রোগপোকা নিধনের প্রকল্পে ঠাঁই নেই পূর্বস্থলীর দুই ব্লকের
বিধানচন্দ্র কৃষি বিদ্যালয়ের রোগপোকার পরামর্শ ও পূর্বাভাস (ই পেস্ট সার্ভিলেন্স অ্যান্ড অ্যাডভাইসারি) পদ্ধতির বাইরে রয়ে গিয়েছে জেলার দুই সব্জি উৎপাদক ব্লক। ফলে সব্জি চাষে পোকার আক্রমণ হলে বেশিরভাগ চাষিই হাতড়ে বেড়ান কোন ধরণের ওষুধ কতটা দিতে হবে, তা নিয়ে।
কৃষি দফতরের হিসেবে ওই দুই ব্লকের দশ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে সব্জি চাষ হয়। আশপাশের পারুলিয়া, কালেখাঁতলা পাইকারি বাজার ছাড়াও রাজ্যের অন্যত্র এমনকী ভিন রাজ্যেও সব্জি যায় এখান থেকে। ফলে এলাকার অর্থনীতি অনেকটাই সব্জি চাষের উপর নির্ভরশীল। বছর খানেক আগে রাজ্য সরকারের আর্থিক সাহায্যে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রোগপোকার পরামর্শ ও পূর্বাভাস নামের প্রকল্পটি চালু করে। দক্ষিণবঙ্গে বর্ধমান ছাড়াও হাওড়া, হুগলি, নদিয়া ও বীরভূমের বহু ব্লক এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব প্রকল্পটি চালু রয়েছে সেখান দু’জন করে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত যুবক রয়েছেন, যাঁদের স্কাউট বলা হয়। বিভিন্ন মরসুমে বিভিন্ন মৌজা ঘুরে তাঁরা দেখেন চাষে কী কী সমস্যা রয়েছে। রোগপোকার প্রকোপ বা সম্ভাবনা দেখলেই স্কাউটেরা নিজেদের ল্যাপটপ থেকে তার ছবি ও যাবতীয় তথ্য পাঠিয়ে দেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ সদস্যের কৃষি বিজ্ঞানিদের একটি দল বিষয়টি দেখভাল করেন। যে ব্লকগুলি এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে সেখানকার বহু কৃষকের ফোন নম্বর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। তাঁরা ছবি দেখে কোন ওষুধ কতটা প্রয়োগ করতে হবে তা এসএমএস করে জানিয়ে দেন চাষিদের। ফলে বাড়িতে বসেই সমস্যার সমাধান পেয়ে যাচ্ছেন চাষিরা। ওই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কৃষি বিজ্ঞানিদের দাবি, অল্প সময়েই অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে প্রকল্পটি। বর্ধমানের ১৩টি ব্লকে ওই পরিষেবা চালু রয়েছে।
তবে পূর্বস্থলীর দু’টি ব্লকের চাষিরা প্রকল্পটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। এলাকার এক সব্জি চাষি আব্দুল করিম জানান, রোগপোকার আক্রমনে গাছ মরে যাওয়া বা ঝিমিয়ে পড়া নজরে এলে কীটনাশক বিক্রেতাদের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়। তিনি যে ওষুধ দেন তাই জমিতে স্প্রে করা হয়। তাতে কখনও ভাল কাজ হয়, আবার কখনও হয় না। তাঁর দাবি, কয়েকজন কৃষি দফতরের কাছে পরামর্শ নিতে যান ঠিকই, তবে তা খুবই কম। পূর্বস্থলীর ফুলকপি চাষি সুদীপ ঘোষ আবার বলেন, “এলাকায় জলদি ফুলকপি চাষ ক্রমশ বাড়ছে। পুজোর আগে জমি থেকে ওই ফুলকপি তোলা হয়। ভাল দামও মেলে সেই সময়। কিন্তু গরম আর বর্ষার মাঝে ফুলকপিতে নানা রোগ দেখা যায়। অনেক গাছ নষ্টও হয়ে যায়। এই সময়ে কীভাবে গাছের পরিচর্ষা করা উচিত, সে বিষয়ে বেশিরভাগ জায়গা থেকেই ভরসাযোগ্য পরিষেবা মেলে না।” তাঁর দাবি বিধানচন্দ্র কৃষি বিদ্যালয়ের ওই প্রকল্পে পূর্বস্থলীর ব্লকদু’টি স্থান পেলে অনেকেই উপকৃত হবেন। একই মত কৃষি দফতরেরও।
পূর্বস্থলী ১ ব্লকের কৃষি আধিকারিক পরিতোষ হালদার বলেন, “সমস্যার কথা জানতে পারলে চাষিদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করি আমরা। তবে বিধানচন্দ্র কৃষি বিদ্যালয় ওই প্রকল্পটির সাহায্যে চাষিদের কাছে আরও দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে। পূর্বস্থলীতেও এই প্রকল্পের প্রয়োজন রয়েছে।” কালনা মহকুমা কৃষি দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ জানান, মহকুমার পাঁচ ব্লকের মধ্যে মন্তেশ্বর ও কালনা ১ ব্লকে প্রকল্পটি চালু রয়েছে। অনেকেই মোবাইলে নানা পরামর্শ পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন। বাকি তিনটি ব্লকে ওই প্রকল্পটি চালু হলেও ভাল হয়।”
সমস্ত ব্লকে ওই প্রকল্প না পৌঁছনোর কথা স্বীকার করেছে বিধানচন্দ্র কৃষি বিদ্যালয়ও। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য বিশ্বপতি মণ্ডল জানান, ওই প্রকল্পে প্রাথমিক ভাবে সাফল্য পাওয়ার পরে পরিষেবা আরও ব্লকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। স্কাউটদের সংখ্যা বাড়ানোরও ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও জানান, আপাতত ওই পরিষেবাটিতে একসঙ্গে দশ হাজার এসএমএস পাঠানো যায়। সেই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। ফলে আরও বেশি চাষি উপকৃত হবেন। বিশ্বপতিবাবুর দাবি, এই ধরণের পরিষেবা উত্তরবঙ্গ কৃষি বিদ্যালয়েও চালু করার চেষ্টা চলছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.