস বলেন, “এই ক’দিন যাঁরা রেজিস্ট্রি করাতে পারেননি, বৃহস্পতিবার অফিস খোলার পর তাঁরাই আসবেন। তাই সামগ্রিক ভাবে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হবে না হয়তো। তবুও এমনটা যাতে আর না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা হবে। ২৬ মার্চ ফের আলোচনায় বসবেন ডিএম।” |