মোদীকে দিল্লি পৌঁছতে সাইকেলে অতন্দ্র বিষ্ণু

২৩ ফেব্রুয়ারি
পিছনে তেড়ে আসছে জংলি কুকুর। এরা নাকি হিংস্রতায় চিতার সঙ্গে পাল্লা দেয়! রক্ষা পেতে প্রাণপণে ছুটছে সাইকেল। প্যাডেল ঘুরছে দ্রুত। তবু রাত আর যেন শেষ হচ্ছে না।
ওড়িশার পাহাড়ি জঙ্গল কালিপানির মধ্যে দিয়েই এ ভাবেই কোনওক্রমে প্রাণ বাঁচিয়ে ভোরবেলা বড় সড়কে পৌঁছতে পেরেছিলেন হুগলি জেলার ত্রিবেণী শিবপুরের বিষ্ণু চৌধুরী। আসন্ন ভোটে নরেন্দ্র দামোদারদাস মোদীকে জেতাতে তিরিশ বছরের এই যুবক এক অভিনব সাইকেল প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন গত এক মাস ধরে। সুদীর্ঘ যাত্রাপথে ওড়িশার ওই জঙ্গলের মতো বারবার প্রাণ বিপন্ন হয়েছে তাঁর। শীত-ঝড়-বৃষ্টি সহ্য করেছেন, রাতের আস্তানা জোটেনি, এমনকী রাজনৈতিক বিরোধীদের হাতে মারও খেয়েছেন। তবুও প্যাডেল থামেনি বিষ্ণুবাবুর। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেরিয়ে ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, রাজস্থান, হরিয়ানা ঘুরে আপাতত তিন দিন যাবৎ তিনি রাজধানীতে। আগামিকালই ফের বেরিয়ে পড়বেন। লোকসভা ভোট শুরু হওয়ার আগে দেশের বাকি রাজ্যগুলিতে সাইকেল-ভ্রমণ শেষ করার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর।
সাইকেলে সওয়ার বিষ্ণু চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।
সব মিলিয়ে সাইকেলই এখন তাঁর ঘরবাড়ি, সংসার এবং দাবি আদায়ের এক অস্ত্রও বটে। চলতি সফরে দিল্লি পৌঁছে গত কাল বিজেপির সদর দফতরে দলীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। রাজনাথ প্রবল উৎসাহ দিয়েছেন বঙ্গসন্তানের এই গেরুয়া-অভিযানে। বিষ্ণুবাবুর ইচ্ছে, খোদ মোদীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর মূল দাবিটি অগ্রিম জানিয়ে রাখবেন। সেই দাবি হল, মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে জাতীয় মর্যাদা দিতে হবে। তাঁর জন্মদিনকে জাতীয় দিবস তথা জাতীয় ছুটি হিসেবে পালন করতে হবে। নেতাজিকে নিয়ে চর্চা বাড়াতে হবে দেশজুড়ে। বিষ্ণুবাবুর সাইকেলে মোদী ছাড়াও রয়েছে নেতাজির ছবিও। নিছক হুজুগের বশেই এই কৃচ্ছসাধন করছেন বিষ্ণুবাবু, এমনটা কিন্তু নয়। এক সময়ে গাড়ি চালানোই যাঁর পেশা ছিল, তিনি এখন পুরোদস্তুর জেলা বিজেপির কর্মী। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি রাহুল সিংহের হাত ধরেই তাঁর রাজনীতিতে আসা। আপাতত ত্রিবেণী শিবপুরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তিনি। সাইকেল যাত্রার অভিনব ভাবনা বিষ্ণুবাবুর মাথায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই তা লুফে নেয় রাজ্য বিজেপি। ত্রিবেণীর পার্টি অফিস থেকে রীতিমতো দলীয় সংবর্ধনার মাধ্যমে শুরু হয় তাঁর যাত্রা।
তার পর? শুরু হয় বিচিত্র অভিজ্ঞতার এক একটা পর্ব। দেশজুড়ে মোদী-হাওয়া বইছে বলে যতই দাবি করুক বুথ ফেরত সমীক্ষা, খোদ মোদীর রাজ্যের হিম্মতনগরেই কোনও ধাবা বা সস্তার হোটেলে জায়গা পাননি বিষ্ণুবাবু। তাঁর কথায়, “ওই এলাকায় কংগ্রেসের প্রভাব বেশি। মোদীর পতাকা দেখে কোনও ধাবা-মালিকই সেখানে ঠাঁই দেয়নি।” গোটা রাত শীতে কাঁপতে কাঁপতে কাটিয়েছেন হাইওয়ের পাশে একটি টায়ারের দোকানে। আরও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা দিল্লিতে ঢোকার মুখে গুড়গাঁওয়ে। জানালেন, “সন্ধের মুখে কয়েকটা মোটরবাইক ঘিরে দাঁড়ায় আমাকে। তার পর রাস্তার একদম কিনারায় নিয়ে গিয়ে জানতে চায়, মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে আমার কী লাভ?” নেহাতই উপস্থিত বুদ্ধির জোরে সে যাত্রা রক্ষা পান এই বঙ্গসন্তান।
যেহেতু সাইকেলে সফর করছেন, গ্রাম এবং শহরের অজস্র মানুষের সঙ্গে কথা হচ্ছে তাঁর। স্বাভাবিক ভাবেই কথায় উঠে আসছে রাজনীতি এবং ভোট-প্রসঙ্গ। মোদী-হাওয়া কি দেখতে পাচ্ছেন একের পর এক রাজ্যে, তাঁর চলার পথের দু’পাশে? বিষ্ণুবাবুর কথায়, “অপ্রিয় ঘটনা কিছু যে ঘটছে না তা নয়, কিন্তু বেশির ভাগ জায়গাতেই বিপুল উৎসাহ পাচ্ছি। আমার এই অভিযানের কথা শুনে অনেকেই সাহায্য করছেন।
অল্প বয়স থেকেই অ্যাথলেটিক্সে জেলায় প্রথম সারিতে ছিলেন। সম্ভবত সেই সুবাদে শারীরিক ধকল সামলে নিচ্ছেন বিষ্ণুবাবু। কিন্তু পথে যখন বিপদ আসছে, কী ভাবে সামলাচ্ছেন? বিশেষত হিসেবের ভুলে রাতে ওড়িশার জঙ্গলে ঢুকে পড়ার মতো বিপদ? তাঁর উত্তর, “এমন সব সময়ে আমি জাতীয় সঙ্গীত বাজিয়ে সাইকেল চালাই। মনে জোর পাওয়া যায়।” লোকসভা ভোটের আগে নিজের দলের মধ্যে এই বেপরোয়া মনের জোরটাই ছড়িয়ে দিতে চাইছেন তিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.