সোমবার শুরু হল মাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষাকেন্দ্রগুলির সামনে এ দিন দেখা গিয়েছে চিরাচরিত জটলা। বাড়ির ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিচ্ছে, তাই অভিভাবকেরা তাদের সঙ্গে করে স্কুলে পৌঁছে দিতে এসেছেন। মোটরবাইক, সাইকেল, অটোরিকশার ভিড়ে পরীক্ষাকেন্দ্রগুলি থিক থিক করছে। পরীক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট আসন খুঁজে দেওয়া থেকে শেষ মুহূর্তের ‘টিপস’ দিচ্ছেন বাড়ির বড়রা।
উলুবেড়িয়ার কয়েকটি স্কুলে দেখা গেল অভিভাবকদের মধ্যে উৎসবের মেজাজ। তাঁদের বসার জন্য তৈরি হয়েছে প্যান্ডেল। পাতা হয়েছে চেয়ার। চা-ও দেওয়া হচ্ছে। পুরসভার পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে জলের গাড়ি। কৈজুড়ি হাইস্কুলের সামনে প্যান্ডেলে গিয়ে দেখা গেল, চেয়ারে বসে মায়েরা। কেউ গল্পের বই পড়ছেন, অনেকে নিজেদের মধ্যে গল্পগুজবে মেতেছেন। তাঁদের মধ্যে মাধুরী দত্ত, রেজিনা ফিরদৌস, সখী বেগমেরা বললেন, ‘‘তিন ঘণ্টা পরীক্ষা, কী ভাবে সময় কাটাব সেই চিন্তা ছিল। কিন্তু এসে দেখলাম ভালই ব্যবস্থা করা হয়েছে।” স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব পুলক রায়ের দাবি, ‘‘আমার বিধানসভা এলাকায় মোট সাতটি স্কুলে পরীক্ষা হচ্ছে। সব জায়গাতেই আমি অভিভাবকদের জন্য এই সব ব্যবস্থা করেছি।’’ এ বাবদ টাকা কী ভাবে আসছে? পুলকবাবু বলেন, ‘‘এতে টাকা বেশি দরকার নেই, আমি নিজেই দিচ্ছি। উদ্যোগটাই আসল। পরীক্ষার সময় ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সকলেই ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু অভিভাবকদের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়, তাঁদের নিয়েও তো ভাবার দরকার!’’ |
শেষ মুহূর্তে চোখ বইয়ের পাতায়। আরামবাগে মোহন দাসের তোলা ছবি। |
হাওড়া জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৬,১৭৭। ছেলেদের সংখ্যা ২১,০৪০। ছাত্রীসংখ্যা ২৫,১৩৭। মোট পরীক্ষাকেন্দ্র ১৪৩টি। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) তাপস বিশ্বাস জানান, সংবেদনশীল পরীক্ষাকেন্দ্র না থাকায় সিসিটিভি বসানো হয়নি।
পরীক্ষার্থী এবং বাবা-মায়েদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে জন্য হুগলির নানা জায়গায় সজাগ ছিলেন শাসক দলের নেতারা। ডানকুনি শিশুতীর্থ স্কুলে পরীক্ষা হচ্ছে। ওই পরীক্ষাকেন্দ্রের অদূরেই যুব তৃণমূলের তরফে শিবির করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে বেশ কিছু চেয়ার। পরীক্ষার্থীদের দিকনির্দেশ থেকে শুরু করে পার্কিংয়ের জায়গা দেখিয়ে দেওয়া সবটাই হাসিমুখে করেছেন যুব তৃণমূলের কর্মীরা। হাতে হাতে চলে আসছে জল-বাতাসা। দু’এক বার চা। মাঝপথে তদারকি করে গেলেন জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব। বলাগড়ের ইনছুরাতেও পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সাহায্য করতে সজাগ ছিলেন তৃণমূলের লোকেরা।
বৈদ্যবাটি পুর-এলাকায় পাঁচটি স্কুলে পরীক্ষা হচ্ছে। পুরসভার তরফে প্রত্যেক জায়গায় পাঁচ জন করে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছিল। মোটরবাইক নিয়ে তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন স্কুলের বাইরে। কাজটা কী? পুরপ্রধান অজয়প্রতাপ সিংহ বললেন, “কেউ যদি বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস আনতে ভুলে যায় বা অন্য কোনও দরকার হয়, পুরসভার ওই স্বেচ্ছাসেবকরাই সেই দায়িত্ব সামলাবেন। তবে প্রথম দিন ওঁদের প্রয়োজন হয়নি।”
হুগলি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এ বার জেলায় ৫৭,০০৪ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছেন। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বেশি। ৩০,৩৩৪ জন ছাত্রী এ বার পরীক্ষায় বসছে। ছাত্রদের সংখ্যা ২৬,৬৭০। মোট পরীক্ষাকেন্দ্র ১৬৭টি। স্বপনবাবু জানালেন, প্রথম দিনের পরীক্ষা নির্বিঘ্নেই শেষ হয়েছে। |