প্রতারণার নালিশ নিয়েই ধোঁয়াশায় সল্টলেক পুলিশ
প্রতারণার অভিযোগের তদন্তে নেমে অভিযোগটি নিয়েই ধন্ধে পড়েছে পুলিশ। ধোঁয়াশা কাটাতে আরও কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ভাবছেন তদন্তকারীরা। ষড়যন্ত্র, আর্থিক প্রতারণা, ছিনতাই-সহ একাধিক অভিযোগে সল্টলেকের ব্যবসায়ী প্রদীপ সেনগুপ্তকে শনিবার গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতে ধৃতের তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়েছিল। ধৃতের পরিবারের পাল্টা অভিযোগ, চক্রান্ত করে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনাচক্রে, কলকাতার ক্রীড়া মহলেও প্রদীপবাবু পরিচিত নাম। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবল সচিব তিনি। এই ঘটনায় তাই বিস্মিত রাজ্যের ক্রীড়ামহলও।
গত বছর ডিসেম্বরে বারাসত আদালতে শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার একটি জমি কেনাবেচা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ করেছিলেন সেখানকার ব্যবসায়ী সুশীল অগ্রবাল। আদালতের নির্দেশে তদন্ত শুরু করেছে সল্টলেক পুলিশ। পুলিশ জানতে পারে, ‘শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ মাটিগাড়ার এই ৫ একর জমি দিয়েছিল একটি বেসরকারি সংস্থাকে। পরে সেই সংস্থার সঙ্গে তাঁর ও তাঁর অংশীদারের জমির মালিকানা সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছিল বলে প্রদীপবাবুর দাবি। সেই জমি কেনাবেচা নিয়েই সুশীল অগ্রবালের সঙ্গে প্রদীপ সেনগুপ্তের গণ্ডগোল।

প্রদীপ সেনগুপ্ত
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ২০১১-র ফেব্রুয়ারি মাসে প্রদীপ সেনগুপ্তের সঙ্গে সুশীল অগ্রবালের মাটিগাড়ার জমি কেনাবেচা নিয়ে কথা চূড়ান্ত হয়েছিল। সুশীলবাবুর অভিযোগ, অগ্রিম বাবদ ড্রাফট ও নগদে কুড়ি লক্ষ টাকা দেওয়ার পরে তাঁর কাছ থেকে নগদ ৯০ লক্ষ টাকা প্রদীপবাবু ছিনতাই করেছিলেন। সল্টলেক পুলিশের গোয়েন্দারা ধন্ধে পড়েছেন এই অভিযোগটি নিয়েই। কারণ, ৯০ লক্ষ টাকা ছিনতাই হওয়ার পরে সেই দিনই কেন সল্টলেকে কোনও থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন না সুশীলবাবু? একই প্রশ্ন প্রদীপবাবুরও। তিনি বলেন, “৯০ লক্ষ টাকা ছিনতাই হল, অথচ ওই দিন থানায় কোনও ডায়েরি হল না!”
পুলিশ আরও জেনেছে, ঘটনার দু’বছর পরে ২০১৩ সালে দু’দফায় অভিযোগ দায়ের করেন সুশীলবাবু। একটি মাটিগাড়া থানায়, অন্যটি বারাসত আদালতে। বারাসত আদালতে ছিনতাইয়ের অভিযোগ করলেও মাটিগাড়া থানায় শুধু প্রতারণার অভিযোগই দায়ের করেছিলেন সুশীলবাবু। দু’জায়গায় দু’রকম অভিযোগ করা হল কেন সেটাও ভাবাচ্ছে পুলিশকে। শনিবার অবশ্য সুশীলবাবু জানিয়েছেন, ২ বছর ধরে তিনি জমি পাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছিলেন। শেষে জমি না পেয়েই পুরনো ঘটনার অভিযোগ করেন।
পুলিশ জেনেছে, অগ্রিম বাবদ সুশীলবাবু ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা দেন। শর্ত অনুসারে আরও ৪০ লক্ষ টাকা চেকে দেন, যা পরে বাউন্স করে। এখানেই ধন্ধ বেড়েছে গোয়েন্দাদের। আগে ৪০ লক্ষ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে, না নগদে ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তদন্তকারীদের একাংশ জানান, যদি আগে ৪০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয় (যা পরে বাউন্স করে), তবে ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা কী ভাবে নিলেন প্রদীপবাবুরা? আর যদি ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা আগে দেওয়া হয় (যেখানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ), তার পরেও কী ভাবে সুশীলবাবু ৪০ লক্ষ টাকার চেকটি দিলেন? এই ধোঁয়াশা কাটাতে আরও তথ্য জোগাড় করছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রদীপবাবু তদন্তে সহযোগিতা করছেন।
প্রদীপবাবুর গ্রেফতারে বিস্মিত কলকাতার ক্রীড়ামহল। প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উনি ফুটবল-সচিব থাকাকালীন আমি ইস্টবেঙ্গলের কোচ ছিলাম। ওকে ভাল মানুষ হিসেবেই জানি।” বিস্মিত প্রাক্তন ফুটবলার শৈলেন মান্নার স্ত্রী আভা মান্না-ও। তিনি বলেন, “সমাজসেবী হিসেবে চিনি। শৈলেন মান্নার খুবই প্রিয় ছিলেন। আমাদের বিপদে পাশে থেকেছেন।” প্রয়াত স্ত্রী স্মৃতি সেনগুপ্তের নামে একটি পাঠাগারও চালান প্রদীপবাবু।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.