|
|
|
|
|
|
ভাড়াটে চাই |
না-ই বা হল এক্কেবারে নিজের। ভাড়া নেওয়া ছাদের তলায় পরিপাটি সংসার সাজাতেও
অনেক প্রস্তুতি লাগে। তাই কলকাতার কোথায় কত ভাড়া হতে পারে বা ভাড়া নেওয়ার
আগে কী কী দেখা উচিত, তার খুঁটিনাটি জানাতে আজ আপনার পাশে গার্গী গুহঠাকুরতা |
সাধ থাকলেই যে সাধ্যে কুলোবে, এমনটা তো নয়। তাই চাইলেই ঝপ করে একখানা বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনে ফেলা সম্ভব না-ও হতে পারে অনেকের পক্ষে। বিশেষত কলকাতা এবং তার লাগোয়া অঞ্চলে। যেখানে জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাটের দর হু হু করে ঊর্ধ্বমুখী। ফলে সে ক্ষেত্রে বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া ছাড়া আর উপায় কী? |
|
মাত্র বছর কয়েকের পুরনো চাকরি আর আনকোরা নতুন বিয়ে। এই পরিস্থিতিতে ফ্ল্যাটে আলাদা সংসার পাততে অনেকেরই ভাড়া নেওয়া ছাড়া তেমন গতি নেই। গ্রাম বা জেলা-শহর থেকে কাজ করতে কলকাতায় এসে একেবারে শুরুতে বাড়ি কেনা সম্ভব না-ই হতে পারে অনেকের পক্ষে। কারও আবার হয়তো বদলির চাকরি। ফলে এক শহরে থিতু হওয়ার সুযোগ তেমন নেই। কেনার বদলে ফ্ল্যাট বা বাড়ি ভাড়াই বরং তাঁর পক্ষে ভাল। এ রকম নানা প্রয়োজনে বাড়ি ভাড়ার খোঁজ করি আমরা।
তাই কলকাতার কোথায় ভাড়া কেমন, ফ্ল্যাট বা বাড়ি ভাড়া নেওয়ার আগে কী কী দেখা উচিত এই সমস্ত বিষয় নিয়েই আমাদের আজকের এই আলোচনা। |
ভাড়া কেমন? |
শহরে কোথায় ভাড়া কেমন, তার মোটামুটি একটা ধারণা সঙ্গের সারণিতে দেওয়ার চেষ্টা করলাম আমরা। তবে মনে রাখবেন, এটা নিছকই ধারণা মাত্র। কারণ, বাস্তবে ফ্ল্যাট বা বাড়ির গুণমান, সুযোগ-সুবিধা, যোগাযোগ ইত্যাদি কারণে ভাড়ার অঙ্ক কম-বেশি হতেই পারে। তা ছাড়া, এই বাড়ি-ফ্ল্যাট ভাড়ার বাজার আমাদের দেশে এখনও এতটাই অসংগঠিত যে, সে ভাবে কোনও ধরা-বাঁধা নিয়ম এ ক্ষেত্রে কাজ করে না। যে কারণে একই এলাকায়, এমনকী এক আবাসন চত্বরেও ভাড়ার বেশ তারতম্য চোখে পড়ে।
এখানে একটা কথা বলে রাখি। বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া নিলে কিন্তু শুধু ভাড়ার টাকা মেটালেই চলবে না। হয়তো আলাদা মিটারে আসা বিদ্যুতের বিলও দিতে হবে। এমনকী ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে তার রক্ষণাবেক্ষণের খরচ (মেনটেন্যান্স ফি) বাবদ টাকা গুনতেও তৈরি থাকুন। |
ফারাক কেন? |
ভাড়ার অনেকখানি পার্থক্য হওয়ার পিছনে অসংগঠিত বাজারই একমাত্র কারণ নয়। অনেক সময়েই নীচের বিষয়গুলি সে ক্ষেত্রে বেশ বড় হয়ে দাঁড়ায়—
• যোগাযোগ:- মেট্রো রেল কাছে হলে কিংবা বাসস্টপ বেশি দূরে না-হলে বা রাত-বিরেতেও অটো-ট্যাক্সি পাওয়া গেলে সেখানকার ফ্ল্যাটের ভাড়া বেশি হওয়ারই সম্ভাবনা। ভেবে দেখুন, গড়িয়ায় মেট্রো পৌঁছনোর পর সেখানে বা তার আশপাশে বাড়ি ভাড়া কী হারে বেড়েছে। এই একই কারণে ভাড়া বাড়তে দেখা গিয়েছে জোকাতেও। এখন জোকা কিংবা গড়িয়াতে একটু ভাল একখানা হাজার বর্গ ফুটের ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে কিন্তু নিদেনপক্ষে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা ধরে রাখতে হবে আপনাকে।
• বাজার, স্কুল, হাসপাতাল:- বাজার-দোকান, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ইত্যাদি কাছাকাছি থাকলেও সাধারণত ভাড়া কিছুটা বাড়ে। যেমন ধরুন, ইএম বাইপাসের উপর রুবি মোড় আর গড়িয়াহাট কানেক্টর। অটো-বাস ধরে এখান থেকে সহজেই মেট্রো স্টেশনে পৌঁছে যাওয়া যায়। তার উপর নতুন-পুরনো মিলিয়ে খান সাতেক নামী স্কুল রয়েছে এই চৌহদ্দিতে। রয়েছে ছ’টি বড় হাসপাতাল। যার ফল হিসেবে গত তিন বছরে অন্তত ২০-২৫ শতাংশ ভাড়া বেড়েছে এখানে।
• নিরাপত্তা:- অনেক সময়েই দেখা যায় ‘স্ট্যান্ড অ্যালোন’ বাড়ির ফ্ল্যাটের তুলনায় থাকার জায়গা হিসেবে আবাসনকেই বেশি পছন্দ করছেন মানুষ। কারণ ঘেরা জায়গা, অনেকে একসঙ্গে থাকা, নিরাপত্তা রক্ষী ইত্যাদি সুবিধার দরুন সেখানে বেশি নিরাপদ বোধ করেন অনেকে। বিশেষত যখন স্বামী-স্ত্রী উভয়েই চাকরি করেন। কারণ, কাজে যাওয়ার আগে বাড়ির বাচ্চা ও বয়স্কদের এই নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রেখে যেতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন তাঁরা। তাই ‘স্ট্যান্ড অ্যালোন’-এর তুলনায় আবাসনের ভাড়া কিছুটা বেশি হলে অবাক হবেন না।
কিছুটা এই কারণেই গড়িয়াহাট কানেক্টরে হাজার বর্গ ফুট ফ্ল্যাটের ভাড়া যেখানে ১১ হাজার টাকা, সেখানে রুবি হাসপাতালের কাছাকাছি অনেক আবাসনেই তা গড়পড়তা ১৫ হাজার।
• কোন তলা?:- ভাড়ার অঙ্ক অনেক ক্ষেত্রে নির্ভর করে আপনি ফ্ল্যাটের কোন তলা চান, তার উপরেও। সাধারণত নিরাপত্তার কারণে একতলা (গ্রাউন্ড ফ্লোর) নিতে চান না অনেকেই। ঠিক যেমন গরমের কথা ভেবে একেবারে উপরের তলায় (টপ ফ্লোর) থাকতে চাওয়া লোকের সংখ্যাও তুলনায় বেশ কম। সেই কারণে মাঝের তলাগুলিতে (বিশেষত দোতলা, তিন তলা এবং চার তলায়) ভাড়া বেশি হাঁকতে দেখার প্রবণতা দেখা যায়।
• ‘কুলীন পাড়া’:- বালিগঞ্জ প্লেস, গড়িয়াহাট, আনোয়ার শাহ রোড, নিউ আলিপুর, আলিপুরের মতো বেশ কিছু জায়গায় ভাড়া অবশ্য বরাবরই বেশি। চিরাচরিত ভাবেই এই সমস্ত এলাকা অভিজাত ও উচ্চবিত্তদের বাসস্থান হিসেবে চিহ্নিত। এ সব এলাকায় নতুন ফ্ল্যাট তৈরির সংখ্যাও একেবারে কম। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ভাড়া আকাশছোঁয়া। |
কী দেখবেন? |
ভাড়া বাড়ি চিরকালের জন্য আপনার নয়। কিন্তু থাকার জন্য প্রতি মাসে কড়কড়ে টাকা তো গুনতে হবে। তাই তা নেওয়ার আগে অন্তত বসবাসের কয়েকটি সুবিধা দেখে নিতে কোনও ভাবেই ভুলবেন না—
• যথেষ্ট আলো-বাতাস আছে কি না। দক্ষিণ খোলা হলে ভাল।
• কাছে স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল আছে তো?
• রাস্তা কতটা চওড়া?
• যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন? মেট্রো স্টেশন কি কাছেই?
• বাজার কত দূরে?
• আশপাশের পরিবেশ কেমন? তা কতটা শান্তিপূর্ণ? সাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক গোলযোগের সম্ভাবনা সেখানে কেমন?
• জল সরবরাহ কেমন? সেই জলের গুণগত মানই বা কী রকম?
• বর্ষায় জল জমে কি না।
• নর্দমা ভূগর্ভস্থ কি না।
• মশার উৎপাত কতটা? ইত্যাদি।
একটু বেশি ভাড়ার ফ্ল্যাট হলে, এ ছাড়াও দেখুন— • কমপক্ষে দু’টি বাথরুম আছে তো?
• লিফ্ট, কার পার্কিং-এর সুবিধা কেমন?
• অন্তত দু’তিন কিলোমিটারের মধ্যে শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স আছে কি? |
মাথায় রাখুন |
কলকাতার বুকে বাড়ি ভাড়া খুঁজতে গেলে শুধু ভাড়াটুকু পুঁজি করে মাঠে নামবেন না। সঙ্গে বাড়তি কিছু খরচও অবশ্যই ধরে রাখুন। যেমন—
• ‘অ্যাডভান্স’ বা অগ্রিম: বাজারে চালু রেওয়াজ অনুযায়ী অধিকাংশ বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকই অন্তত তিন থেকে ছ’মাসের ভাড়া অগ্রিম হিসেবে জমা রাখতে চাইবেন। যা আপনি ফেরত পাবেন বাড়ি ছাড়ার সময়ে। তার মানে ভাড়া ৫ হাজার টাকা হলে, ৩০ হাজার আগাম চাইলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
• ব্রোকার বা বিজ্ঞাপনের খরচ: আজকাল অধিকাংশ ফ্ল্যাটই ভাড়া দেওয়া হয় ব্রোকারদের মাধ্যমে। সে ক্ষেত্রে সাধারণত দু’মাসের ভাড়া ‘পারিশ্রমিক’ হিসেবে চান তাঁরা। এ ক্ষেত্রে কিছুটা দরাদরি করতেই পারেন। কিন্তু এখানেও একটা মোটা টাকা তুলে রাখা ভাল। আর যদি ব্রোকার এড়িয়ে সরাসরি মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান, তবে সম্ভব হলে চেনাশোনা লোকের সঙ্গে কথা বলুন। চোখ রাখতে পারেন খবরের কাগজ ও ইন্টারনেটের বিজ্ঞাপনে। চটজলদি পছন্দসই বাড়ি পেতে নিজেও বিজ্ঞাপন দেন অনেকে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তার বিজ্ঞাপনের খরচ বইতে তৈরি থাকতে হবে আপনাকে।
• মালপত্র নিয়ে যাওয়া: এই কাজে যদি কোনও ‘মুভার্স অ্যান্ড প্যাকার্স’-কে নিয়োগ করেন, তবে টাকা তুলে রাখতে হবে তার জন্যও। কত টাকা তারা নেবে, তা নির্ভর করে মূলত দূরত্ব এবং জিনিসপত্রের পরিমাণের উপর। কম খরচে কাজ সারতে চাইলে, ভারী জিনিস তোলা-নামানোর জন্য কয়েক জন মুটে ডাকুন। সঙ্গে আপনি নিজে হাত লাগান।
• কেব্ল সংযোগ ও অন্যান্য দরকারি জিনিস: এখন তো কলকাতা আর হাওড়ায় কেব্ল সংযোগের জন্য সেট টপ বক্স চালু হয়ে গিয়েছে। ফলে যেখানেই যান না কেন (একমাত্র একই পরিষেবাদাতার এলাকায় না-হলে), নতুন করে ওই বক্স ও সংযোগ নিতে হবে আপনাকে। তা ছাড়াও খরচ হতে পারে বাড়িতে নতুন করে জল শোধনের যন্ত্র ইত্যাদি লাগিয়ে গুছিয়ে বসতে। টুকটাক মেরামতি দরকার হতে পারে কল, পাইপের মতো এখানে-ওখানেও। তাই সেই সমস্ত খাতেও অল্প-বিস্তর টাকা ধরে রাখতে ভুলবেন না। |
|
কলকাতায় কোথায় কত? |
জায়গা |
ভাড়া (টাকা/ বর্গ ফুট) |
|
জায়গা |
ভাড়া (টাকা/ বর্গ ফুট) |
উত্তর |
দক্ষিণ-পশ্চিম |
ফুলবাগান |
১৩-১৮ |
আলিপুর/ নিউ আলিপুর |
১৮-৩৫ |
উল্টোডাঙ্গা |
১২-১৮ |
বেহালা |
১০-১৩ |
ভিআইপি রোড |
১০-১৫ |
জোকা |
৮-১০ |
লেকটাউন |
৯-১৩ |
দক্ষিণ-পূর্ব |
দমদম |
৯-১৩ |
গড়িয়া |
১০-১৫ |
পূর্ব |
নরেন্দ্রপুর |
৯-১৪ |
নিউটাউন |
১০-১৬ |
নাকতলা |
১০-১৩ |
সল্টলেক |
১৪-২০ |
মধ্য-দক্ষিণ |
ইএম বাইপাস |
১২-২০ |
বালিগঞ্জ (পশ এলাকা) |
২৫-৩৮ |
দক্ষিণ |
গড়িয়াহাট, ভবানীপুর |
২২-৩০ |
টালিগঞ্জ |
১২-২০ |
* তথ্যসূত্র: কুশম্যান অ্যান্ড ওয়েকফিল্ড |
আনোয়ার শাহ রোড |
১৫-৩০ |
** জেলায় এমন কোনও তালিকা পাওয়া যায়নি |
যাদবপুর, সন্তোষপুর |
১০-১৫ |
|
|
|
|
|
|
|