মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখাটি (‘ছেলেমেয়েরা কী শিখছে...’ ৬-২) পড়তে গিয়ে কয়েকটা জায়গায় হোঁচট খেলাম। আসলে এক জন শিক্ষক হয়ে স্কুলের ভেতরে এবং বাইরে অহরহ যে সমস্যার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি, তারই কিছু উদাহরণ পাঠকদের কাছে তুলে ধরতে চাই। এ বার (২০১৩ শিক্ষাবর্ষ) বার্ষিক পরীক্ষার ফল বেরনোর সময় লক্ষ করলাম, অষ্টম থেকে নবম শ্রেণিতে উঠতে গিয়ে বেশির ভাগ শুধু ফেল করেছে তাই নয়, তাদের বিষয়ভিত্তিক নম্বরগুলিরও বেশ শোচনীয় অবস্থা। শুধু আমার স্কুলেই নয়, গ্রামাঞ্চলের অনেক স্কুলেরই এই একই দশা। লেখক বলেছেন, ‘যেন পাশ-ফেল চালু করলেই গুণমান আকাশ ছোঁবে’। এ কথার মধ্যে একটা তাচ্ছিল্যের ভাব আছে। আমি তো বলব, এটা মনগড়া ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। অথচ অমর্ত্য সেন বলছেন, পাশ-ফেল না করলে প্রগতি কী ভাবে নির্ধারিত হবে? কিছু দিন আগেই আবদুল কালাম পাশ-ফেল রাখার পক্ষেই মত দিয়েছেন। কয়েক মাস আগে দিল্লিতে শিক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলনে ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, বিহার প্রভৃতি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীরা গুরুতর অভিযোগ এনেছেন, পাশ-ফেল না থাকার কারণে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনাতে অনীহা আসছে। |
ছোট বয়সে ‘পাশ-ফেল ব্যবস্থা’ অভিভাবকের মতো, তাকে মানতে হয়, যাতে অভ্যস্ত হলে বড় বয়সে অনেক আঘাত ও কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা অর্জিত হয়। অ্যানুয়াল স্টেটাস রিপোর্ট (২০১১) যা-ই বলুক না কেন, আমরা শিক্ষকরা তো জানি যে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া বেশির ভাগ ছেলেমেয়েই ভাল করে বাংলা পড়তে পারে না, গুণ-ভাগেও খুব কাঁচা। ইংরেজি বাক্য পড়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। আসলে নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়ন যে সব উন্নত দেশ থেকে আমদানি, সেখানে এমন ভাবে পড়ানো হয়, কেউ ফেল করে না। সেই পরিকাঠামো ও শিক্ষককুল কি আমাদের রাজ্যে সে ভাবে তৈরি? সুশান্ত সাহু। গুড়গুড়িপাল, পশ্চিম মেদিনীপুর |