সম্পাদকীয় ১...
জীবাশ্ম
সিপিআইএম-এর অভ্যন্তরে কেহ আর অসন্তোষ গোপনে আগ্রহী নহেন। গত কয়েক দশকে দলের নেতৃত্বের যে চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটিয়াছে, এই ক্ষোভ সে দিকেই নির্দেশ করিতেছে। সিপিআইএম-এর নেতাদের দুইটি স্পষ্ট গোত্র আছে। এক দিকে প্রতিযোগিতার রাজনীতির প্রত্যক্ষ ময়দান হইতে উঠিয়া আসা নেতারা। অন্য দিকে আছেন নবীন প্রজন্মের ‘তাত্ত্বিক’ নেতারা, যথার্থ প্রত্যক্ষ রাজনীতির সহিত যাঁহাদের সম্পর্ক নাই, কিন্তু পলিটবুরোর প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্য রহিয়াছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ হইতে সিপিআইএম-এর যে প্রার্থী রাজ্যসভায় গেলেন, সেই ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোনয়ন লইয়াও প্রশ্ন উঠিতে পারে। তিনি রাজ্যসভার সংসদ হইবার যোগ্য কি না, সেই তর্ক থাকুক, কিন্তু চেষ্টা করিলে আরও যোগ্য কাহারও সন্ধান পাওয়া যাইত না কি? সিপিআইএম-এর নীতিতে বিশ্বাসী বহু মানুষ রহিয়াছেন। তাঁহাদের মধ্যে অনেকেই রীতিমত পণ্ডিত, স্বক্ষেত্রে প্রথিতযশা। দীর্ঘ দিন যাবৎ দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করিয়াছেন, এমন ব্যক্তিও ছিলেন। তাঁহাদের মধ্যে কেহ কেহ দলের দীর্ঘ দিনের সদস্যও বটে। কিন্তু সম্ভবত এইগুলি মূল যোগ্যতা নহে, কর্তাদের যথেষ্ট ‘ঘনিষ্ঠ’ না হইলে উত্তরণের সম্ভাবনা নাই। প্রকাশ কারাটরা আনুগত্যকেই বাছিয়া লইয়াছেন স্বাধীন, সুচিন্তিত মতামতের ধার সামলাইবার সামর্থ্য এবং ইচ্ছা তাঁহাদের নাই। ঠিক যে ভঙ্গিতে একদা সিপিআইএম প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি পদে অনুগতদের নিয়োগ করিত, আজ সেই ভঙ্গিতেই দলের অভ্যন্তরেও আনুগত্যই প্রধান যোগ্যতা হিসাবে বিবেচিত হইতেছে। তাহার অনিবার্য অনুষঙ্গে মধ্যমেধার রাজত্বও আসিয়াছে। মধ্যমেধা পশ্চিমবঙ্গের সর্বনাশ করিয়াছে, এ বার দল নিজেও তাহার করাল গ্রাসে। বৃত্তটি বুঝি সম্পূর্ণ হইল।
আরও একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হইয়াছে। ছাত্র-যুব হইতে শ্রমিক সংগঠন, বামফ্রন্টের রমরমার আমলে প্রতিটি শাখাই দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার ছিল। সদস্যরা আনুগত্যের বিনিময়ে স্বার্থসিদ্ধির রক্ষাকবচ পাইয়াছিলেন। বৃহত্তর ছবিটির দিকে তাকাইবার দায় কাহারও ছিল না। শিক্ষকরা পতাকা বহিবার পরিবর্তে না-পড়াইবার অধিকার লাভ করিয়াছিলেন, শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা পাইয়াছিলেন উন্নয়নের পথ রুখিয়া নিজেদের অপারদর্শিতা বজায় রাখিবার অধিকার। অটোচালকরা রাস্তার দখল পাইয়াছিলেন, হকাররা ফুটপাথের, ছাত্ররা শিক্ষাব্যবস্থার এবং যুবরা সিন্ডিকেটের। ২০১১ পর্যন্ত প্রত্যেককে অভীষ্ট পাওয়াইয়া দেওয়ার ক্ষমতা ছিল সিপিআইএম-এর। বিনিময়ে আনুগত্য পাওয়া গিয়াছিল। কিন্তু হায়! একটি বিধানসভা নির্বাচনের ঝোড়ো হাওয়ায় সব আনুগত্য খসিয়া পড়িল, সব পতাকার রঙ বদলাইল। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের হাতে পড়িয়া থাকিল সমর্থক-পরিত্যক্ত দল।
বিমান বসুদের আর হারাইবার মতো কিছুই নাই, এমনকী শৃঙ্খলটুকুও নহে। ফলে অনুমান ছিল, তাঁহারা নূতন পথের সন্ধান করিবেন। তাহার নমুনা পাওয়া গেল। প্রায় আড়াই বৎসর শীতঘুমের পর শক্তিসঞ্চয় করিয়া পার্টি হাঁক দিয়াছে: ‘সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’! সেই হুঙ্কারে ‘সাম্রাজ্যবাদ’-এর গায়ে আঁচড়টি লাগিবে কি না, সেই প্রশ্নেরই প্রয়োজন নাই, কিন্তু সিপিআইএম যে বদলাইবে না, তাহাতে আর সংশয় থাকিল না। মধ্যমেধা তাহার কাজ করিয়াছে। এই দলটির আর নূতন কিছু ভাবিবার ক্ষমতা নাই। জীবাশ্ম অপরিবর্তনীয়। সিপিআইএম-ও। নচেৎ, অমর্ত্য সেনের ন্যায় এক সহমর্মী যখন বলিলেন যে এই প্রাগৈতিহাসিক রাজনীতি না বদলাইলেই নহে, তখন তাঁহার মতটি দল এমন উড়াইয়া দিত না, তাঁহাকে অবজ্ঞা করিত না। বরং জানিতে চাহিত, উদ্ধারপথ কোনটি। প্রকাশ কারাটরা সেই পথের সন্ধান পাইবেন না। সন্ধিৎসা নাই বলিয়াই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.