বিতর্ক শেষ, অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে ফের তরজা
ত সোমবার আগামী বছরের বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। একই সঙ্গে পেশ করেছিলেন চলতি আর্থিক বছর অর্থাৎ ২০১৩-১৪ সালের সংশোধিত বাজেটও। ঠিক তিন দিন পর তাঁর বাজেট বিতর্কের জবাব দিয়ে পেশ করলেন চলতি বছরের জন্য ১৯ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দও (সাপ্লিমেন্টারি বাজেট)।
ফলে বাজেট বিতর্ক শেষ হয়েও শেষ হল না। নতুন করে জন্ম নিল বিতর্ক। সরব হলেন বিরোধীরা। আর্থিক বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তুললেন তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে। অমিতবাবুকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলেন তাঁর দলের বিধায়করা। তাঁদের যুক্তি, এ বারের বাজেট পেশ হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের মাস খানেক আগে। ফেব্রুয়ারি মাসের অনেকটা, এবং মার্চ মাসের পুরোটাই এখনও পরে রয়েছে। সরকারি কর্মীদের বেতন, পেনশন, বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের চালু কাজগুলি পড়ে রয়েছে। সুতরাং এই অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে হইচইয়ের অবকাশ কোথায়?
অমিতবাবুর অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দের সিংহভাগ পেনশন, গ্র্যাচুইটি খাতে। এই খাতে ১ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা নতুন করে চাওয়া হয়েছে। সারদা কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ‘সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণ’ খাতে ১৬৫ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ‘রাজ্য সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ’ শীর্ষক পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ অবশ্য সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এই পরিমাণ ১১হাজার ১০৫ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে মূলধনী বিনিয়োগ বাবদ অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ১ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। সড়ক ও সেতু খাতে মূলধনী বিনিয়োগের জন্য চাওয়া হয়েছে অতিরিক্ত ৫৯৫ কোটি টাকা। গ্রামীণ রোজগারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দাবি ২১৭ কোটি টাকা। জল সরবরাহ ও নিকাশি খাতে অতিরিক্ত দাবি ১৭০ কোটি টাকা। সড়ক পরিবহণ খাতে ভর্তুকি ও অন্যান্য খরচ বাবদ অমিতবাবুর অতিরিক্ত দাবি ২৩৯ কোটি টাকা। নগরোন্নয়ন খাতে অতিরিক্ত ব্যয়বরাদ্দের পরিমাণ ৪০৬ কোটি টাকা। কন্যাশ্রী ও মাতৃ সেবা যোজনা বাবদ চাওয়া হয়েছে ১৯৪ কোটি টাকা। কার্যত সরকারের সব ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দের দাবি করা হয়েছে।
বিধানসভা ধ্বনি ভোটে তা অনুমোদনও করেছে। তবে ২০১৪-১৫ সালের পূর্ণাঙ্গ বাজেট প্রস্তাব ও ২০১৩-১৪ সালের সংশোধিত বাজেট পেশের ঠিক তিন দিনের মাথায় এই প্রস্তাব আসায় কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা প্রশ্ন তুলেছেন, কন্যাশ্রী ভাল প্রকল্প। বরাদ্দ নিন, কিন্তু সারদা কাণ্ডের দায়ভার কেন সরকারের তথা করদাতাদের কাঁধে চাপবে? আর পেনশন খাতে বরাদ্দ বছর শেষে কোথায় দাঁড়াবে সেটা তো অমিতবাবুর অজানা থাকার কথা নয়। তবে অতিরিক্ত বাজেটে কেন আরও ১ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা চাওয়া হচ্ছে? এর থেকেই প্রমাণ হয় সরকারে আর্থিক বিশৃঙ্খলা চলছে। সিপিএমের গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন তুললেন, মোট বাজেটের পাঁচ শতাংশেরও বেশি এই অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ। এটা নজিরবিহীন। অমিতবাবুর সমর্থনে এগিয়ে আসেন তৃণমূল বিধায়ক পরশ দত্ত, এ বারের পরিস্থিতি অন্য রকম। ফেব্রুয়ারি-মার্চ প্রায় দু’মাসের অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দ সরকারকে নিতে হচ্ছে। পরিমাণ তো বাড়বেই।
তবে বৃহস্পতিবার বাজেট বিতর্কের জবাবি ভাষণ দিতে গিয়ে অমিতবাবু দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গ এগিয়ে চলেছে। তাঁর কথায়, রাজ্যের আর্থিক ক্ষেত্রে যে শৃঙ্খলা আনার কাজ অর্থাৎ ফিনান্সিয়াল রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট (এফআরবিএম) আগের বাম সরকার আটকে রেখেছিল। ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার আগে তা বলবৎ করেন। কারণ বাম জমানায় আর্থিক শৃঙ্খলা বলে তো কিছুই ছিল না। আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এফআরবিএম মেনেই বাজেট করে চলেছি। কমিয়ে এনেছি রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ। বাম জমানার শেষ বছরে ছিল ৯%। আমরা গত তিনটি আর্থিক বছরে রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ কমিয়েছি যথাক্রমে ৪.১২%, ৩.৩৮% এবং ৩.০৮%। তাঁর বক্তব্য, আইন মেনেই রাজ্যের নতুন সরকার বাজার থেকে ঋণ নিচ্ছে। আর আইন মেনে বাজার থেকে ঋণ নেওয়াটা রাজ্যের অধিকার। অর্থমন্ত্রী দাবি করেন, বাম আমলের তুলনায় বর্তমান সরকার রাজকোষ ঘাটতির পাশাপাশি রাজস্ব ঘাটতিও কমিয়ে এনেছে। সরকার স্থায়ী সম্পদ তৈরি করার চেষ্টা করছে। পিছিয়ে পড়া জেলাগুলির উন্নয়নে যে তহবিল তৈরি করা হয়েছে তাতেও একশো ভাগ কাজ হচ্ছে।
জবাবি ভাষণে অমিতবাবু, রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান সংস্থার তথা তুলে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, শিল্প-উৎপাদন ও কৃষিতে রাজ্য এগিয়ে চলেছে। অর্থমন্ত্রীর দাবি: খনি, উৎপাদন শিল্প এবং বিদ্যুৎ শিল্পে সারা দেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের গড় বৃদ্ধির হার অনেক বেশি। বিরোধী দলনেতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, খনি এবং উৎপাদন শিল্পে সারা দেশে বৃদ্ধির হার নেতিবাচক। সেখানে ওই তিন ক্ষেত্রেই রাজ্যের মোট গড় বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ। অমিতবাবু জানান, বাজেট কর্মসংস্থামুখী এবং তাতে উন্নয়নের স্পষ্ট দিশা রয়েছে। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, ব্যবসা না-বাড়লে আয় বাড়ে না। আবার করের হার যদি মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়, তবে তার প্রতিফলন ঘটে কর আদায়ে। তাই কর না বাড়িয়ে তিনি কর আদায়ের রাস্তাকে আরও প্রশস্ত করতে চেয়েছেন। এটাই তাঁর পথ।
বাজেটে উন্নয়নের যে দিশা ও অগ্রগতি দেখানো হয়েছে তা নিয়ে এ দিন বিধানসভায় প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। সূর্যবাবু অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, “উন্নয়নকে বৃদ্ধির হার দিয়ে মাপা যায় না।” তাঁর বক্তব্যের মূল কথা ছিল, বিশ্বজুড়ে কৃষিতে, শিল্পে সর্বত্রই সঙ্কট চলছে। সারা দেশেও মন্দার প্রভাব। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ কী ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে? এ রাজ্য কি তার বাইরে? তিনি বলেন, “সারদার মালিক বলছে তাঁর সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা শোধ করে দেওয়া হোক। কিন্তু সেই সম্পত্তি তো হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “লুঠ করবে একজন, আর তার দায়ভার আমাদের? করদাতারা কেন টাকা দেবে?” সূর্যবাবু প্রশ্ন তোলেন প্রবেশ কর নিয়েও। তাঁর বক্তব্য, “বর্তমান অর্থমন্ত্রী প্রবেশ করের উপরেই নির্ভর করে রয়েছেন। সেই কর আদায় বাড়ছে না কমছে তার কোনও প্রতিফলন বাজেটে নেই। রাজ্যের অর্থনীতিতে কি নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে চলেছে?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.