সাপ বাঁচাতে গ্রামে ঘুরে বেড়ান নিরদা
র পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখা মিলল বিষধর সাপের। পাড়া-প্রতিবেশীদের ডাকতে কোলের ছেলেকে নিয়ে বাড়ি থেকে ছুটে বেরিয়ে গেলেন মহিলা। আর তত ক্ষণে খবর পেয়ে ক্যানিংয়ের আমবেড়িয়া গ্রামে হাজির বছর নিরঞ্জন সর্দার। চোখের নিমেষে সাপটা ধরে নিয়ে চললেন বাড়ির পথে। সকলের কাছে ‘নিরদা’ নামেই পরিচিত তিনি।
কোথাও সাপ বেরোনোর খবর পেলেই লোহার রড হাতে নিয়ে সাইকেলে করে হাজির হন নিরঞ্জনবাবু। প্রায় কুড়ি বছর ধরে সাপ ধরে বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া আর সাপে কাটা মানুষকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়াই কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর। পেশায় মাছের ব্যবসায়ী, বছর পঞ্চাশের নিরঞ্জনবাবু থাকেন ক্যানিংয়ের জয়দেবপল্লিতে। বিষধর কেউটে, কালাচ, চন্দ্রবোড়া, গোখরো হোক বা নির্বিষ নিরীহ সাপ ধরে এনে বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়াটাই নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর। আর সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে দিতে এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। সাপ বেরোনোর খবর এলেই প্রথমেই খোঁজ পরে নিরঞ্জনবাবুর।
সকালে ক্যানিং বাজারে বসে মাছ বিক্রি করেন নিরঞ্জন। আর বাকি সময়ে ক্যানিং যুক্তিবাদী সমিতির হয়ে কাজ করেন। গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিষধর সাপ দেখিয়ে মানুষকে সচেতন করেন, যাতে গ্রামবাসীরা সাপ না মেরে ফেলেন। আবার কাউকে সাপে কাটলে ওঝা-গুণিনের কাছে না গিয়ে তিনি যাতে সোজা হাসপাতালে যান, তা নিয়েও লোকজনকে বোঝান।
এ ভাবেই গ্রামে গ্রামে সাপ ধরে বেড়ান ক্যানিয়েং নিরঞ্জন সর্দার।
প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন আরও কয়েক জনকে। —নিজস্ব চিত্র।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডাইরেক্টর কিশোর মানকার বলেন, “ওই সমিতি যে মহৎ কাজটা করেন, সে জন্য সাধুবাদ জানাই। নিরঞ্জনবাবু বিভিন্ন ধরনের সাপ ধরে আমাদের হাতে তুলে দেন। আমরা সেই সাপ জঙ্গলে ছেড়ে দিই। এই কাজের জন্য আমাদের দফতর থেকে ওঁদের একবার পুরস্কৃত করা হয়েছিল।” ক্যানিং হাসপাতালের চিকিৎসক সমর রায়ও বলেন, “নিরদা যে ভাবে সাপে কাটা মানুষের জন্য ছুটে যান, হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ওঁর মতো মানুষরা এগিয়ে এলে সাপে কাটায় মৃত্যুর হার কমবে।”
ক্যানিং যুক্তিবাদী সমিতির সম্পাদক বিজন ভট্টাচার্যও নিরঞ্জনবাবুর প্রশংসা করে বলেন, “উনি আমাদের সম্পদ। ওঁর কাজের জন্য বহু সাপ প্রাণে বেঁচেছে। অনেক সাপে কাটা রোগীও সুস্থ হয়েছেন।”
তবে সাপ ধরার যেমন নেশা রয়েছে, তেমন ঝুঁকিও রয়েছে। দিন কয়েক আগেই চন্দ্রবোড়া ছোবল মেরেছিল নিরঞ্জনবাবুকে। কিন্তু কোনও রকমে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। কিন্তু তাতেও উৎসাহে কমতি নেই তাঁর।
বললেন, “ছেলেবেলায় দেখতাম গ্রামের লোক সাপ দেখলেই মেরে ফেলত। খুব কষ্ট পেতাম। আর আজ তো বিভিন্ন প্রজাতির সাপ প্রায় লুপ্ত হতে বসেছে। তাই সাপ বাঁচিয়ে বন দফতরের হাতে তুলে দিই। তা ছাড়া সাপের বিষ থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধও তৈরি হয়। তার জন্যও তো সাপ বাঁচানো জরুরি।”
আস্তে আস্তে বয়স বাড়ছে নিরঞ্জনবাবুর। তবে কয়েক জন ছাত্রকে সাপ ধরা শিখিয়েছেন তিনি। তাঁদের কেউ এখন কেউটে, কালাচ, চন্দ্রবোড়া ধরতে ভয় পান না বলে জানালেন প্রৌঢ়। এ ভাবেই যদি সাপ বাঁচানো যায়, আশা নিরঞ্জনের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.