রাজ্যে প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক কম। যাঁরা আছেন, তাঁদের একাংশের মধ্যেও বেশি অর্থ আর সুযোগ-সুবিধার কারণে ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। তাতে সঙ্কট আরও বাড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে ডাক্তারদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধ, বেশি রোজগারের সুযোগ এলেও রাজ্যের স্বার্থেই তাঁরা যেন বাংলা না-ছাড়েন।
বৃহস্পতিবার কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি হাত জোড় করে আপনাদের (ডাক্তারদের) বলছি, আপনারা রাজ্য ছেড়ে যাবেন না। আমরা গরিব। বেশি টাকা দিতে পারব না। কিন্তু এই আন্তরিকতা অন্য কোথাও পাবেন না। অন্য রাজ্যে বেশি টাকা পেলেও আপনারা এখানেই থাকুন। সম্ভব হলে ভিন্ রাজ্য থেকে ডাক্তার-বন্ধুদের বাংলায় নিয়ে আসুন। এখানে ডাক্তারের খুব প্রয়োজন।”
টাকা তো হাতের ময়লা বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। দেশের অর্থ যাতে অকারণে নষ্ট না-হয়, সেই ব্যাপারেও সতর্ক করে দেন তিনি। বলেন, “অনেকে সুইস ব্যাঙ্কে টাকা রাখেন। সেখানে টাকা রাখার একটা কোড থাকে। যাঁরা টাকা রাখছেন,যা শুধু তাঁদেরই জানা থাকে সেই কোড। কিন্তু তার পরে আচমকা যদি তাঁর মৃত্যু হয়, তা হলে তো সেই টাকা জলাঞ্জলি! এটা খেয়াল রাখতে হবে।” |
আবার এ রাজ্যে থাকার অর্থ যে শুধু কলকাতায় বসে থাকা নয়, এ দিন তা-ও স্পষ্ট করেন মমতা। তাঁর কথায়, শুধু কলকাতায় বসে কাজ করলে হবে না। গ্রামে যেতে হবে। যাঁরা গ্রামে গিয়ে কাজ করবেন, সরকার তাঁদের বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দেবে। নামী চিকিৎসকেরাও যাতে সপ্তাহে অন্তত এক দিন গ্রামে গিয়ে পরিষেবা দেন, সেই অনুরোধও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা এ দিন ট্রপিক্যালে সরকারি কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কের উদ্বোধন করেন। ওই অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ২৪টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের শিলান্যাস, ট্রপিক্যালে এইচআইভি চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র, এম আর বাঙুর হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ডায়ালিসিস ইউনিট, লেডি ডাফরিনে সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট, রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজির টেলি-অপথ্যালমোলজি বিভাগ-সহ বহু প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়।
মমতা বলেন, “কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ক গড়তে বহু বাধা পেরোতে হয়েছে। কিন্তু হাল ছাড়িনি। গোটা পৃথিবীতে যদি এই নিয়ে কাজ হতে পারে, আমরা কেন পিছিয়ে থাকব? আমার আশা, রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে এই ব্যাঙ্ক।”
কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কের গুরুত্ব কী? ব্যাখ্যা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীই বলেন, “গাড়ি পুরনো হলে জং ধরে। শরীর পুরনো হলেও বিভিন্ন অঙ্গ অকেজো হতে শুরু করে। সেগুলোকে চাঙ্গা করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে কর্ড ব্লাড।”
রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ক গড়তে সাড়ে ছ’কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তিনি বলেন, “ব্যাঙ্কের কাজকর্ম নিয়ে অনেকেই নানা প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের জানাই, প্রয়োজনীয় সমস্ত স্তর থেকে অনুমতি নিয়েই কাজ শুরু হয়েছে। কোথাও অস্বচ্ছতা নেই।” ব্যাঙ্কের অধিকর্তা নিরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ২০ জন বিজ্ঞানী এই ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বুধবারেই বলেছিলেন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বাংলাকে অনেক উন্নতি করতে হবে। বিশেষ করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যে বাড়তি নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। গত আড়াই বছরে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কী কী উন্নতি হয়েছে এবং আরও কী হবে, মুখ্যমন্ত্রী এ দিন তার খতিয়ান দেন। জানান, ইতিমধ্যেই ৬১টি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান হয়েছে। এ বার ন্যায্য মূল্যের ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু হচ্ছে। এ দিন এই ধরনের দু’টি কেন্দ্র চালু হল। আগামী চার মাসে মোট ৪৫টি কেন্দ্র চালু করা হবে। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট খোলা হবে সব মহকুমায়। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আসন-সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বলে দাবি করেন মমতা।
এ দিন যে-২৪টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের শিলান্যাস হল, তার কাজের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে যথাযথ ভাবে বুঝে নিয়ে স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করার নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী।
|
নলজাতক প্রযুক্তির জনকের নামে চেয়ার |
‘টেস্ট টিউব বেবি’ বা নলজাতক প্রযুক্তির জনক চিকিৎসক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের নামে রাজ্যের কোনও মেডিক্যাল কলেজে একটি চেয়ার তৈরি করা হবে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পূর্বাঞ্চলের প্রথম সরকারি কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি জানান, সুভাষবাবুর নামে একটি পুরস্কারও দেওয়া হবে। তাঁর কথায়, “গোটা বিশ্ব সুভাষবাবুর আবিষ্কার নিয়ে আলোড়িত। কিন্তু নিজের রাজ্যে তিনি কোনও স্বীকৃতি পাননি। চরম অসম্মান নিয়ে তাঁকে আত্মহত্যা করতে হয়েছিল। কেন ঘরের ছেলের কোনও দাম থাকবে না? তাঁকে যথাযোগ্য স্বীকৃতি দিতেই এই চেয়ার এবং তাঁর নামাঙ্কিত পুরস্কার।” |