রাজ্যসভায় বিজেপির প্যাঁচে ফাঁপরে কংগ্রেস
লোকসভায় সমর্থন জানিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু রাজ্যসভায় আপত্তি জানিয়ে সংশোধন দাবি করে বেঁকে বসল তারা। ফলে শেষ ধাপে পৌঁছেও আজ থমকে গেল অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন বিল পাশ। রাজ্যসভায় বিলটি পেশ এবং তা নিয়ে আলোচনা আগামিকালের জন্য পিছিয়ে দিতে হল কেন্দ্রকে। আর তেলঙ্গানা গঠন নিয়ে এই দোলাচলের মধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন কিরণকুমার রেড্ডি। তিনি ইস্তফা দেওয়ায় অন্ধ্রপ্রদেশে আপাতত রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ ভোটের আগে সীমান্ধ্রের কোনও নেতা মুখ্যমন্ত্রী হতে রাজি নন।
রাজ্যসভায় বিজেপি বিলে সংশোধনী দাবি করায় তেলঙ্গানার আকাশে আংশিক মেঘ দেখা দিয়েছে। কারণ, সংসদের এই অধিবেশনের আর দু’দিন বাকি রয়েছে। তার মধ্যে রাজ্যসভায় বিলটি পাশ না হলে দ্বিতীয় ইউপিএ জমানাতেও অধরা থেকে যাবে ২৯তম রাজ্য গঠন।
বিজেপি-র মূল দাবি দু’টি। এক, বিলে সংশোধন এনে সীমান্ধ্রের জন্য প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দুই, সংবিধান সংশোধন করেই রাজ্যপালের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। কিন্তু মুশকিল হল, বিলে সংশোধন প্রস্তাব এনে রাজ্যসভায় পাশ করাতে গেলে, তা লোকসভাতেও ফের পাশ করাতে হবে। অথচ অধিবেশনের শেষ দিনে তা করা বেশ কঠিন। এ দিকে, মরিচ স্প্রে ছেটানো ও তাণ্ডবের জন্য লোকসভায় সীমান্ধ্রের যে ১৪ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল, তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে কাল। ফলে শুক্রবার লোকসভায় তাঁরা ফের প্রবেশাধিকার পাবেন।
প্যাঁচে পড়ে আজ বিজেপি-র সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে বসেন কেন্দ্রের মন্ত্রীরা। দুপুরে সংসদে অরুণ জেটলি ও বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দে। সন্ধ্যায় তাঁরা প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিজেপি সূত্রের খবর, বিলে সংশোধন প্রস্তাব নিয়ে অরুণ জেটলি বিশেষ পীড়াপীড়ি করার পক্ষপাতী নন। কারণ, জেটলি ও নরেন্দ্র মোদীর মতো বিজেপি নেতারা চান বিলটি এ যাত্রায় পাশ হয়ে যাক। যাতে বিজেপি ক্ষমতায় এলে এই ঝঞ্ঝাট পোহাতে না হয়। কিন্তু বেঁকে বসেছেন দলের প্রাক্তন সভাপতি তথা রাজ্যসভা সদস্য বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তাঁর দাবি, বিলে সংশোধন করে অন্তত সীমান্ধ্রের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করতেই হবে। বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, বেঙ্কাইয়ার এই অবস্থানে মদত রয়েছে লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজদের। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতৃত্ব বিজেপি-কে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, সীমান্ধ্রের জন্য প্যাকেজের কথা কাল রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে দেবেন। কিন্তু বিলে তা আর অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়। তাতে খামোখা জটিলতা বাড়বে।
শুধু বিজেপি-কে মৌখিক আশ্বাসই নয়, আজ সন্ধ্যায় কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফে বলা হয়, সীমান্ধ্রকে যাতে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়, সে জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আর্জি জানান সনিয়া গাঁধী। ফলে সীমান্ধ্র বহু কর ছাড় পাবে। কংগ্রেসের তরফে এই বার্তা দেওয়ার কারণ দুটি। এক, সীমান্ধ্রের মানুষের ক্ষোভ নিরসন করা। আর দুই, বিজেপি যাতে দাবি করতে না পারে তাদের চাপে প্যাকেজ ঘোষণা করল কংগ্রেস।
কিন্তু বিজেপি পরিষ্কার আশ্বাস দেয়নি যে এর পরেও তারা কাল রাজ্যসভায় বিল পাশে সাহায্য করবে। চাপ বাড়াতে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথ বলেন, “বিজেপি-র দ্বিচারিতা প্রকাশ পাচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্ব চান না যে বিল পাশ হোক।”
তেলঙ্গানা বিল পাশ না হলেও রাজ্যসভা এ দিন সাক্ষী থাকল নাটকের। ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়েনের সেক্রেটারি জেনারেল সামসের কে শেরিফকে নির্দেশ দেন লোকসভায় তেলঙ্গানা বিল পাশ হয়েছে, এই বার্তাটি পড়ে শোনানোর জন্য। কিন্তু শেরিফ পড়া শুরু করতেই তাঁর কাছ থেকে কাগজটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তেলঙ্গানা-বিরোধী তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) সাংসদ সিএম রমেশ। শুরু হয়ে যায় ধাক্কাধাক্কি। নিরপত্তারক্ষীরা ছুটে যান শেরিফকে সাহায্যের জন্য। ক্ষুব্ধ কুরিয়েন রমেশকে ধমক দিয়ে বলেন, “আপনার ব্যবহার খুবই দুর্ভাগ্যজনক। রাজ্যসভায় আপনি কাউকে এ ভাবে আক্রমণ করতে পারেন না। আপনি হাত সরান।” এর পরেই সভা মুলতুবি করে দেন তিনি। দু’টোয় ফের অধিবেশন বসলে অবশ্য ক্ষমা চেয়ে নেন রমেশ।
এ দিকে প্রথম থেকেই রাজ্যভাগের বিরুদ্ধে ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কিরণকুমার রেড্ডি। এ দিন ইস্তফার পরেই ‘অগণতান্ত্রিক ভাবে’ রাজ্যভাগের জন্য সনিয়া গাঁধীকে দুষেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “নিছক রাজনীতির জন্য এ ভাবে রাজ্য ভাগ করা উচিত নয়।” তবে নতুন দল গঠনের কথা ঘোষণা করেননি কিরণ। ইঙ্গিত দিয়েছেন, শীঘ্রই তিনি তা করবেন। রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হয় কি না, তারই অপেক্ষায় রয়েছেন কিরণ। তার পর কংগ্রেসের ইশারাতেই তিনি দল গঠন করবেন। এবং কংগ্রেসের সীমান্ধ্রের গরিষ্ঠসংখ্যক সাংসদ ও বিধায়ককে নিয়ে সেখানে তৃতীয় শক্তি হিসেবে অবতীর্ণ হবেন। রাজ্যভাগের বিরোধিতা করে সীমান্ধ্রের সব আবেগ নিজের পক্ষে টানার স্বপ্ন দেখছিলেন জগন্মোহন রেড্ডি। কিরণ নতুন দল গড়লে জগনও কিছুটা ধাক্কা খাবেন।
বিপরীতে তেলঙ্গানার অঙ্কটা অন্য। রাজ্যসভায় বিলটি পাশের অপেক্ষায় এখন উদ্বেগের প্রহর কাটাচ্ছেন সেখানকার কংগ্রেস ও তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির (টিআরএস) নেতারা। তেলঙ্গানার কংগ্রেস নেতা মধুযাক্ষী গৌড় আজ বলেন, “এর পরেও বিজেপি বাধা দিলে তা দুর্ভাগ্যজনক। তবে বিলটি পাশ হয়ে গেলে আশা করছি টিআরএস নেতা চন্দ্রশেখর রাও তাঁর দলকে কংগ্রেসের সঙ্গে মিশিয়ে দেবেন।” আবার এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে চন্দ্রশেখর বলেন, “দাঁড়ান, আগে রাজ্যসভায় বিলটা পাশ হতে দিন। বিল পাশ হলে নিশ্চয়ই কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে যাওয়ার কথা ভাবব।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.