সম্পাদকীয় ২...
কামতাপুরের নির্ঘোষ
ক দশক পর উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে স্বতন্ত্র কামতাপুর রাজ্যের দাবি আবার হিংসাত্মক। কামতাপুর পিপল্স পার্টি এবং কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও) এই লক্ষ্যে নব পর্যায়ের আন্দোলন শুরু করিয়াছে। পিপল্স পার্টির আন্দোলন যদি ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতি’ অনুসরণ করে, তবে কেএলও-র হিংসাত্মক হামলা নাশকতার ধ্বংসাত্মক পন্থাই অবলম্বন করিতেছে। দশ বছর আগেও এমন সমান্তরাল ধারাতেই স্বতন্ত্র কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে বিচ্ছিন্নতাবাদ সক্রিয় হইয়াছিল। সে বার এক দিকে রাজ্য প্রশাসনের কঠোর পুলিশি বন্দোবস্ত, অন্য দিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটানে কেএলও-র ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চূর্ণ করার ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযান কামতাপুরের আন্দোলনকে প্রশমিত করিয়া দেয়। আন্দোলন প্রশমিত হইলেও দাবিটি কিন্তু উত্তরবঙ্গের কোচ-রাজবংশী জনসমাজ হইতে অন্তর্হিত হয় নাই।
এখন যে তাহা আবার মাথা চাড়া দিতে পারিয়াছে, তাহার নেপথ্যে রহিয়াছে স্বতন্ত্র তেলঙ্গানা রাজ্য মঞ্জুর করায় কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের ছাড়পত্র। তেলঙ্গানা যেমন গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে পুনরুজ্জীবিত করিয়াছে, তেমনই কামতাপুরের দাবিকেও। উত্তরবঙ্গের ছয়টি জেলা এবং অসমের কোকরাঝাড়, বঙ্গাইগাঁও, ধুবুড়ি ও গোয়ালপাড়া লইয়া কামতাপুর রাজ্য গঠনের দাবির পিছনে আছে অঞ্চলে বসবাসকারী এক কোটি রাজবংশী জনগোষ্ঠী। অনগ্রসর এবং ক্রমাগত অবহেলিত এই জনগোষ্ঠীই কামতাপুর আন্দোলনের গণভিত্তি। অঞ্চলের ভূমিপুত্র হিসাবে তাঁহারা নেপালি বা গোর্খা, বাংলাদেশি, বড়ো, অসমিয়া, ভুটিয়া, লেপচা প্রভৃতি জনজাতির অভিবাসনে প্লাবিত হইয়াছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ইত্যাদি উন্নয়নের প্রতিটি সূচকেই এই জনগোষ্ঠী পশ্চাৎপদ। আলাদা রাজ্য হইতে চাওয়ার দাবিই তাহাদের প্রতি রাজ্য সরকারকে সজাগ করিয়া তোলে। কিন্তু উন্নয়নের অপেক্ষাও দমনমূলক প্রশাসনিক নীতি লইয়া আন্দোলন বন্ধ করার সরকারি প্রয়াস ক্রমে এই জনগোষ্ঠীর তরুণ সমাজে সন্ত্রাসের প্রতি আকর্ষণের জন্ম দেয়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গি সংগঠনগুলিও হাত বাড়াইয়া দেয়, গড়িয়া ওঠে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রতি নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করায় কামতাপুরের দাবি উৎসাহিত হইয়া থাকিতে পারে। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন প্রথমাবধি কেএলও-র নাশকতা ও হিংসার মোকাবিলায় কঠোর। গুলির লড়াইয়ে একাধিক কেএলও সদস্যের মৃত্যু হইয়াছে। কুখ্যাত কেএলও নেতাদের কয়েক জন গ্রেফতারও। কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থানে যে রণনৈতিক ভাবে স্পর্শকাতর ও গুরুতর এলাকায় কামতাপুরিদের তৎপরতা, তাহার আশেপাশে নেপাল, চিন, ভুটান, মায়ানমার, বাংলাদেশ ইত্যাদি প্রতিবেশীর প্রহরাহীন সীমান্ত। ফলে উত্তরবঙ্গে অন্তর্ঘাত চালাইয়া ওই সব দেশের ঘাঁটিতে আত্মগোপন করা সহজ। ঠিক ততটাই কঠিন রাজ্য প্রশাসনের পক্ষে তাহাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান। ফলে ২০০৩ সালের মতো রাজ্যকে হয়তো পুনরায় ভুটান ও সংলগ্ন দেশগুলিতে কেএলও-র ঘাঁটি ধ্বংস করার আর্জি কেন্দ্রকে জানাইতে হইবে। তবে কামতাপুরিদের আর্থ-সামাজিক দাবিদাওয়া ও উন্নয়নের অভাবজনিত বঞ্চনাবোধের নিরসনে উদ্যোগী হওয়া কম জরুরি নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.