খেত পিষেছে হাতি, এ বার ধাক্কা নাবি ধসায়
শীতের মাঝামাঝি থেকেই নাবিধসা রোগ ছড়িয়েছিল আলু খেতে। কীটনাশক ছড়িয়েও রক্ষা হল না। সম্প্রতি দু’দিনের নিম্নচাপের জেরে চাষিদের আশায় জল ঢেলে দিয়ে আলু জমিতে আরও ব্যাপক আকারে ফিরে এসেছে ধসা। ব্যাঙ্ক থেকে মোটা টাকা কৃষিঋণ নিয়ে আলু চাষে নামা বাঁকুড়ার কৃষকদের এখন মাথায় হাত পড়েছে।
জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা অনন্তনারায়ণ হাজরা জানান, বাঁকুড়া জেলায় ১২১টি মৌজায় প্রায় ১১ হাজার ৩১৬ হেক্টর জমির আলু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তার মধ্যে তালড্যাংরা, সিমলাপাল, সারেঙ্গা, পাত্রসায়র, ইন্দাস, জয়পুর, কোতুলপুর ব্লকে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। জেলা কৃষি দফতরের তরফে রাজ্য কৃষি দফতরে পাঠানো ওই রিপোর্টে আশঙ্কা করা হয়েছে, নাবিধসা রোগে বাঁকুড়া জেলায় আলু চাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলা কৃষি দফতর থেকে বৃহস্পতিবার ওই রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।
নিম্নচাপের বৃষ্টিতে নাবি ধসায় ক্ষতিগ্রস্ত আলুর খেত।
পাত্রসায়রের বিদ্যানন্দপুর গ্রামে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।
কৃষকরা জানাচ্ছেন, এমনিতে বিষ্ণুপুর, সোনামুখী, পাত্রসায়র থেকে বেলিয়াতোড়, বড়জোড়ায় জমিতে হাতির তাণ্ডব প্রায় বছরভর রয়েছে। এ বারও ওই সব এলাকায় আলু খেতে নেমে খেয়ে ও পিষে আলু নষ্ট করেছে হাতিরা। তার উপর জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকেই অতিরিক্ত কুয়াশার জন্য আলু গাছে ধসা রোগ দেখা দেওয়ায় তখনই সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলেন চাষিরা। তাই ধসা ঠেকাতে চাষিরা আলু খেতে কীটনাশক ছড়িয়ে নিবিড় ভাবে পরিচর্চায় বাড়তি নজর দেন। কিন্তু ক’দিনের বৃষ্টিতে আলু খেতের মাটি ভিজে গিয়ে ও রোদ না পাওয়ায় বিপদ বেড়ে গিয়েছে। কৃষিদফতর জানাচ্ছে, দু’দিনে এই জেলায় প্রায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই বৃষ্টির কারণেই আলুর সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে।
পাত্রসায়রের বিদ্যানন্দপুরের চাষি উপল ঘোষ সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় ছ’বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। কয়েক হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ১১ বস্তা আলু বীজ লাগিয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, “নাবিধসা রোগ দেখা দেওয়ায় আরও কয়েক হাজার টাকা খরচ করে রাসায়নিক ওষুধ ছড়ালাম। কিন্তু লাভ হল না। বৃষ্টির জেরে ধসা রোগ আরও বেড়ে যাওয়ায় জমির ৬০ শতাংশের বেশি আলুগাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’
ক্ষতি হয়েছে শীতকালীন শাক-সব্জিরও।
বাঁকুড়ার মোবারকপুরে রোগ ছড়িয়েছে টমেটোর জমিতেও। ছবি: অভিজিত্‌ সিংহ।
বিষ্ণুপুরের আমডহরা গ্রামের চাষি আসিরুদ্দিন খানও কৃষি ঋণ নিয়ে ছ’বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। বিপদ বুঝে তিনি ইতিমধ্যেই জমি থেকে কিছু আলু তুলে নিয়েছেন। কিন্তু ক্ষতি ততদিনে যা হবার হয়ে গিয়েছে। তাঁরও আক্ষেপ, “অন্যবার আলু জমিতে তিনবার রাসায়নিক ওষুধ ছড়ালেই কাজ হয়। এ বার আট বার ছড়িয়েছি। খরচ হয়েছে বাড়তি তিন হাজার টাকা। কিন্তু বিঘা প্রতি আলু পাচ্ছি মোটে ৩০ বস্তা।” ওই গ্রামের চাষি হোসেন আলি খান্‌, সুন্দর আলি খান, জয়পুরের মাগুরা গ্রামের চাষি উত্তম চট্টোপাধ্যায়রা জানান, বিঘে পিছু জমিতে আলু চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় যেখানে ৯০ বস্তা আলু ফলানো যেত, এ বার সেখানে ২০ বস্তাও ফলন তাঁরা পাননি। পাত্রসায়রের কোটালিচক গ্রামের চাষি নিয়ামুল হক হাজারির আক্ষেপ, “লাভ হওয়া তো দূরের কথা। খরচ উঠবে কি না সন্দেহ।” পাত্রসায়র গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সুব্রত কর্মকার বলেন, “অনেক চাষিই বাজার থেকে, সমবায় সমিতি থেকে টাকা ধার করে বা ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেছিলেন। আলুর ফলন না হওয়ায় তাঁরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন। আমরা তাই আলুচাষিদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছি।” এই অবস্থায় তাঁরা কৃষিঋণ মুকুবের দাবি তুলেছেন। অনন্তনারায়ণবাবুর আশ্বাস, “নিয়ম মাফিক চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।”
ফি বছর হাতির উত্‌পাতে আলু নষ্ট হয় বিষ্ণুপুর, সোনামুখীর মতো ব্লকগুলিতে। এ বারও দলমা থেকে হাতিদের বিরাট দল জেলায় ঢুকেছে। সন্ধ্যা নামলেই তারা আলুর জমিতে নেমে তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। বিষ্ণুপুরের ঘুঘিমুড়া গ্রামের বাসিন্দা স্বপন রায়, ভগবত সিং বলেন, “জমিতে নেমে খেয়ে ও পায়ে মাড়িয়ে হাতির পাল আলু-সহ শীতকালীন সব্জি নষ্ট করছে। তার উপর নাবিধসায় আলুর প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেল। এই ক্ষতি সামাল দেব কী করে?”
বৃষ্টিতে শুধু আলু নয়, অন্য সব্জিরও ক্ষতি হয়েছে। এ দিন বাঁকুড়ার মোবারকপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা জমি থেকে পচা টমেটো তুলে ফেলছেন। চাষি সন্ধ্যা নন্দী বলেন, “দু’বিঘা জমিতে টমেটো ও মটরশুঁটি লাগিয়েছিলাম। বৃষ্টিতে দু’টো সব্জিতেই পচন ধরছে।” গোপাল নন্দী এক বিঘা জমিতে সরষে চাষ করেছিলেন। তিনি বলেন, “বৃষ্টিতে সরষের ফুল পচে গিয়েছে।” ওই গ্রামের উর্মিলা লোহার তাঁর দু’বিঘা জমিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপির চাষ করেছিলেন। তিনি বলেন, “বৃষ্টিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপিও নষ্ট হয়েছে।” যদিও অনন্ত নারায়ণবাবু বলেন, “নিম্নচাপের জেরে অন্য শীতকালীন সব্জিতে ক্ষতির রিপোর্ট আমরা পাইনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.