ফের লক্ষাধিক টাকা মূল্যের তিনটি সোনার বিস্কুট আটক করল বিএসএফ। বুধবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের সীমান্তবর্তী গ্রাম দহরখান্দা থেকে তা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও লক্ষাধিক টাকা মূল্যের এলাচ, জিরে, মরিচও পাওয়া গিয়েছে। আটক হওয়া সোনা তেঁতুলিয়ার শুল্ক দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৫০০ গ্রাম ওজনের ওই সোনার বাজার মূল্য প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা। এই ঘটনায় কাউকে ধরা যায়নি।
অন্য দিকে, এ দিনই হাকিমপুর থেকে এক মহিলা-সহ পাঁচ জনকে মোটরের যন্ত্রাংশ ও সুপুরি পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে স্বরূপনগর থানার পুলিশ।
শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৬ মাসে কেবল স্বরূপনগর সীমান্ত দিয়েই ৩ কোটিরও বেশি টাকার চোরাই সোনা উদ্ধার করা হয়েছে। শতাধিক লোকও এই কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ধরা পড়েছে। তার সঙ্গে সঙ্গে রুপোর গয়না থেকে, দামি মশলা বা মোটর যন্ত্রাংশ ও গরু পাচার হচ্ছে নিত্য দিন। পাচার হচ্ছে মানুষও। |
স্বরূপনগর সীমান্ত এলাকার কিছুটা অংশে কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও অনেকটা অংশই খোলা। বাকি অংশটা সোনাই নদী দিয়ে ঘেরা। উল্টো দিকে, বাংলাদেশের বেশির ভাগ অংশই ভেড়ি দিয়ে ঘেরা। পুলিশ ও বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’পারেই সীমান্তপ্রহরা রয়েছে। রাতে নজরদারির সুবিধার জন্য লাগানো হয়েছে নাইট ভিশন ক্যামেরা, পর্যাপ্ত আলোও। কিন্তু তা সত্ত্বেও পাচার কমছে না।
১৫২ নম্বর ব্যাটেলিয়নের এক আধিকারিক জানান, বুধবার সকালে তাঁরা জানতে পারেন আমুদিয়ার সীমান্তবর্তী ওই দহরখান্দার ফকিরপাড়া এলাকা দিয়ে বেশ কিছু বাংলাদেশি পাচারকারী এ পারে এসেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বস্তা এ পারে ফেলেছে দুষ্কৃতীরা। আর এ দিককার দুষ্কৃতীরা তা নিয়ে পালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বিএসএফকে আসতে দেখে দু’পারের দুষ্কৃতীরাই বস্তা ফলে পালায়। তল্লাশির সময়ে সেগুলির একটি থেকে দু’টি দুই ইঞ্চি লম্বা ও আর একটি তুলনায় বেশ বড় একটি সোনার বিস্কুট পাওয়া যায়।
পুলিশ জানায়, দেড় সপ্তাহ আগেই এলাকার আমুদিয়া গ্রামেরই এক বাসিন্দার কাছ থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা মূল্যের ১০টি সোনার বিস্কুট আটক করে বিএসএফ। তারও আগে বালতি রোডে এক মহিলার কাছ থেকে ৮ টি সোনার বিস্কুট আটক করে তারা। এছাড়াও সাম্প্রতিক কালে হাকিমপুর থেকে দু’বার বেশ কয়েক লক্ষ টাকার সোনার বিস্কুট উদ্ধার করা হয়। তারও আগে হাকিমপুর চেক পোস্টে দুই পড়ুয়ার স্কুলব্যাগ থেকেও উদ্ধার হয় বেশ কয়েক লক্ষ টাকার নেশার পাউডার। সম্প্রতি তেঁতুলিয়া সেতুতেও এক জনের কাছ থেকে বেশ কয়েক লক্ষ টাকার রুপোর গয়নাও আটক করা হয়।
এই ভাবে একের পর এক পাচারের ঘটনা সামনে আসায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। যদিও তাদের বক্তব্য, এ ব্যাপারে বিএসএফেরই দায়িত্ব বেশি। কারণ, কোনও রকমে সীমান্ত পেরিয়ে এখানে চলে এলে তাদের ধরা কঠিন হয়ে পড়ে। তার জন্য প্রথমেই নজরদারি জোরদার করা উচিত।
পাচার নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে জেলা প্রশাসনের। দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই পাচারকারীদের সঙ্গে মুম্বই ও কলকাতার বেশ কিছু ব্যবসায়ীয়ের যোগাযোগ থাকছে। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এই পাচারের সঙ্গে কোনও বিদেশি চক্র জড়িত কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। |