জেলাশাসকের কার্যালয় তখন বন্ধের মুখে। অধিকাংশ কর্মী-আধিকারিক ঘরমুখো হয়েছেন। কিন্তু সকাল থেকে জেলাশাসকের কার্যালয়ে তখনও ঠায় অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছিলেন পানচাষিরা। কখন কী হয়, আশঙ্কায় দাঁড়িয়ে ছিলেন পুলিশকর্মীরাও। আর তাতেই রক্ষা হল।
পান বরজের কাছে মুরগির খামার গড়া চলবে না বলে লাগাতার প্রায় এক বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন বেলিয়াতোড়ের ঢেঙ্গাকেন্দ গ্রামের পান চাষিরা। এই দাবিতে একাধিকবার জেলাশাসকের কার্যালয়ে তাঁরা অবস্থান বিক্ষোভ করা থেকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। শুক্রবারও তেমনটাই হবে মনে করেছিলেন কিছু পুলিশকর্মী। কিন্তু শেষে যে তাঁরা এমন কাণ্ড ঘটাবেন ভাবতে পারেননি পুলিশকর্মীরা।
এ দিনও প্রায় ৫০ জন পানচাষি অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে মহিলা ও কিছু শিশুও ছিল। এ দিন অবস্থান বিক্ষোভে কাজ না হলে শেষ পর্যন্ত গায়ে আগুন দেবেন বলেও হুঙ্কার দিচ্ছিলেন সকলে। সঙ্গে করে এনেছিলেন কেরোসিন ভর্তি বোতল। শেষে তেমনটাই হতে যাচ্ছিল। |
বিকেল প্রায় সাড়ে পাঁচটা নাগাদ জেলাশাসকের কার্যালয়ের বাইরে বোতলের কেরোসিন নিজের গায়ে ঢেলে নিলেন সন্ধ্যা রায়, অসি রায়, কালীপদ রায়রা। তবে পকেট থেকে দেশলাই বের করার আগেই পুলিশ কর্মীরা তাঁদের আটকে দেন। তা নিয়েই দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয়ে যায় তুমুল ধস্তাধস্তি। জখমও হন কিছু গ্রামবাসী। যাঁরা আত্মহননের চেষ্টা করেছিলেন, শেষ পর্যন্ত পুলিশকর্মীরা তাঁদের ঠেকাতে পারেন। রণে ভঙ্গ দেন আন্দোলনকারীরা।
তাঁদের নিয়ে আলোচনায় বসেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অদ্বিতী দাশগুপ্ত। আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় অনেক রাত পর্যন্ত জেলাশাসকের দফতরের সামনেই বসে থাকেন গ্রামবাসীরা। অতিরিক্ত জেলাশাসক অবশ্য বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে চাননি। পান চাষিরা বলেন, “জেলা প্রশাসন প্রয়োজনে আমাদের এসডিও-র এজলাসে বিষয়টি নিয়ে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু আমরা যাব না। জেলা প্রশাসনকেই ওই মুরগি খামারের কাজ বন্ধ করতে হবে।” তাঁদের দাবি, এলাকার প্রায় ৫০টি পরিবার পান চাষ করে। বরজের কাছেই বেশ বড় মুরগি খামার তৈরি হচ্ছে। তার দূষণে বরজের ক্ষতি হয়ে যাবে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
যদিও জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের পাল্টা দাবি, মুরগির খামারের জন্য বরোজের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা ঠিক নয়। তবে ওই খামার এখনও চালু হয়নি। তাই চাষিদের আন্দোলনকে আপাতত গুরুত্ব দিতে নারাজ প্রশাসন। চেষ্টা করেও ওই নির্মীয়মাণ খামার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। |