সমুদ্রসৈকত-সহ পুরী শহরের দূষণ নিয়ে বারবার আদালতের ক্ষোভের মুখে পড়ে কিছু ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয়েছে ওড়িশা।
বিশেষত স্বর্গদ্বার শ্মশানে শেষকৃত্যের ব্যবস্থায় তারা কিছু বদল আনতে চায় বলে জাতীয় পরিবেশ আদালতে হলফনামা দায়ের করে জানিয়েছে ওড়িশা সরকার। ওই হলফনামায় জানানো হয়েছে, স্বর্গদ্বারে কাঠের চুল্লির সঙ্গে যান্ত্রিক ব্যবস্থা ও চিমনি জুড়ে দেওয়া হবে। চিতার ধোঁয়া চিমনির মাধ্যমে মাটি থেকে অনেক উপরে চলে যাবে। ছ’মাসের মধ্যে ওড়িশা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এই নতুন ব্যবস্থার প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করবে। দূষণ ঠেকাতে পুরী টাউন থানা থেকে জগন্নাথ মন্দির পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত বাস চালানোর কথাও জানিয়েছে ওড়িশা প্রশাসন।
পুরীর দূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সেই মামলায় বলা হয়, স্বর্গদ্বারে কাঠের চুল্লির ধোঁয়া থেকে ওই এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে। চিতার ছাই উড়ে হাওয়াকে তো দূষিত করছেই, সেই সঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের খাবারের দোকানে। এ ছাড়া সমুদ্রতটের পাশে খাবারের দোকানগুলিতে ঢালাও রান্না করার ফলেও দূষণ ছড়াচ্ছে। সামগ্রিক ভাবে দূষণ রুখতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সেই বিষয়েই ওড়িশা সরকারের কাছে হলফনামা চেয়েছিল আদালত।
দূষণের মোকাবিলায় ওড়িশা সরকারের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়া হয়। কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগের কারণেই স্বর্গদ্বারে কাঠের চুল্লি বন্ধ করে বৈদ্যুতিক চুল্লির ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। শ্মশান এলাকায় পর্যাপ্ত জায়গা না-থাকায় কাঠের চুল্লির পাশাপাশি বৈদ্যুতিক চুল্লি নির্মাণ করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই কাঠের চুল্লি রেখেই তার সঙ্গে যান্ত্রিক ব্যবস্থা জুড়ে দেওয়া হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পরিকল্পিত এই ব্যবস্থার একটি নকশাও আদালতে জমা হয়েছে।
ওই নকশা অনুযায়ী বালি দিয়ে একটি বেদি তৈরি করা হবে। তাতে কাঠের চিতায় পোড়ানো হবে মৃতদেহ। তার ধোঁয়া টেনে নেওয়ার জন্য একটি শঙ্কু আকৃতির চালা থাকবে। সেই চালায় বসানো যন্ত্র ধোঁয়া টেনে নেবে। পরে তা চিমনির ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় ছাইয়ের গুঁড়ো আলাদা করে নেওয়া হবে। বাকি ধোঁয়া ২০ মিটার লম্বা চিমনি দিয়ে বার করে দেওয়া হবে। মাটি থেকে অনেক উপরে ধোঁয়া ছাড়ার ফলে দূষণ কমানো যাবে।
ওড়িশার মুখ্যসচিবের স্বাক্ষরিত রিপোর্টে জানানো হয়েছে, স্বর্গদ্বার শ্মশান চত্বরের এক পাশে আপাতত এমন একটি চুল্লি ‘পাইলট’ প্রকল্প হিসেবে চালু করা হচ্ছে। ছ’মাসের মধ্যে পাইলট প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তার পরে সেই প্রকল্পের কার্যকারিতা দেখে আরও তিন-চারটি বেদি গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
পুরীর গ্র্যান্ড রোডে বায়ুদূষণের কথা মেনে নিয়েছে ওড়িশা প্রশাসন। কমিটি জানিয়েছে, ওই এলাকায় গাড়ি ও গ্যারাজ থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে। কিন্তু পুরীতে কোনও তেল সংস্থার এলপিজি কিংবা সিএনজি সরবরাহের ব্যবস্থা না-থাকায় ওই ধরনের পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মুখ্যসচিবের কমিটি জানিয়েছে, এলপিজি কিংবা সিএনজি ব্যবহার না-করায় ওই এলাকায় ব্যাটারিচালিত বাস ব্যবহার করা হবে। সেই সঙ্গে রাস্তার ধারের গ্যারাজগুলিকে অন্যত্র সরানোর ব্যবস্থা করতে পুরী পুরসভাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সমুদ্রতটের কাছে সারি সারি মাছ ভাজার দোকানকে নিয়ন্ত্রণ করার কথাও জানিয়েছে মুখ্যসচিবের কমিটি। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই এলাকায় মাছ ভাজা ও বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে। পুরী জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ওই সব দোকানে মাছ ভাজা ও বিক্রি বন্ধ করতে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বাড়ানো হয়েছে নজরদারিও। |