সম্পাদকীয় ১...
সংহতির ব্যগ্র প্রচার
রেন্দ্র মোদীর ভারত-অভিযান অব্যাহত। সদ্যই তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে ঝটিকা-সফর সারিয়াছেন, সেই উত্তর-পূর্বাঞ্চল, যেখানে অসম ব্যতীত বিজেপির অন্য কোথাও অস্তিত্ব নাই এবং যেখানে তাঁহার আগে আর কোনও বিজেপি নেতাকে এত অল্প সময়ে এতগুলি জনসভা করিতে দেখা যায় নাই। প্রায় প্রতিটি জনসভাতেই রেকর্ড-পরিমাণ জনসমাগম এবং মোদীর প্রতি ধাইয়া আসা বিপুল সমাদর ও সংবর্ধনা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। কেজো লোক এবং উন্নয়নের কাণ্ডারি হিসাবে তাঁহার পরিচিতি যে তাঁহার আগে-আগে ছুটিতেছে, তাহাতে সংশয় নাই। এ ব্যাপারে শাসক ইউপিএ-র কোনও নেতাই যে এখনও অবধি তাঁহার তুল্য নহেন, তাহাও স্পষ্ট। কোথাও বাংলাদেশ হইতে আগত শরণার্থী, কোথাও বেআইনি অনুপ্রবেশ, আবার কোথাও অরুণাচল প্রদেশের এক ইঞ্চি জমিও না-ছাড়ার অঙ্গীকার তাঁহার জনসভা ও ভাষণগুলিকে উদ্বেলিত করিয়াছে। সব মিলাইয়া তাঁহার সমগ্র এজেন্ডাই সনাতন হিন্দুত্ববাদী ধ্যানধারণার মোড়কে পুরিয়া পেশ করা। কিন্তু প্রণিধানযোগ্য, তাহা করা হইয়াছে বিশেষ কুশলতার সহিত এবং যাবতীয় বিতর্কিত, স্পর্শকাতর প্রশ্নগুলিকে এড়াইয়া গিয়া।
যেমন, উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান স্পর্শকাতর বিষয় হইল সেখানকার জনবিন্যাসের কাঠামোয় ঘটমান পরিবর্তন এবং তাহার ভিত্তিতে বিবর্তিত জনজাতীয় স্বাভিমান ও স্বশাসনের আত্মঘোষণা। আত্মপরিচয়ের রাজনীতি এখানে জনজাতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদের এবং সেই বিচ্ছিন্নতাবাদ রক্তাক্ত সন্ত্রাসবাদেরও জন্ম দিয়াছে। এখনও অঞ্চলের রাজ্যে-রাজ্যে, এমনকী জেলায়-জেলায় একাধিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পরস্পরের বিরুদ্ধে এবং ভারতীয় রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত। মোদী কিন্তু সুকৌশলে সেই সকল সমস্যা ও প্রসঙ্গ এড়াইয়া গিয়াছেন। তাহার পরিবর্তে তিনি ইউপিএ সরকারের অপশাসনের পরিণাম রূপে অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আর্থ-সামাজিক অনগ্রসরতাকে শনাক্ত করিয়াছেন এবং দাওয়াই হিসাবে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সুশাসন ও উন্নয়নের এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দিল্লি হইতে ছড়াইয়া পড়া এক কেন্দ্রাতিগ ভারতীয়ত্বের টোটকা পেশ করিয়াছেন। আপাতদৃষ্টিতে তাঁহার এই প্রচারাভিযান ফলপ্রসূ। ইহাতে আপাতত বিজেপির পেশ করা বিকল্পটি পরীক্ষা করিয়া দেখার প্রবণতা ও আগ্রহ জনমানসে সৃষ্টি হইতেই পারে। কেহ এমনও দাবি করিতেছেন যে, বাংলাদেশ হইতে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলিয়া এবং অরুণাচলে দাঁড়াইয়া চিনকে তাহার আধিপত্যকামী অবস্থান বর্জন করার হুমকি দিয়া এই প্রথম বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী তাঁহার পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক ভাবনার দিশা দিয়াছেন। তবে সেই চিন্তাতেও হিন্দুত্ববাদী স্বাজাত্যবোধই প্রবল। কিন্তু এই সব বাহ্বাস্ফোটে নয় মণ তেল পুড়িবে কি না এবং সাধারণ্য নাচিবে কি না বলা কঠিন।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনজাতীয় মানসে নয়াদিল্লি তথা ভারত সম্পর্কে, বিশেষত মূল ধারার ভারতীয় রাজনীতি সম্পর্কে আশাপ্রদ কোনও বার্তা নাই। যখন এই অঞ্চলের যুবক-যুবতীরা দিল্লি, বেঙ্গালুরু সহ ভারতীয় মূল স্রোতে অবাঞ্ছিত, সন্দেহজনক, ‘চিনা চর’ বলিয়া প্রতিভাত হন, নিগৃহীত, লাঞ্ছিত, প্রহৃত, এমনকী নিহত হন, তখন গুজরাত বা দিল্লির রাজনীতিকের কাছ হইতে আসা জাতীয় সংহতির বার্তা তাঁহাদের কানে ব্যর্থ পরিহাসের মতোই বাজিতে থাকিবে। মাঝেমধ্যেই ‘মূল ধারা’র ভারতীয়তার উগ্র আক্রমণে তাঁহাদের দলে-দলে ট্রেনে চড়িয়া ঘরে ফেরার তোড়জোড় করিতে হয়। নির্বাচন আসন্ন হইতেই যদি হিন্দুত্বের পার্টি ওই জনজাতিদের ভারতীয়ত্ব সম্পর্কে সজাগ হইয়া ওঠে, শচীন দেব বর্মন ও রাহুল দেব বর্মনের সঙ্গীত ছাড়া যদি রাজনীতি ‘শুষ্ক’ মনে হয়, তবে কেহ তাহাকে নেহাত ভোট-কৌশলের প্রকারভেদ ভাবিলে ভুল হইবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.