তিন বছরেও সেতুর কাজ হয়নি কেশপুরে
প্রতিশ্রুতি ছিল, দেড় বছরের মধ্যে সেতু তৈরির কাজ শেষ হবে। সেই সময়সীমা বহু দিন পেরিয়েছে। দেখতে দেখতে তিন বছর ঘুরেছে। কিন্তু এখনও কেশপুরের পঞ্চমীর সেতু চালু হল না। কবে কাজ শেষ হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সেতুর কাজ চলতে থাকায় স্থানীয় মানুষও ক্ষুব্ধ। পরিস্থিতি দেখে কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুইয়ের কটাক্ষ, “মনে হচ্ছে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা! সেই কবে সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। অথচ, এখনও শেষ হল না। কবে সেতুটি চালু হয় সেটাই দেখার!”
এ ক্ষেত্রে কেন এই গড়িমসি? সদুত্তর এড়িয়ে পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র শ্যামল প্রতিহার বলেন, “এখন কাজ ঠিকঠাক ভাবেই চলছে। অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ শুরু হবে। বর্ষার আগে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।” যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি। তাঁর বক্তব্য, “পরিস্থিতির উপর নজর রয়েছে।”
কেশপুরের পঞ্চমী সেতুতে বাকি অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ।—নিজস্ব চিত্র।
মেদিনীপুর-কেশপুর রাজ্য সড়কের উপর পঞ্চমীতে একটি সেতু রয়েছে। নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে পারাং নদী। সেতুটি একেবারেই সংকীর্ণ। একসঙ্গে বেশি সংখ্যক লোকজন যাতায়াত করতে পারেন না। পরিস্থিতি এমনই যে, একদিক থেকে একটি বাস এলে অন্যদিক থেকে আসা বাসকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কারণ, একই সঙ্গে দু’টি বাস এই সেতুর উপর দিয়ে পারাপার করতে পারে না। শুধু তাই নয়। বাস-লরি পারাপারের সময় পথচলতি মানুষকেও দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। একসঙ্গে সেতু পেরোলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। মেদিনীপুর-কেশপুর রাজ্য সড়কটি আবার জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর একটি। মেদিনীপুর থেকে কেশপুর, নাড়াজোল হয়ে এই সড়কের উপর দিয়ে ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, দাসপুর যাওয়া যায়। আবার নেড়াদেউল, চন্দ্রকোনা হয়ে একদিকে গড়বেতা, অন্য দিকে বর্ধমান, তারকেশ্বর যাওয়া যায়। পঞ্চমীর সেতুটি যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়তে যে এই সব এলাকার সঙ্গে মেদিনীপুর ও তার আশপাশ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, তা বলাই বাহুল্য। তখন ঘুরপথে ওই সব এলাকায় পৌঁছতে হবে। পরিস্থিতি দেখে পুরনো সেতুর পাশে নতুন সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত মতো কাজও শুরু হয়। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পঞ্চমীর প্রস্তাবিত সেতুর শিলান্যাস করেন তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী। সব মিলিয়ে মঞ্জুর হয়েছিল ৫ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। ঠিক ছিল, প্রস্তাবিত সেতুটি ১১৬.৩ মিটার লম্বা এবং ৭.৫ মিটার চওড়া হবে। দু’দিকে দেড় মিটার করে ফুটপাত থাকবে। সেই সময় পূর্ত দফতরের প্রতিশ্রুতি ছিল, দেড় বছরের মধ্যে সেতু তৈরির কাজ শেষ হবে। কিন্তু কোথায় কী!
শিলান্যাসের পর কাজ শুরু হয়। তবে, শুরু থেকেই কাজের গতি কম ছিল বলে স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ। পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, সম্প্রতি সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। তবে সেতুর দু’দিকে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ শুরু করা যায়নি। এর ফলেই, সেতুটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। সেতুর দু’পাশে রাস্তা তৈরির কাজ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে অবশ্য তৃণমূল সরকারকে বিঁধতে ছাড়ছে না সিপিএম। কেশপুরের বিধায়ক রামেশ্বরবাবু বলেন, “৬ কোটি টাকার সেতু বানাতে কত সময় লাগে? ২০১০-’১১ আর্থিক বছরে কাজ শুরু হয়েছিল। ২০১২-’১৩ তেও শেষ হল না। যা পরিস্থিতি তাতে চলতি আর্থিক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা অসম্ভব।” তাঁর অভিযোগ, “এ ক্ষেত্রে নজরদারির অভাব ছিল। না হলে কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়ত না। এক সময় তো কাজ কার্যত থমকে ছিল। তখন বিষয়টি আমি পূর্তমন্ত্রীর নজরে আনি।” গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে দ্রুত সেতু তৈরির দাবি জানিয়েছেন রামেশ্বরবাবু।
মেদিনীপুর-কেশপুর রাজ্য সড়কটি যে গুরুত্বপূর্ণ, তা মানছেন কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শুভ্রা দে সেনগুপ্ত। তবে তাঁর দাবি, “পঞ্চমীর সেতু তৈরির কাজ ঠিকঠাক ভাবেই চলছে। অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার চেষ্টা চলছে।” সেতুর কাজের ক্ষেত্রে নজরদারির অভাব ছিল বলে মানতে নারাজ পূর্ত দফতর। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “এ ক্ষেত্রে নজরদারির অভাব তেমন ছিল না। তবে, বৃষ্টির জন্য মাঝেমধ্যে কাজে সমস্যা হয়েছে। কখনও কখনও কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।”
পূর্ত দফতর এখন বলছে আগামী বর্ষার আগে সেতু চালু হবে। আপাতত তারই অপেক্ষায় কেশপুরবাসী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.