উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ঘাটতির কারণ দেখিয়ে কৃষ্ণা-গোদাবরী অববাহিকায় রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ-এর হাত থেকে কেজি-ডি৬ গ্যাসক্ষেত্র ফিরিয়ে নেওয়ার প্রশ্ন এখনই উঠছে না। পাশাপাশি এই ক্ষেত্রে লগ্নি টানতে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কৃত্রিম ভাবে কমিয়ে না-রেখে বাজারের নিয়মে তা বাড়ানোর পক্ষেও যুক্তি দেখিয়েছেন মইলি।
|
মুকেশ অম্বানী |
|
বীরাপ্পা মইলি |
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে ১৩ পৃষ্ঠার চিঠি লিখে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন তেলমন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি।
প্রসঙ্গত, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর মসনদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার আগে আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল দুর্নীতি দমন দফতরকে মইলি, আরআইএল সংস্থা ও তার চেয়ারম্যান মুকেশ অম্বানীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের কৃত্রিম অভাব তৈরি ও দাম বাড়ানোয় মদত দেওয়ার অভিযোগ আনেন কেজরিওয়াল।
প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়া নিয়ে এই রাজনৈতিক চাপান-উতোরের মধ্যেই তেলমন্ত্রী চিঠিতে জানিয়েছেন, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি বলেই মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ (আরআইএল)-এর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা যাবে না। তার কারণ, এ নিয়ে সালিশি মামলা দায়ের করেছে আর আই এল। বিষয়টি তাই বিচারাধীন। প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম প্রতি ১০ লক্ষ ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিটের জন্য ৪.২ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮ ডলারে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গেও মইলি জানিয়েছেন, কৃত্রিম ভাবে বাজার দরের তুলনায় দাম কমিয়ে রাখলে কোনও খনন সংস্থার পক্ষেই লগ্নি লাভজনক হবে না। এর জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ওএনজিসি, অয়েল ইন্ডিয়া-র মতো সংস্থাকে যেমন ভুগতে হচ্ছে, তেমনই রিলায়্যান্সের মতো বেসরকারি সংস্থাও লগ্নির খরচ তুলতে পারছে না। তাই বাজার দরে গ্যাস বিক্রিতেই মইলি জোর দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মইলি তাঁর পূর্বসূরি এস জয়পাল রেড্ডির একটি সিদ্ধান্তের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ওই চিঠিতে। ২০১০-’১১ সাল থেকেই গ্যাস উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ব্যাপারে পিছিয়ে পড়ছে আরআইএল। এর জন্য আরআইএলকে ২০১২-এ ১০০.৫ কোটি ডলার জরিমানা করেন তদানীন্তন তেলমন্ত্রী রেড্ডি। কিন্তু মইলি জানান, আরআইএলের সঙ্গে কেন্দ্রের উৎপাদন ভাগাভাগি সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না-পারলে চুক্তি বাতিল করা যায়, জরিমানা করা যায় না। এই প্রশ্নেই আপত্তি তুলে আরআইএল সালিশি মামলা করেছে। সালিশি ট্রাইব্যুনালে এটি বিচারাধীন।
পাশাপাশি, আপ ও ওই দলের নেতা কেজরিওয়াল গ্যাসের দাম বাড়িয়ে আরআইএলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার যে-অভিযোগ তুলেছেন, তা-ও চিঠিতে খণ্ডন করেন মইলি। তিনি জানান, প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের ৮০ শতাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ওএনজিসি ও অয়েল ইন্ডিয়ার হাতে। তাই দাম বাড়লে মূলত উপকৃত হবে তারাই। আর, দাম না-বাড়ালে এ ক্ষেত্রে সব লগ্নিই অলাভজনক হয়ে পড়ছিল।
যেমন, ২০১২-’১৩ সালেই ওএনজিসি-র প্রাকৃতিক গ্যাস তৈরির গড় খরচ ছিল প্রতি ১০ লক্ষ ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিটের জন্য ৩.৬ ডলার। গভীর সমুদ্রে তার নতুন গ্যাসক্ষেত্রগুলিতে উৎপাদন খরচও এখনকার ৪.২ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই কারণ দেখিয়েই দাম বাড়িয়ে ৮ ডলার করার পক্ষে সওয়াল করেছেন মইলি। তিনি মনমোহনকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দাম ধরে রাখলে দেশে গ্যাস খনন ও উৎপাদন তলানিতে এসে ঠেকবে। তখন এলএনজি আরও চড়া দামে আমদানি করা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। আর, সেটাই চাপ ফেলবে রাজকোষ ঘাটতি ও চলতি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ঘাটতির উপর। |