অখিলের পর হাবুল, লোকালেও কি শৌচালয়
ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে স্টেশন। প্ল্যাটফর্মে দৌড়চ্ছেন অখিলচন্দ্র সেন। এক হাতে লোটা, অন্য হাতে ধুতির খুঁট। কিন্তু শেষরক্ষা হল কই! মাঝপথে ধুতিটাই খুলে গেল। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো নারী-পুরুষের মধ্যে হাসির রোল! অখিলবাবুর আর ট্রেনে ওঠা হল না!
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে অপদস্থ হয়ে স্টেশন ছেড়েছিলেন অখিলবাবু। দিনটা ছিল ১৯০৯ সালের ২ জুলাই।
প্রায় ১০৫ বছর পরে ঠিক একই কারণে ট্রেন ‘মিস’ করেছিলেন ঝাড়খণ্ডের হাবুল গঙ্গোপাধ্যায়ও। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ডায়াবেটিসের রোগী হাবুলবাবু বেগ চাপতে না পেরেই ট্রেন থেকে নেমেছিলেন। অখিলবাবু দৌড়েও চলন্তে ট্রেনের নাগাল পাননি। মরিয়া হাবুলবাবু টাটানগর-খড়্গপুর মেমু ট্রেনের হাতল ধরে কামরার ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। প্রৌঢ়ের দু’টো পা কাটা পড়েছে।
অখিলবাবুর ঘটনার পর ভারতীয় দূরপাল্লার ট্রেনে শৌচালয় চালু হয়েছিল। হাবুলবাবুর ঘটনার পর এ বার স্বল্প দূরত্বের ট্রেনেও শৌচালয় চালু করা যায় কি না, চিন্তা করছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
অখিলবাবু ওই ভাবে হেনস্থা হওয়ার পরে সাহেবগঞ্জ স্টেশনের ট্রান্সপোর্টেশন সুপারিন্টেন্ডেন্টকে একখানা কড়া চিঠি লিখেছিলেন। তাঁর চিঠি পেয়ে নড়ে বসেছিলেন রেলকর্তারা। চিঠিটি আজও রাখা আছে নয়াদিল্লির রেল মিউজিয়ামে। পূর্ব রেলের দেড়শো বছর উপলক্ষে প্রকাশিত ‘সাগা অব ইস্টার্ন রেলওয়ে’ বইতেও এই চিঠির কথা আছে।
বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের ট্রেনে উঠেছিলেন অখিলবাবু। আমোদপুর স্টেশনে পৌঁছতেই তাঁর বেগ চাপে। অখিলবাবু লিখেছেন, কাঁঠাল খাওয়াটা বেশি হয়ে গিয়েছিল। ফলে ট্রেন থেকে না নেমে উপায় ছিল না। কিন্তু মলত্যাগ করতে করতেই শুনতে পেলেন গার্ড ভোঁ বাজিয়ে দিয়েছেন। কোনও রকমে এক হাতে লোটা, আর এক হাতে কাছা সামলাতে সামলাতেই ছুটলেন বাবু অখিলচন্দ্র। কিন্তু হোঁচট খেয়ে পড়তেই ধুতি গেল খুলে! স্টেশন-ভর্তি নারী-পুরুষের সামনে সে এক লজ্জাজনক অবস্থা!
অখিলবাবু রেগেমেগে চিঠিতে লিখেছেন, “গার্ড কি আর পাঁচটা মিনিটি অপেক্ষা করতে পারতেন না? হয় তাকে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হোক, নয় আমি সংবাদপত্রে এ নিয়ে মুখ খুলব।”
অখিলবাবুর এই চিঠিই ট্রেনে শৌচালয় চালু করেছিল। হাবুলবাবুর ঘটনাটি আরও এক বার সেই একই প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে। হাবুলবাবু যে ট্রেনটিতে ছিলেন, তাতে শৌচালয় থাকলেও সেটি বন্ধ ছিল। রেলের কর্তারা জানিয়েছেন, স্বল্প দূরত্বের মেমু ট্রেনে এক সময় শৌচাগার থাকলেও বছর পাঁচেক আগে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু রেলকর্তাদের একাংশ এখন ফের মনে করছেন, ট্রেনে শৌচালয় না পেয়ে হাবুলবাবুর মতো আরও অনেকেরই এমন পরিণতি হতে পারে। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার।
কিন্তু রেলের বর্তমান ও প্রাক্তন কর্তাদের অনেকে আবার বলছেন, স্বল্প দূরত্বের ট্রেনে শৌচালয় রাখা বাস্তবোচিত নয়। যেমন রেলের প্রাক্তন প্রযুক্তিবিদ দুলাল মিত্রের মতে, শৌচাগার থাকলে কামরায় যাত্রী-ধারণের ক্ষমতা কমবে। রেল বোর্ডের প্রাক্তন কর্তা (বাণিজ্যিক) সোমনাথ মুখোপাধ্যায় মনে করেন, স্বল্প দূরত্বের ট্রেনে শৌচাগার থাকলে কিছু যাত্রী উপকৃত হবেন ঠিকই। কিন্তু বেশির ভাগ যাত্রী অপরিচ্ছন্নতার কারণে দুর্ভোগে পড়বেন। রেল বোর্ডের আর এক প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুরও স্বল্প দূরত্বের ট্রেনে শৌচাগার না রাখারই পক্ষে। তাঁরও যুক্তি, “শৌচাগার বসালে প্রতিটি কামরায় কমপক্ষে ৫০ জন করে যাত্রী কমবে। লোকাল ট্রেনের পক্ষে তা ঠিক হবে না।”
রেল-প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী অবশ্য বিতর্কে না ঢুকে রেলবোর্ডের কর্তাদের কোর্টেই বল ঠেলেছেন। তাঁরাই এখন বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। হাবুলবাবুর ঘটনার তদন্ত করতে দক্ষিণ-পূর্ব রেল তিন সদস্যের কমিটিও তৈরি করেছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.