জেন Y-ও খোঁজে খাঁটি প্রেম
ফেসবুক। চ্যাট। হোয়াটসঅ্যাপ। ইনস্টাগ্রাম। সেলফি....
হুকাবার। ক্যাফে কফি ডে। ডেটিং...
আজকের ছেলেমেয়েদের কাছে প্রেমের প্রকাশ নাকি এ সবেই। তাঁরা নাকি প্রেমের গভীরতাটাই বোঝে না। আর ‘কমিটমেন্ট’? সেটাও নাকি তাদের কাছে ডায়নোসরের মতোই প্রাগৈতিহাসিক!
নতুন প্রজন্ম সম্পর্কে এই সব বদ্ধমূল ধারণাকে নস্যাত্‌ করে দিতেই সুদেষ্ণা রায় ও অভিজিত্‌ গুহর ছবি ‘যদি লভ দিলে না প্রাণে।’ আর বাংলা ছবি হিসেবে ভাবনার নতুনত্বও এইখানেই। নতুন প্রজন্মকে তাঁরা মেলে ধরতে চেয়েছেন নতুন এক বিশ্লেষণে, মূল্যায়নেও।
নইলে কেনই বা বছর আঠারো-উনিশের তরুণী নায়িকা আহেলি বারবার খুঁজতে যাবে তার মায়ের হারিয়ে যাওয়া প্রেমিককে? নইলে কেনই বা বন্ধু মৈনাককে সঙ্গে নিয়ে আহেলি আঁতিপাঁতি করে খুঁজবে মায়ের সঙ্গে তার প্রেমিকের বেড়াতে যাওয়ার পুরনো জায়গাগুলো? এ কি অন্যের ভালবাসার মধ্যে নিজেদেরই খোঁজা?
আসলে এ ছবি যা বলতে চায় তা হল: আজকের আহেলিরা তাঁদের মা কিংবা বাবার জীবনের পুরনো প্রেম বা সম্পর্ক নিয়ে নিয়ে কথা বলতে আড়ষ্টতা বোধ করে না। সামাজিক বিধিনিষেধকে কিছুটা টপকে গিয়ে তাঁরা স্বাধীন মনে বিচার করার চেষ্টা করে আগের প্রজন্মকে। দুই প্রজন্মের সম্পর্ককে চিরাচরিত ধারণায় না বেঁধে অন্য ভাবে দেখাতেও আধুনিকতা আনার চেষ্টা হয়েছে।
কিন্তু সিনেমায় যা ঘটে, বাস্তবে কি তা হয়? পরিচালক সুদেষ্ণা বললেন, “মা-মেয়ের সম্পর্কগুলো আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ। মাকে দেবীর বদলে রক্তমাংসের নারী হিসেবে দেখার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে আধুনিক ছেলেদেরও। যদিও এই পরিবর্তনটা এখনও আটকে আছে শহুরে শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের মধ্যেই।”
দুই প্রজন্ম। দু’ রকম সময়। দু’রকম জীবনযাত্রার মধ্যে ছবির প্রতিটা দৃশ্য যাতায়াত করে কেবল এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ভালবাসা কি বদলায়? তাতেও কি সময়ের ছাপ পড়ে? সত্যিকারের প্রেমের গল্পই বা কেমন হয়? সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘অবুঝ মেয়ে’ অবলম্বনে ‘যদি লভ দিলে না প্রাণে’র মেজাজ পরিচালকদের আগের সব রোমান্টিক কমেডি ছবি যেমন ‘ক্রস কানেকশন’ ‘বাপি বাড়ি যা’, ‘প্রেম বাই চান্স’য়ের থেকে আলাদা। উপস্থাপনাও কিছুটা ওজনদার। সেই জন্যই খাঁটি প্রেমের খোঁজে বেরোনো মৈনাক-আর আহেলির যাত্রায় ছবির গল্পটা গিয়ে পড়েছে উত্তর কলকাতার এক সাবেক পাড়ায়। কুড়ি বছর আগে। যেখানে আহেলির মা পারমিতার প্রেম হয়েছিল পাড়ারই ডাকাবুকো যুবক সোনাদার সঙ্গে।
‘যদি লভ দিলে না প্রাণে’: আবির-অনন্যা
আর তার পর? ছবির পর্দায় ভেসে উঠবে উত্তর কলকাতা। তার সমস্ত ‘ওল্ড ওয়ার্ল্ড চার্ম’ নিয়ে।
রকের আড্ডা, কালীপুজোর রাতে কালীপটকা ফাটানো সোনাদার হিরোগিরি, শ্যাওলা ধরা ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো দুপুর, বাচ্চা ছেলের হাতে চিঠি দিয়ে ছেলেমেয়েদের প্রেম বিনিময়, লুকিয়ে-পালিয়ে বিয়ে করার স্বপ্নছবি দেখতে গিয়ে এ সবই ফিরে ফিরে আসবে বিশেষ বয়সের বাঙালি দর্শকের নস্টালজিয়ায়।
আর তখনই তাঁরা আবার ভাববেনআহা সে প্রেমও নেই। সে সমর্পিত প্রেমিক-প্রেমিকাও নেই। সে বেদনাও নেই। সে উচাটন অপেক্ষা নেই। সে কলকাতাটাই নেই। ক্যাফে কফি ডে আর হোয়াটস অ্যাপে প্রেম হয় নাকি? যেই না দর্শক সবে এই সব ভাবতে শুরু করবেন অমনি দেখবেন মৈনাক আর আহেলিরা এখনও এই সময়ে দাঁড়িয়ে শুধু প্রেমের মধ্যেই শিকড় খোঁজে। হয়তো তাদের খোঁজার ধরনটা বদলেছে। প্রেমটা নয়।
নাম ‘যদি লভ দিলে না প্রাণে’ হলেও ছবি কিন্তু প্রেমে টইটম্বুর। যেমন ফিল্ম মেকার মৈনাককে প্রযোজক রাহুল বসু শুধু একটি আগাপাস্তলা প্রেমের গল্প নিয়ে ছবি তৈরির জন্যই প্রায় ব্ল্যাঙ্ক চেক লিখে দিতে চায়। পারমিতার স্বামী সলিলও (কৌশিক সেন) খোঁজে ভালবাসা। আর পারমিতা? তার তো পুরোটাই প্রেম!
সম্পর্ক বিচার করছে ওরা খোলা মনে
ডা. জয়রঞ্জন রাম, মনোবিদ।
“ আজকালকার ছেলেমেয়েরা নিজেদের সম্পর্ক নিয়েই অনেক রকম ‘এক্সপেরিমেন্ট’ করছে। নানা ধরনের প্রেম। নানা ধরনের বন্ধুত্ব আসছে, যাচ্ছে তাদের নিজেদের জীবনেই। চার পাশে প্রতিদিন দেখছে কত রকম সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে, ভাঙছে, আবারও তৈরি হচ্ছে। আর এই সব দেখছে বলেই মা-বাবাদের বা বড়দের জীবনের ‘অন্য’ সম্পর্কগুলোকেও তারা বিচার করছে খোলা মনে। যেটা আজ থেকে বেশ কিছু বছর আগেও ছিল না। ভুল না ঠিক এ সবের বাইরে গিয়ে কখনও বা মা-বাবার পাশে দাঁড়াচ্ছে তারা বন্ধুর মতোই। মায়ের প্রেমিকের সঙ্গে বা বাবার বান্ধবীর সঙ্গে অনেক সময় জেন ওয়াইয়ের বন্ধুত্বও হয়ে যাচ্ছে। স্বভাবসুলভ ভাবে কাঁধ ঝাঁকিয়ে তাদের এও বলতে দেখেছি ‘ইট মে হ্যাপেন’... আসলে একাকিত্বের এই যুগে কোনও সম্পর্ককেই নতুন প্রজন্ম অস্বীকার করতে চাইছে না। যদিও যে সব ছেলেমেয়ে এই ভাবে ‘অন্য’ সম্পর্কগুলোকে দেখছে, তারা ব্যতিক্রম। কিন্তু কিছু ছেলেমেয়ে অন্য রকম ভাবে যে সম্পর্কগুলোকে বুঝতে চাইছে, এটা কিন্তু আমি প্রায়ই দেখছি।”
পরিচালক অভিজিত্‌ হেসে বললেন, সিনেমার নামে “‘লভ’ শব্দটা ব্যবহার করে এই প্রজন্মের সঙ্গেও গল্পটাকে একাত্ম করতে চেয়েছি। তাতে একটু মজাও হয়েছে।” ছবিতে শ্রীজাতর গানের সঙ্গে অনায়াসে এসে পড়েন অতুল প্রসাদ সেন। আসে তাঁর গান ‘কে আবার বাজায় বাঁশি এ ভাঙা কুঞ্জবনে’। অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ের জাত-অভিনয়ের আর একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে পারমিতা। কিন্তু কোন আকর্ষণে পারমিতা চরিত্রটা তাঁর ভাল লেগেছিল? অনন্যা বললেন, “আসলে সকলকেই বাস্তবে ফিরতে হয়। জীবন থেমে থাকে না। তবু পারমিতার টানাপোড়েনটাই আমাকে সবচেয়ে আকৃষ্ট করেছিল। মনে হয়েছিল এই চরিত্রটায় নতুনত্ব আছে, অভিনয় করতে ভাল লাগবে।” সোনাদা-আবির চট্টোপাধ্যায়কে ভালই লাগবে অনুরাগীদের। প্রযোজকের চরিত্রে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সূক্ষ অভিনয় যেন প্যাস্টেল শেডে আঁকা আবছা রামধনু। কৌশিক সেন, সুজন মুখোপাধ্যায়রাও নজর কাড়বেন। গল্পের আসল মোচড় বা বাঁকগুলো কোন দিকে যাবে? কী ভাবে মিলে যাবে দুই প্রজন্ম? কী ভাবেই বা পরিচালকেরা জুড়বেন ছিন্নসূত্র? পারমিতা কি ফিরে পাবে তার প্রেম? উত্‌কণ্ঠা আর নাটক সেখানেই। আগামী শুক্রবার এই ছবি মুক্তির পর হয়তো হল থেকে চওড়া হাসি নিয়ে বেরোবে জেন ওয়াই। ‘যদি লভ দিলে না প্রাণে’ তাদের কুর্নিশ জানিয়েছে। বলেনি অর্বাচীন। বা অস্থির-প্রজন্ম।
নতুন প্রজন্মের প্রতীক ত্রিধা চৌধুরী (আহেলি) ও অর্জুন চক্রবর্তী (মৈনাক) হয়তো নিরুচ্চারে এই প্রশ্নই রাখবেন প্রবীণ দর্শকের কাছে, ‘আমাদেরকে এখনও কি ভুল ভাবছেন আপনারা? ভালোবাসার মানে আমরাও বুঝি! আমরাও কিন্তু সেই প্রেমই খুঁজছি।’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.