পাঁচতলায়, ৪২৬ নম্বর ঘরের দরজা হাট করে খোলা। এসএসকেএম হাসপাতালের এমবিবিএস হস্টেলের ওই ঘরে শুক্রবার রাতে ছিলেন দুই ইন্টার্ন (জুনিয়র ডাক্তার)। অথচ, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা বেজে যাওয়ার পরে সতীর্থদের ডাকাডাকিতেও তাঁদের কোনও সাড়াশব্দ নেই। অতঃপর অন্য কয়েক জন ইন্টার্ন ওই ঘরে ঢুকে দেখতে পেলেন, বছর চব্বিশের ওই দুই জুনিয়র ডাক্তার সপ্তর্ষি দাস ও মহম্মদ শাহবাজ সিদ্দিকী অচৈতন্য অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন।
হাসপাতালে তাঁদের দু’জনকে ভর্তি করানোর পরে এ দিন দুপুরে মারা যান সপ্তর্ষি। শাহবাজের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। হস্টেলের ওই ঘর থেকে ইঞ্জেকশনের একাধিক সিরিঞ্জ, রাংতা এবং চামচ মিলেছে। নিজেদের প্রাথমিক তদন্তে এবং ময়না-তন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে পুলিশের অনুমান, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দু’জনের শরীরে অত্যধিক পরিমাণ মাদক ঢোকায় ওই পরিণতি হয়েছে। একই বক্তব্য জানিয়েছেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষও।
কিন্তু মাদক ছাড়ানো-সহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করাই তো ডাক্তারদের কাজ। তাঁরাই যদি মাদক সেবনে ডুবে যান, সেই চিকিৎসকদের হাতে রোগীদের কী হাল হবে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। তা ছাড়া, নজরদারি এড়িয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে, তা-ও আবার ডাক্তারদের হস্টেলের ভিতরে মাদক কী ভাবেই বা ঢুকল, উঠেছে সেই প্রশ্নও। হস্টেলের ওই ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া সিরিঞ্জ, রাংতা-সহ জিনিসপত্র মাদক সেবনের জন্য ব্যবহার করা হত কি না, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেবে পুলিশ।
এসএসকেএম হাসপাতালের ডিরেক্টর প্রদীপ মিত্র এ দিন বলেন, “প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছি, দীর্ঘদিন ধরেই ওই দুই ইন্টার্ন মাদক সেবন করতেন। শুক্রবার রাতে তাঁরা হাসপাতালের ছাত্রাবাসেই মাদক সেবন করেছিলেন।”
প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, মাদক সেবনের ফলেই এক ইন্টার্নের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তাঁর কথায়, “এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটে গেল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
মৃত ইন্টার্ন সপ্তর্ষির বাড়ি সোনারপুরের পূর্বাচল এলাকার এপি নগরে। শাহবাজ পটনার ল্যাংড়াটুলি এলাকার সব্জিবাগের বাসিন্দা। এমবিবিএস পাশ করার পরে দু’জন এসএসকেএমেই ইন্টার্নশিপ করছিলেন। শাহবাজকে ওই হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। তাঁর মা এ দিন সন্ধ্যায় পটনা থেকে হাসপাতালে পৌঁছন। শাহবাজের বাবা এখন কুয়েতে। তাঁকে খবর দেওয়া হয়েছে।
ওই দু’জনকে প্রথমে ভর্তি করানো হয় এসএসকেএম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় সিসিইউ-তে। সেখানেই এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ মারা যান সপ্তর্ষি। তাঁর বাবাও পেশায় চিকিৎসক। আবার সপ্তর্ষির এক আত্মীয় এসএসকেএম হাসপাতালেরই অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক। ময়না-তদন্তের পরে এ দিন তাঁর হাতেই সপ্তর্ষির দেহ তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, সপ্তর্ষি ও শাহবাজের ইন্টার্নশিপ আগামী ২২ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। যে ঘর থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়, সেই ঘরটি পুষ্পেন্দু দাশগুপ্ত নামে অন্য এক ইন্টার্নের। তিনি কয়েক দিন আগে বাড়ি গিয়েছিলেন। পুলিশের অনুমান, ওই ইন্টার্ন বাড়ি যাওয়ার সময়ে সপ্তর্ষিদের কাছে তাঁর ঘরের চাবি দিয়ে গিয়েছিলেন। পুষ্পেন্দু এ দিনই বাড়ি থেকে ফিরেছেন। পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ও এসএসকেএমের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মদন মিত্র বলেন, “কেউ জামার বুকপকেটে মাদক নিয়ে হাসপাতালে ঢুকলে তাঁকে ধরা মুশকিল।”
এক পুলিশ অফিসারের প্রশ্ন, “ডাক্তারদের জনে জনে তল্লাশি করা কী ভাবে সম্ভব?” |