লোকসভার আগে বিব্রত পূর্বের সিপিএম
কের পর এক নির্বাচনে বিরোধীদের কাছে খড়কুটোর মতো উড়ে যাওয়ার পর প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সিপিএমের ‘অস্তিত্ব’ নিয়েই। রাজনৈতিক মহলে চলছিল চর্চা। ঠিক সেই সময়ে নজিরবিহীন ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’-সহ সামনে এল জেলা সিপিএম। সৌজন্যে দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, দলবিরোধী কাজ-সহ একাধিক অভিযোগে একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠ-সহ ঘনিষ্ঠ ক’য়েক জনের বিরুদ্ধে রাজ্য নেতৃত্বের তদন্ত কমিশন গঠন।
তমলুকের নিমতৌড়িতে মঙ্গলবার দলের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ অনুগামীদের বিক্ষোভে নাকাল হন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তিন সদস্য রবীন দেব, মৃদুল দে, নৃপেন চৌধুরী, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী চক্রধর মেইকাপ-সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের একাধিক নেতা। রবীনবাবু আবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পর্যবেক্ষক। এমন অপ্রীতিকর ঘটনার দায় সম্পূর্ণ ভাবে লক্ষ্মণ অনুগামীদের উপর চাপিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান। তিনি জেলা নেতৃত্বের একাংশ-সহ প্রায় ৪০ জনের বিরুদ্ধে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর।
বস্তুত, লোকসভা নির্বাচনের আগে লক্ষ্মণ-কাণ্ডকে কেন্দ্র করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএম নেতৃত্ব এখন স্পষ্টত দুই শিবিরে বিভক্ত। মঙ্গলবার বিক্ষোভ-হেনস্থার পর সে দিন বিকেলে রবীনবাবুদের উপস্থিতিতে দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে ঘটনার নিন্দা প্রস্তাব ও দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও কত তা দূর করা যাবে তা নিয়ে দলের নেতৃত্বের একাংশই সন্দিহান। তাঁদের তরফে ব্যাখ্যা, দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সিংহভাগই এখনও লক্ষ্মণ-অনুগামী হিসেবে পরিচিত। সেখানে আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া কী সম্ভব!
২০০২ সালে মেদিনীপুর জেলা ভেঙে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা গঠনের পর থেকেই গোটা জেলার একচ্ছত্র ‘নিয়ন্ত্রক’ ছিলেন লক্ষ্মণবাবু। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে জঙ্গি শ্রমিক আন্দোলন থেকে শুরু করে জেলার একের পর এক নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে বামফ্রন্টের মুখ হয়ে উঠেছিলেন সিপিএমের এই দাপুটে নেতা। সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে নন্দীগ্রাম জমি রক্ষা আন্দোলনের সময়। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চের পুলিশি অভিযানে ১৪ জন সাধারণ গ্রামবাসীর মৃত্যুর ঘটনায় বিরোধীদের অভিযোগের তির ছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও জেলা সিপিএমের কাণ্ডারী লক্ষ্মণ শেঠের দিকে। সেই শুরু। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তমলুক কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে হারের পর পিছু হটা শুরু হয় রাজ্য সিপিএমের নেক নজরে থাকা লক্ষ্মণবাবুর। ২০১১ সালে রাজনৈতিক পালাবদলের পর নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে পরে শর্ত সাপেক্ষে জামিন মিললেও তাঁর জেলায় ফেরা হয়নি আদালতের নিষেধাজ্ঞায়। হাল ফেরেনি জেলা সিপিএমেরও। তার উপর লোকসভা নির্বাচনের মুখে হেনস্থার ওই ঘটনা সিপিএমকে বাড়তি বিড়ম্বনায় ফেলবে বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
লক্ষ্মণ শিবিরের এক ঘনিষ্ঠ নেতার যুক্তি, এই পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর মতো ভরসা ছিল ২০০৭ সালের ১৪ মার্চের পুলিশের গুলি চালনার নন্দীগ্রাম মামলায় সিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্ট। ওই তদন্ত রিপোর্টে জমিরক্ষা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধেই চার্জশিট দেয় সিবিআই। ওই ঘটনায় সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে গেলেও বিপদের সময় লক্ষ্মণবাবুর পাশে না দাঁড়ানোয় তিনি প্রকাশ্যে রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। সেই ক্ষোভে ঘৃতাহুতি হয় যখন রাজ্য নেত্ৃত্ব সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, দলবিরোধী কাজের অভিযোগে লক্ষ্মণবাবু-সহ ঘনিষ্ঠ ক’য়েক জনের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশন গঠন করে সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব।
কোন্দল এ ভাবে প্রকাশ্যে আসায় জেলা সিপিএমকে বিঁধতে ছাড়ছেন না তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। হলদিয়ায় বুধবার একগুচ্ছ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সাংসদ বলেন, “জেলা পুলিশ সুপারকে যে কোনও ধরনের অশান্তি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” তারপরই নেতা শুভেন্দুর কটাক্ষ, “লক্ষ্মণ শেঠ, সুশান্ত ঘোষের মতো দুর্বৃত্তকে দলের মাথায় তুললে যে কি হাল হয়, সেটা সিপিএম এখন হাড়ে হাড়ে বুঝছে!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.