অম্লানকুসুম চক্রবর্তীর ‘বেঞ্চনামা’ (রবিবাসরীয়, ৯-২) এক নিদারুণ সত্যকে সামনে এনে দিয়েছে। ব্যবসায়িক কারণে অগুনতি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ চালু করার কুফল এখন বহু ছাত্রছাত্রী ভুগতে শুরু করেছে। এই লেখাটিতে তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। যারা ক্যাম্পাসিংয়ে চাকরি পেয়েছে পরবর্তী কালে তারা কী অবস্থার সম্মুখীন হতে পারে এই লেখাটার মধ্য দিয়ে জানা গেল। যারা ক্যাম্পাসিংয়ে চাকরি পায়নি তাদের অবস্থা জানার উপায় নেই। তবে আন্দাজ করা যায়। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক হওয়ার জন্য ইঞ্জিনিয়াররা পরীক্ষায় বসছে, কিছু কাল আগে অবধি যা কল্পনাতীত ছিল। সত্তরের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় বেশ একটা শ্লাঘা অনুভব করতাম। তখন পাড়ায় ইঞ্জিনিয়ারিং-পড়া ছাত্রের সংখ্যা ছিল নগণ্য। আর আজ অবস্থা দাঁড়িয়েছে কোথাও ভাল বিষয় পড়ার সুযোগ না-পেলেও অন্তত ইঞ্জিনিয়ারিং-এ অনায়াসে ভর্তি হওয়া যায়। বিভিন্ন প্রাইভেট কলেজের সুবাদে।
পরিকল্পনাহীন ভাবে যত্রতত্র ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খোলার জন্য অবস্থা কী দাঁড়িয়েছে তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। নানা রকম বিধিনিষেধ তুলে দিলেও কলেজগুলোর বহু আসন ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। পরিকাঠামো, ভাল ফ্যাকাল্টি অধিকাংশ প্রাইভেট কলেজে নেই। ফলে, যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। তবে অনেক ইঞ্জিনিয়ারকে এই রকম অবস্থায় পড়তে হয় না। বিশেষ করে কোর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যাঁরা কাজ করছেন। আজকাল ডিগ্রিধারী বহু ইঞ্জিনিয়ার পাওয়া গেলেও কোর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভাল ইঞ্জিনিয়ারের বেশ অভাব রয়েছে। এবং এরা একটা চাকরি থেকে অন্য চাকরিতে অনায়াসে যেতে পারে নিজেদের সুবিধা মতো। |
সিভিল, মেকানিকাল, ইলেকট্রিকাল, ইলেকট্রনিক্স ব্রাঞ্চের ছাত্ররা নিজেদের ব্রাঞ্চের চাকরির চেষ্টায় না-থেকে আই টি-র ঝাঁ চকচকে, বেশি মাইনের অনায়াসলব্ধ চাকরিকে মোক্ষলাভের উপায় ভাবে। তখন তার পরিণতি এ রকম হতেই পারে। পশ্চিমবঙ্গের ভাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভাল ছাত্ররাও এর থেকে মুক্ত নয়। এদের অনেকেরই হয়তো জয়েন্টের র্যাঙ্ক ৫০০/৬০০-র মধ্যে ছিল। ফলে ভাল ইঞ্জিনিয়ারের বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এরা নিজেদের শিক্ষা, বুদ্ধি, যোগ্যতার প্রতিও সুবিচার করছে না। দেশও ভাল ইঞ্জিনিয়ার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এর থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে। তৃতীয় বর্ষের ছাত্রদের ক্যাম্পাসিংয়ে চাকরি হওয়ার ফলে চতুর্থ বর্ষের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা প্রায় ছেড়েই দেয়। তবু পাশ করে যায়। কী ভাবে? অনুচ্চারিত। বেশ কিছু কাল আগে একবার কথা হয়েছিল ডব্লিউ বি ইউ টি-র অধীনে থাকা কলেজগুলোর হোমসেন্টারে পরীক্ষা না-হয়ে অন্য কলেজে হবে। প্রবল আপত্তিতে তা নিয়ে আর এগোনোই হল না।
এক বার পরিচিত একটা ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘গেট’ দিয়েছে কি না। সে তখন একটা প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। উত্তরে জানিয়েছিল, কলেজের ফার্স্ট বয়ও গেট-এ স্কোর করে না। তিনশো চাকরি হয় (অবশ্যই আই টি-তে) কিন্তু তিনটে গেট হয় না। পড়াশোনার মান এখানেই আটকে আছে। এখনই সার্বিক পরিকল্পনা করা দরকার। মনোন্নয়ন এবং সেই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের বোঝানো দরকার যে, ভাল করে পড়াশোনা করলে নিজের ব্রাঞ্চের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। শুরুতে মাইনে কিছুটা কম হলেও রাতে ঘুম হবে।
দেবাশীষ গুপ্ত। নয়াদিল্লি-৪৮
|
ধূলাগড় থেকে সাঁকরাইল স্টেশন ক্রসিং ও সেখান থেকে চাঁপাতলা বাজার মাত্র ৬-৭ কিমি রাস্তা। রাস্তা নয় মরণফাঁদ বললে কম বলা হবে। মুমূর্ষু রোগী নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স, স্কুলগাড়ি, সিমেন্ট কারখানা ও অন্যান্য শিল্পে কাজ করা মানুষ, রেল-নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের একমাত্র পথ।
রাস্তাটি রাজ্য সরকার ও রেল দফতর, কার সারানোর কথা, সেটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জানার বাইরে। শুধু এইটুকু জানি, যে ভাবে কয়েক দিন অন্তর অন্তর ওই স্থানে বড় বড় গাড়ি উলটে যাচ্ছে, তাতে মারাত্মক বিপদ হওয়া কেবলমাত্র সময়ের অপেক্ষা।
সোমা ভুঁইয়া। সাঁকরাইল, হাওড়া |