এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল নির্মাণের দাবিতে ‘জনমত তৈরি করতে’ এ বার ফ্লেক্স টাঙিয়ে সরব হলেন রায়গঞ্জের চাষিরা। তাঁদের দাবি, তাঁরা এইমস গড়তে জমি দিতে চান। তাই অবিলম্বে জমি অধিগ্রহণ করতে উদ্যোগী হোক রাজ্য সরকার। চাষিদের এই উদ্যোগকে কংগ্রেস সমর্থন করলেও তৃণমূলের অভিযোগ, চাষিদের সামনে রেখে লোকসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক অপপ্রচার করছে কংগ্রেস। |
রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড়, মোহনবাটি, বিদ্রোহী মোড়, হাসপাতাল রোড ও কর্ণজোড়া এলাকায় মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের জন্য চিহ্নিত হওয়া প্রস্তাবিত জমির মালিকরা জোটবদ্ধ হয়ে ১০টিরও বেশি ফ্লেক্স লাগিয়েছেন। সেই ফ্লেক্সগুলিতে ‘আমরা কৃষক, আমরা চাষিভাই। আমরা স্বেচ্ছায় জমি দিতে চাই। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী জমি অধিগ্রহণ করুন। আমরা এইমস গড়তে চাই’ বলে লেখা হয়েছে। সেই সঙ্গে ফ্লেক্সগুলিতে একাধিক চাষির ছবিও দেওয়া হয়েছে। ছবিতে চাষিরা বুকে পোস্টার সাঁটিয়ে রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্বপ্নপূরণ করতে জমি অধিগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। চাষিরা জানিয়েছেন, জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়াতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওই ধরণের ফ্লেক্স দিয়ে গোটা শহর মুড়ে ফেলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনকারী চাষিদের তরফে রফিক আজম, মহম্মদ আলি ও ইলিয়াস মহম্মদ জানান, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পেলে তাঁরা রাজ্য সরকারকে স্বেচ্ছায় জমি দিতে প্রস্তুত। ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সি ও বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তের নেতৃত্বে কলকাতায় মহাকরণ অভিযান করে মুখ্যমন্ত্রীকে লিখিতভাবে সে কথা জানাতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি। চাষিরা জানান, গত প্রায় তিন বছর ধরে জমি অধিগ্রহণের দাবিতে চাষিরা একাধিকবার পথ অবরোধ, বিক্ষোভ, পথসভা, মিছিল সহ বিভিন্ন আন্দোলন করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তাই জনমত তৈরি করতেই ফ্লেক্সের মাধ্যমে খোলাখুলি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমি অধিগ্রহণের আর্জি জানানো হল। তাঁদের কথায়, “লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ না করলে কেন্দ্রীয় সরকার হাসপাতাল তৈরির কাজ পিছিয়ে দিতে পারে। তাই আমরা চাইছি দ্রুত জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হোক।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব অমল আচার্য জানান, রাজ্য সরকার কৃষিজমি নষ্ট করে হাসপাতাল তৈরি করবে না বলে দীর্ঘদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। সেই কারণে রায়গঞ্জে ও ইসলামপুরে দুটি মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে চাষিদের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন রায়গঞ্জের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। তিনি বলেন, “চাষিদের আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করছি। প্রদেশ কংগ্রেসের ডাকে খুব শীঘ্রই জমি অধিগ্রহণের দাবিতে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনে নামা হচ্ছে।” অমলবাবুর অভিযোগ, “লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস জনসমর্থন হারানোয় রাজনৈতিক স্বার্থেই হাসপাতালকে সামনে রেখে চাষিদের দিয়ে রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারমূলক রাজনীতি শুরু করেছে।” এ প্রসঙ্গে দীপাদেবী বলেন, “উত্তরবঙ্গের স্বার্থে এইমস নিয়ে যে কোনও আন্দোলনকেই কংগ্রেস সমর্থন করবে। তাই চাষিদেরও সমর্থন করা হচ্ছে।” দীপাদেবীর পাল্টা অভিযোগ, “তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারই হাসপাতালের জমি অধিগ্রহণ না করে রাজনীতি করছে।”
রাজনীতির কথা মানতে চাননি চাষিরা। মহম্মদ জাহানুদ্দিন, খুরশেদ আলি ও আতাউর রহমানদের মতো চাষিদের দাবি, “কোনও রাজনৈতিক স্বার্থে নয়, বাসিন্দাদের উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার স্বার্থেই আমরা কোনও রং বিচার না করে এক হয়ে দীর্ঘদিন ধরে জমি অধিগ্রহণের দাবিতে আন্দোলন করছি।” পানিশালা এলাকায় হাসপাতাল তৈরির জন্য চিহ্নিত হওয়া প্রস্তাবিত ১১০ একর জমির মালিকের সংখ্যা প্রায় ৮০ জন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ চাষিই অন্যত্র জমি রয়েছে। প্রস্তাবিত জমিতে চাষিদের তিন বিঘা থেকে ৫০ বিঘা পর্যন্ত জমি রয়েছে। চাষিরা জানান, হাসপাতাল তৈরি হলে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা মিলবে, সে কথা মাথায় রেখেই তাঁরা ক্ষতিপূরণ নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিরোধে যাবেন না। |