ভাষাশহিদ আবুল বরকতের জন্মভিটেয় ‘একুশে’ উদযাপন করতে সাইকেলে সালার থানার বাবলা গ্রামে যাবেন ভগবানগোলার একদল যুবক।
আজ, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ ঘেঁষা পদ্মার পাড় লাগোয়া ভগবানগোলা থেকে একুশ জন যুবক রওনা দেবেন সালারে। প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার পর রাতে বাবলা গ্রামে পৌঁছবেন তাঁরা। ঘড়ির কাঁটা ১২টা ১ মিনিটের ঘর ছুঁতেই মালা দেবেন শহিদ আবুল বরকত স্মৃতি সঙ্ঘের শহিদবেদিতে। পরদিন একুশের ভোরে ফের তাঁরা সাইকেলে রওনা দেবেন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের উদ্দেশে। কারণ ওই কলেজ থেকেই আইএ পাশ করেছিলেন আবুল বরকত। ২১ জনের দলনেতা শুকুরুদ্দিন জুয়েল বলেন, “কৃষ্ণনাথ কলেজে ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানের শরিক হতে ওই কলেজে পৌঁছব দুপুরে।” কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায় জানান, কলেজের বেদিতে মালা দিয়ে ভাষাশহিদকে শ্রদ্ধা জানাবে ভগবানগোলার ২১ জনের দল।
বরকতের জন্মভিটের দুই প্রান্তে মাত্র ৫০ গজের ব্যবধানে দু’টি পৃথক সংস্থা গড়ে একই সময়ে কংগ্রেস এবং সিপিএমের উদ্যোগে শহিদস্মরণ অনুষ্ঠান হবে। জেলা পরিষদের সদস্য তথা মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক শাহানাজ বেগম বলেন, “আবুল বরকতের আবক্ষ মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শহিদ আবুল বরকত স্মৃতি সঙ্ঘের কার্যালয়ের সামনে। ২১ ফেব্রুয়ারি ওই মূর্তির আবরণ উন্মোচন করবেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী।” অবশ্য তার আগেই আজ ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকে বরকতের জন্মভিটেয় শুরু হয়ে যাবে একুশে উদযাপন অনুষ্ঠান। শহিদ আবুল বরকত স্মৃতি সঙ্ঘের সম্পাদক সৈয়দ সিয়াদত আলি জানান, ২০ তারিখ রাত ৮টায় আজাদ হিন্দ স্বেচ্ছাসেবক পরিষদ বাহিনী বাবলা গ্রামে প্যারেড করবে। রাত ১২টা ১ মিনিটে পতাকা উত্তোলন করা হবে। ভগবানগোলা থেকে আসা যুবকের দল মাল্যদান করবে শহিদবেদিতে। তারপর রাত ৩টে থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত মশাল মিছিল করে গ্রাম পরিক্রমা। ২১ ফেব্রুয়ারি দিনভর সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা হবে। ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে থাকছে যাত্রানুষ্ঠান।
৫০ গজ দূরেই ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিটে পৃথক বেদিতে মালা দিয়ে শুরু হবে সিপিএম পরিচালিত ভাষাদিবসের অনুষ্ঠান। ‘শহিদ আবুল বরকত কেন্দ্র’-এর সম্পাদক তথা সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তুষার দে বলেন, “তিন দিন ধরে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বরকত মেলা ও আলোচনাসভার মাধ্যমে অন্য বারের মতো এ বারও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হবে।”
এ ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা দিনটি পালন করছে যথাযোগ্য মর্যাদায়। ‘বাচিক শিল্পচর্চার মুক্ত দিগন্তে’র উদ্যোগে ইতিমধ্যে গত রবিবার জেলা জুড়ে আবৃত্তি প্রতিযোগিতা হয়েছে। আগামী কাল ২১ ফেব্রুয়ারি বহরমপুর আইসিআই স্কুলে অনুষ্ঠিত হবে ভাষাদিবস। সংস্থার পক্ষে সীমা সরকার বলেন, “সেখানে আবৃত্তি প্রতিযোগিতার কৃতীদের পুরস্কৃত করা হবে। আবৃত্তি, সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন ছাড়াও থাকছে ভাষাদিবসের তাৎপর্য নিয়ে বিশিষ্টজনদের আলোচনা।” কয়েক দশক ধরে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও বর্ধমান জেলার বিভিন্ন গ্রামে ‘ভ্রাম্যমান একুশে আড্ডা’ পরিচালনা করছে খড়গ্রামের ‘পূর্বাভাস’ সাহিত্যগোষ্ঠী। সংস্থার কর্ণধার আবুল কালাম বলেন, “এ বারের একুশে উদযাপন হয়ে গেল গত রবিবার কান্দির থানার আন্দুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।”
দেড় দশক ধরে মাসিক সাহিত্যপাঠের আসর পরিচালনা করছে ‘মুর্শিদাবাদ জেলা কবিতা অ্যাকাডেমি’। সংস্থার সম্পাদক কুশলকুমার বাগচি বলেন, “আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৭৩তম মাসিক পাঠচক্রের আসর বসছে বহরমপুর রবীন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেটি ভাষাশহিদ দিবস হিসাবে পালন করা হবে।” কান্দি শহরের কোরাস নাট্যগোষ্ঠী ১৯৮০ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন করছে। গোষ্ঠীর কর্তা আশিস পাত্র বলেন, “প্রতিবারের মতো এবারও গান, আবৃত্তি, নাটক ও আলোচনার মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন করা হবে ভাষা দিবস। কান্দি ব্লক অফিসের সামনে ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেবে স্থানীয় তিনটি নাট্যগোষ্ঠী রাখালিয়া, ঝড় ও চরণিকা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংস্থা।”
কান্দির ‘২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি’র কমিটির যুগ্ম সম্পাদক অপরেশ চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁরা দিনটি পালন করবেন ২২ ফেব্রুয়ারি একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে। আবৃত্তি, গান ও আলোচনা ছাড়াও জেলা ও জেলার বাইরের গুণীজনদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। বেলডাঙা কলেজে ও জঙ্গিপুর কলেজে ‘ভাষা সংস্কৃতি স্বাধিকার মঞ্চ’র পক্ষ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পালন করা হবে বলে জানান মঞ্চের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক আবুল হালিম বিশ্বাস। তিনি বলেন, “আবৃত্তি, গান ও কবিতাপাঠ হলেও আমাদের মূল অনুষ্ঠান বিশিষ্টজনদের নিয়ে আলোচনা।” |