গুন্ডামিটাই যে পাওয়া গেল না
সালটা ১৯৮৭।
কিন্তু সিনেমার লুক থেকে শুরু করে ইমোশন সবই ১৯৭০এর। বাংলার প্রেক্ষাপট। আর সামনে সেক্সি প্রিয়ঙ্কা। যিনি পেশায় এক বার-ডান্সার। তবে তাঁর আরও একটা পরিচয়ও রয়েছে (যেটা বলে দিলে ছবির আসল চমকটাই চলে যাবে)।
ছক্কা মারার সব সুযোগই ছিল।
কিন্তু ‘গুন্ডে’-র প্রোমোতে রণবীর সিংহ আর অর্জুন কপূর যতই গর্জান না কেন, পর্দায় তাঁরা কিন্তু ততটা বর্ষালেন না।
তবে রণবীরের তেল-চকচকে খালি গা দেখে যাঁদের দুধের স্বাদ ঘোলে মিটবে, তাঁরা কিন্তু ‘এসকেপিস্ট’ সিনেমার দোহাই দিতেই পারেন।
বলতেই পারেন যে পিগি চপস তো সবাইকে চমকে দিয়েছেন তিনটে আলাদা লুক-য়ে।
বলতেই পারেন, কী দস্যিপনাই না করেছেন রণবীর-অর্জুন মিলে।
বলতেই পারেন যে ছবিটা তাঁদের ‘শোলে’-র জয়-বীরুর বন্ধুত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে এমন একটা সময়ে যখন নায়কের গুন্ডামি দেখেও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জাগত। যেখানে সমাজের সব নষ্টামির মূলে ছিল ‘সিস্টেম’।
কিন্তু তার পর?
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের গল্প থেকে প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার ক্যাবারে নাচ, ইরফানের ‘স্পেশ্যাল’ অ্যাপিয়ারেন্স থেকে রণবীর-অর্জুনের অ্যাটিটিউড, ভ্যালেনটাইন্স ডে-তে মুক্তি পাওয়ার বাড়তি সুযোগ থেকে না-দেখা রানিগঞ্জ কয়লাখনির প্রেক্ষাপট বারুদের সব উপকরণই তো ছিল পরিচালক আলি আব্বাস জাফরের হাতের ডগায়। ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৌরভ শুক্লর মতো অভিনেতাদেরও পেয়েছিলেন। তবু পর্দার বিস্ফোরণটা হল না কেন?

প্রিয়ঙ্কা, অর্জুন, রণবীর
বাস্তব থেকে পলায়নধর্মী মশালা ছবির মোড়কে পরিচালক চেষ্টা করেছেন একটা রিয়্যালিস্টিক ছবি বানাতে। অথবা এটাও বলা যেতে পারে যে বাস্তববাদী ছবির মোড়কটা রেখে পরিচালক চেয়েছেন একটা পুরোদস্তুর বিনোদনের ছবি তৈরি করতে। যেখানে এক দিকে রয়েছে দুই অনাথ বাচ্চার সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসার গল্প। আর তাদের একজনের ‘শিশু’র যৌন হেনস্থা হওয়া থেকে পালিয়ে গিয়ে ওয়াগন ব্রেকার হয়ে ওঠার কাহিনি। এত দূর অবধি ছবিটি বেশ বাস্তববাদী। এর মধ্যেও যে ‘ক্লিশে’ নেই, তা নয়। তবে দুই বাচ্চার (দর্শন গুর্জর, জয়েশ ভি করডক) অভিনয়ের জোরে কোথাও সেগুলোকে উপেক্ষা করতে খুব একটা অসুবিধে হয় না।
কিন্তু এর পর শুরু হয়ে যায় অন্য এক স্টাইলের ছবি। যেখানে ওয়াগন ব্রেকার দুই ‘ভাইসেক্সুয়াল’ নায়কের জীবনে আসে প্রেম। সমস্যা একটাই, দুজনেই প্রেমে পড়েন প্রিয়ঙ্কার।
আর এই প্রেমকে ঘিরেই যত ঝামেলা।
প্রেম না বন্ধুত্ব? কোনটা আগে?
ভালবাসা না পেশা? কোনটা আগে?
সেই নিয়েই টানাপোড়েন। আর তার মাঝেই চিত্রনাট্যে সাসপেন্স আনার জন্য ছড়িয়ে দেওয়া হয় চোর-পুলিশের কানামাছি খেলা।
বিসর্জনের মিছিল থেকে শুরু করে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির দুই প্রেমিক সব জায়গায় হাজির। কখনও একই ছিটের শার্ট পরে, কখনও একই গান গেয়ে তাঁরা নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যান প্রিয়ঙ্কাকে খুশি করার।
কারণ একটাই। ‘ওহ চাহেগি জিসকা বননা, ওহ বনেগা রাজেশ খন্না।’
অর্থাৎ যাকে প্রিয়ঙ্কার পছন্দ হবে সেই প্রেমিক তকমা পাওয়ার যোগ্য। শুরু হয় পূর্বরাগের পালা। সোহেল সেনের সুরে একের পর এক গান। কখনও বাপি লাহিড়ি, বিশাল দাদালানি, কেকে আর নীতি মোহন মিলে গাইছেন ‘তুনে মারি এন্ট্রি’, কখনও বা জাভেদ আর আলি শাদাব ফরিদি গাইছেন ‘জশ্নে ইশ্ক।’ তার সঙ্গে জুলিয়াস প্যাকিয়ামের ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর।
আর এ সবের মধ্যে চোখ কাড়ে প্রিয়াঙ্কার ঝলসে দেওয়া জৌলুস। কখনও তাঁতের শাড়ির সঙ্গে স্লিভলেস ব্লাউজ পরে মাছের বাজারে। কখনও বা করসেট আর ফিশনেট স্টকিংস পরে গাইছেন ‘আসালাম-এ-ইশ্কুম’।
২০১৩ সালটা প্রিয়ঙ্কার কেরিয়ারে তেমন জমেনি। বক্স অফিসে ‘জঞ্জির’য়ের রিমেক তেমন ভাল করেনি। ‘কৃষ থ্রি’তেও তাঁর রোলটা তেমন বড় ছিল না। ঠান্ডা ২০১৩-র পরে প্রিয়ঙ্কার কেরিয়ারে একান্তই দরকার ছিল ‘গুন্ডে’র সাফল্য। শুধু দৃষ্টিনন্দন হওয়াই নয়। দরকার ছিল এমন একটা চরিত্র যেখানে তিনি দুই অল্পবয়সি নায়কের ‘ব্রোম্যান্স’কে ছাপিয়ে যেতে পারেন। মাঝে মাঝে যে তাঁকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি তাও নয়। কিছু ‘ইন্টারেস্টিং’ সংলাপ রয়েছে তাঁর মুখে। কিন্তু আলি আব্বাস জফর আর সঞ্জয় মাসুমের লেখা ভাল সংলাপ বলার যে সুযোগ তাঁর নায়কেরা পেয়েছেন তার সিকিভাগও প্রিয়ঙ্কার জোটেনি। কখনও এক নায়ক বলছেন, ‘পিস্তল কি গোলি অউর লোন্ডিয়া কি বোলি জব চলতি হ্যায়...তো জান দোনো মে হি খতরে মে হোতি হ্যায়।’ তো কখনও অন্য জন বলছেন, ‘হম লোগ কোয়লে হ্যায়। কিতনা ভি রগড় রগড় করে সাফ কর লো, কালি খতম হি নহি হোতি হ্যায়।’ কিন্তু এই ২০১৪-তে বসে কি শুধু সংলাপের চমক দিয়েই ছবি উতরোতে পারে? রেট্রো নির্যাসে আপত্তি নেই। নস্ট্যালজিয়াও চলতে পারে। কিন্তু থ্রিলার ঘরানাতে যদি প্লট কোন দিকে যাবে তা আগে থেকেই আন্দাজ করা যায়, সেখানে বিস্ময় বা রোমাঞ্চটাই থাকে না। পিরিয়ড ফিল্মের দোহাই দিয়ে নতুনত্বকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দেওয়া যায় কি?
সলমন খানের মতো দুই নায়কই শার্ট খুলেছেন। মেল ক্লিভেজ থেকে সিক্স প্যাক সবই দেখান।
স্লো-মোশনে যখন-তখন স্পাইডারম্যানের মতো উড়ে গিয়েছেন। কয়লাখনির মধ্যেও দুর্দান্ত সব অ্যাকশন সিকোয়েন্স। বাংলার মাটিতে শু্যট করা হিন্দি ছবির বহু ব্যবহৃত চিত্রকল্প (হাওড়া ব্রিজ, গঙ্গার ঘাট ইত্যাদি ইত্যাদি) থেকে বেরিয়ে গিয়ে চিত্রগ্রাহক অসীম মিশ্র রানিগঞ্জের কয়লা খনি লেন্সবন্দি করলেন ঠিকই। ছবির শেষ দিকে টুইস্টও আনা হল টিত্রনাট্যে। ভরপুর অ্যাকশন। কিন্তু হঠাৎ যেন সব্বার মনে পড়ে যায় ছবিটাকে বাস্তববাদী করাটা জরুরি। শুরু হয় ‘এসকেপিস্ট’ ঘরানার সিনেমার সঙ্গে বাস্তবতার মিশেল।
আর তাতে বিপদ একটাই। সলতে ধরানো ছিলই। কিন্তু তত ক্ষণে বারুদ নেতিয়ে গিয়েছে।
আওয়াজ হল ঠিকই। কিন্তু ডায়নামাইটের বদলে ফাটল চকোলেট বোম!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.