ব্রাউন সুগারও পাওয়া গেল
হস্টেলে, সরলেন সুপার

বিভিন্ন ধরনের মাদক অতিরিক্ত পরিমাণে নেওয়ার ফলেই এসএসকেএম হাসপাতালের হস্টেলে মৃত্যু হয় ইন্টার্ন সপ্তর্ষি দাসের, প্রাথমিক ভাবে এমনটাই মনে করছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, সপ্তর্ষির সতীর্থ শাহবাজ সিদ্দিকির অসুস্থতার কারণও একই। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, যে ঘর থেকে ওই দু’জনকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করেন অন্য ইন্টার্নরা, সেখানে ব্রাউন সুগার মিলেছে। সেই সঙ্গে একটি গ্লাসে ও ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জে মিলেছে সাদা তরল। তদন্তকারীদের ধারণা, চামচে ব্রাউন সুগার রেখে আগুনে গরম করে তার ধোঁয়া শুঁকেছেন, আবার ওই সাদা তরল সিরিঞ্জে ভরে ইঞ্জেকশন নিয়েছেন ওই দুই জুনিয়র ডাক্তার। তাতেই তাঁদের ওই পরিণতি।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “শুক্রবার রাতে ওই দুই ইন্টার্ন ঠিক কী ধরনের মাদক নিয়েছিলেন, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে শাহবাজ সিদ্দিকির সঙ্গে কথা বলা জরুরি।” কিন্তু এখনও তাঁর জ্ঞান ফেরেনি। হঠাৎ তাঁরা দু’ধরনের মাদক বেশি পরিমাণে নিলেন কেন, শাহবাজের সঙ্গে কথা বলতে পারলে সেটাও জানা যাবে। গোয়েন্দাদের অনুমান, ওই সাদা তরল আসলে স্নায়ুর কোনও ওষুধ। ওই ওষুধ বেশি পরিমাণে নিলে তা মাদকে পরিণত হয়।
তবে গোয়েন্দাদের বেশি ভাবিয়ে তুলেছে এসএসকেএম হাসপাতালে ব্রাউন সুগারের ‘অনুপ্রবেশ’। সাধারণত পড়ুয়াদের কলেজ-হস্টেলে মাদক বলতে গাঁজা, চরস, হেরোইনেরই চল বেশি। সেই জায়গায় ব্রাউন সুগার কী করে ঢুকল, তা নিয়েই চিন্তিত গোয়েন্দারা। এক গোয়েন্দা অফিসারের বক্তব্য, “কোনও জুনিয়র ডাক্তার পকেটে ব্রাউন সুগার নিয়ে হস্টেলে ঢুকলে কে টের পাবে? কিন্তু আমাদের দেখতে হবে, কলকাতার কোন মাদক-কারবারির কাছ থেকে তাঁরা ব্রাউন সুগার জোগাড় করছেন।”
এ দিকে, হস্টেলে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি মেডিক্যাল পড়ুয়াদের মাদক নেওয়া আটকাতে মনোবিদের সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবছে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। এ দিন এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর হস্টেল কমিটির বৈঠক বসে। সেখানেই স্থির হয়েছে, মানসিক ভাবে অস্থির পড়ুয়াদের চিহ্নিত করে তাঁদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা হবে। পাশাপাশি, সমস্ত ইন্টার্নকে নিয়ে ‘স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ওয়ার্কশপ’-এরও আয়োজন করা হবে খুব শীঘ্রই।
হাসপাতালের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র জানিয়েছেন, শনিবারের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি কখনওই না হয় তা নিশ্চিত করতে কিছু স্বল্পমেয়াদী ও কিছু দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপের কথা ভাবা হয়েছে। যেমন, হস্টেলের জন্য স্থায়ী নিরাপত্তারক্ষীর কথা ভাবা হয়েছে। একটি লগবুকে বাইরের কারা, কখন হস্টেলে ঢুকছেন তা নথিবদ্ধ করবেন সেই রক্ষী। হস্টেলের আবাসিকদের রাতে ফেরার সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। ২৪ ঘণ্টার বেশি কোনও আবাসিক বাইরে থাকলে তা আগাম কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। কাউকে না জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার বেশি বাইরে থাকলে সংশ্লিষ্ট আবাসিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া, হস্টেলের প্রত্যেক তলায় এক জন করে মনিটর থাকবেন। কোনও গণ্ডগোল হলে তিনিই তৎক্ষণাৎ হস্টেল সুপারকে তা জানাবেন। প্রদীপবাবু বলেন, “এ ছাড়া হস্টেলের জন্য সার্ভিস চার্জ চালু করা, এক জন ক্লার্ক, এক জন সাফাইকর্মী এবং এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরে লিখিত প্রস্তাব যাবে।”
এ দিন ওই হস্টেল সুপারকে বরখাস্ত করার চিঠি ধরানো হয়। শুক্রবার রাতে তিনি কোথায় ছিলেন জানতে চাওয়া হলে সুপার জানান, তাঁর ওই রাতে অর্থোপেডিক বিভাগে ডিউটি ছিল। তাই রাতে নিয়মমাফিক রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসারদের কোয়ার্টার্সে ছিলেন তিনি। শনিবার ঘটনার কথা জানার পরেও তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কেন যোগাযোগ করেননি? এ প্রশ্নের কোনও রকম সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।
কর্তৃপক্ষ জানান, নতুন হস্টেল সুপার খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে। যত দিন কাউকে পুরোপুরি দায়িত্ব দেওয়া না হচ্ছে, তত দিন হাসপাতালের এক সহকারী সুপার হস্টেলের তদারকির দায়িত্বে থাকবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.