ঘর পেলেন শর্মিষ্ঠা। বরও পেলেন।
হাওড়ার পাঁচলার মালিপুকুরে একটি হোমের আবাসিক পিতৃমাতৃহীন শর্মিষ্ঠা রায়ের বিয়ে হল সোমবার। কন্যাদান করলেন রাজ্যের সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শশী পাঁজা। পাত্র, পুরুলিয়ার বরাবাজারের রাকেশ দে। মনোহারি দোকান চালান তিনি।
এ দিন বিবাহ বাসরে হাজির ছিলেন জনাদশেক বরযাত্রী, হোমের কর্মকর্তা-কর্মীরা, জেলা ব্লক ও সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিকেরা। স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির অনেকে ছিলেন। হোমের আবাসিকদের উৎসাহও ছিল চোখে পড়ার মতো। সংক্ষিপ্ত হলেও, বিয়ের অনুষ্ঠান ভিন্ন মাত্রা পেল আন্তরিকতার ছোঁয়ায়। চিকেন বিরিয়ানি, চাটনি, দই-পাঁপড়ের ভোজ সকলে খেলেন চেটেপুটে।
বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত হোমের কর্তৃপক্ষ জানালেন, গ্রামের মানুষের কাছ থেকে বিয়ের খরচ বাবদ কিছু কিছু চাঁদা তোলা হয়েছিল। পাত্রীর জন্য কেনা হয়েছে শাঁখা-সিঁদুর। পাত্রের ধুতি-পাঞ্জাবি। এ ছাড়াও নবদম্পতিকে দেওয়া হয়েছে কিছু বাসনপত্র। উপহার মিলেছে মন্ত্রীর তরফেও। |
বিয়ের আসরে বর-কনেকে আশীর্বাদ মন্ত্রীর। ছবি: সুব্রত জানা। |
যারপরনাই খুশি রাকেশও। বললেন, ‘‘বিয়ের আগেই আমাদের বলে দেওয়া হয়েছিল, যৌতুক বা উপহার কোনও কিছু পাওয়া যাবে না। আমি তাতেই রাজি হয়েছিলাম। স্ত্রীর জন্য সাধ্যমতো গয়না আমি নিজেই এনেছি।”
বছর ছাব্বিশের শর্মিষ্ঠা পাঁচলার হোমে আছেন ২০১১ সালের গোড়া থেকে। বললেন, “বাবা-মায়ের কাছে শুনেছিলাম আমাদের দেশের বাড়ি মেদিনীপুর শহরে। তবে সেখানে যাইনি কখনও। আমার জন্ম শ্যামবাজারে। সেখানেই একটি বাড়িতে বাবা-মা পরিচারিকার কাজ করতেন। আমিও থাকতাম। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। বাবা-মা মারা যাওয়ার পরেও ছিলাম ওই বাড়িতে। কিন্তু গৃহকর্তার মৃত্যুর পরে বাড়ির লোকজন আমাকে তাড়িয়ে দেন। তারপর থেকে তো হোম থেকে হোমে ঘুরছি। কোনও দিন ভাবিনি আমার নিজের ঘর হবে।”
কী ভাবে হল এই যোগাযোগ?
হোম সূত্রের জানা গেল, আন্দুলের এক মহিলাই বরাবাজারের সম্বন্ধটি আনেন। ওই মহিলা হোমের কর্তাদের পরিচিত। পাত্রের ভাই, মামা, মা এবং পাত্র সবান্ধব এসে নিজেও শর্মিষ্ঠাকে দেখে যান। পাত্রী পছন্দ হয়েছিল সকলের। হোমের তরফে অপর্ণা বলেন, ‘‘বিস্তর খোঁজ-খবর নিয়েছি পাত্রের সন্বন্ধে। তাঁকে উপযুক্ত মনে করার পরেই সমাজকল্যাণ দফতরের অনুমতি নিয়ে বিয়ের আয়োজন করেছি। মন্ত্রী নিজে এসেছেন বিয়েতে।”
একগাল হেসে নববিবাহিত যুবকটি বলেন, “এই হোমকেই আমি শ্বশুরবাড়ি বলে মনে করব। স্ত্রী আসতে চাইলে বিনা নিমন্ত্রণে আমি জামাইষষ্ঠীতেও চলে আসব।” পাশে বসে তখন লাজুক হাসি শর্মিষ্ঠার মুখে। |