খুনেও হাত লাগায় বৌদি, দাবি দেওরের
দেওরের তলোয়ারের কোপে রক্তাক্ত শ্বশুরবাড়ির লোকেদের লাঠির বাড়ি মেরেছিলেন বৌদিমহিষাদলের কুইল্যা পরিবারের চার জনকে খুনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত দেওর জগন্নাথ ওরফে কৃষ্ণপ্রসাদ কুইল্যাকে জেরা করে এমনই তথ্য মিলেছে বলে দাবি পুলিশের। পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় জগন্নাথ বলেছেন, শনিবার রাতে তিনি তলোয়ার দিয়ে পরিবারের চার সদস্যকে কোপানোর পরে, রক্তাক্তদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে লাঠিপেটা করেন কুইল্যা পরিবারের বড় বউ ঝর্না।
শুকদেব কুইল্যা।
—নিজস্ব চিত্র।
যে তলোয়ার দিয়ে চার জনকে খুন করা হয়েছে তা কোথা থেকে এল, সে ধন্দ সোমবারেও কাটেনি। পুলিশ সূত্রের দাবি, জেরায় জগন্নাথ তাদের জানিয়েছেন, ঝর্নার খাটের নীচে আগে থেকেই তিন ফুটের ওই তলোয়ার রাখা ছিল। ঘটনার রাতে ঝর্নার শ্বশুর রামপ্রসাদ কুইল্যা দোতলায় উঠে জগন্নাথকে দেখতে পেয়ে, লাঠি নিয়ে তেড়ে আসেন। ভাইপোর মাথায় দু’ঘা মারেন। জগন্নাথ পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, লাঠির ঘায়ে তাঁর মাথা ফাটে। এর পরেই তলোয়ার নিয়ে তেড়ে যান তিনি।
জগন্নাথের দুই কাকা হরপ্রসাদ ও ভীমপ্রসাদ কুইল্যা বলেন, “আমাদের পরিবারে কখনও তলোয়ার ছিল না। দাদার বাড়িতেও তলোয়ার আছে বলে শুনিনি।” একই কথা বলছেন প্রতিবেশীরা। পুলিশের দাবি, জেরায় এক পড়শি জানান, দিন দু’য়েক আগে কামারশালা থেকে জগন্নাথ তলোয়ার বানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, মাছ কাটবেন।
তদন্তকারীদের দাবি, চার জনকে কোপানোর সময় বেকায়দায় ওই তরোয়ালের কাঠের হাতল খুলে ফলায় হাত চিরে গিয়েছিল জগন্নাথের। সে সময় দেওরের শুশ্রূষা করেন ঝর্না। মহিষাদল থেকে বেরিয়ে রবিবার মেচেদার নার্সিংহোমে গিয়ে চিকিৎসা করান জগন্নাথ। তাঁর মাথায় চারটি সেলাই পড়ে। হলদিয়ার এসিজেএম আদালত ঝর্নার মতো জগন্নাথকেও তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, “প্রয়োজনে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করব আমরা।”
মহিষাদল থানার কালিকাকুণ্ডু গ্রামে শনিবার রাতে খুন হন ঝর্নার শ্বশুর রামপ্রসাদবাবু, শাশুড়ি নিহারীবালা কুইল্যা, দেওর অরুণ কুইল্যা এবং এক আত্মীয়া কল্পনা মান্না। ঝর্নার সাত বছরের ছেলে অর্জুনের সামনেই ঘটনাটি ঘটে। এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কুইল্যাদের কাঁচা বাড়ি ঘিরে রয়েছেন পড়শিরা। বাড়ির নানা জায়গায় শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ। উঠোনে ছড়িয়ে অর্জুনের বইখাতা। সে রাতের কথা উঠলেই শুকিয়ে যাছে শিশুটির মুখ। অপরিচিত কাউকে দেখলেই সিঁটিয়ে যাচ্ছে সে। পাড়ারই বাসিন্দা, সম্পর্কে অর্জুনের ঠাকুমা অঞ্জলি কুইল্যা বলেন, “মায়ের কাছে যেতে চেয়েও বায়না করছে না। চুপ রয়েছে। বিশেষ কাঁদছেও না।” অর্জুন কোনও মতে বলল, “মা আমাকে পাশের ঘরে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল। হঠাৎ চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। উঠে দেখি, চারদিকে রক্ত!”
একমাত্র ছেলেকে বুকে চেপে ঝর্নার স্বামী শুকদেব জানান, ঝর্নার সঙ্গে জগন্নাথের ঘনিষ্ঠতার কথা আগেই জানাজানি হয়েছিল। সালিশি সভা ডেকে দু’জনকে সাবধানও করা হয়। তিনি বলেন, “ওদের বুঝিয়েছি। বলেছি, ‘যা করছ তাতে পরিবারের সুনাম নষ্ট হবে’। জগন্নাথকে বকেছিও। কিন্তু ওদের যে এই পরিকল্পনা ছিল, ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.