|
|
|
|
লোকসভা ভোটে তেলঙ্গানা হাতিয়ার মমতার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১৯ ফেব্রুয়ারি |
কংগ্রেসের তেলঙ্গানা-ভাগের প্রক্রিয়াকে পাহাড়ের প্রিজমে দেখতে চাইছেন না তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপাতত লোকসভা ভোটের মুখে তেলঙ্গানা-বিলকে অস্ত্র করে জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে মরিয়া তৃণমূল নেত্রী। আজ দলীয় সূত্রে এ কথা জানা গিয়েছে।
দিল্লিতে পা দিয়েই কাল তেলঙ্গানা রাজ্য গঠন নিয়ে কংগ্রেস সরকারের ভূমিকাকে বেআইনি আখ্যা দিয়ে মমতা জানিয়েছিলেন, এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করা হবে। সেই অনুযায়ীই আজ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে গোটা ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন মুকুল রায় ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের সাংসদরা। মমতার কথায়, “কাল আমার দল তেলঙ্গানা ভাগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ ভারতের পক্ষে। কেন্দ্র যা আচরণ করছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। গোটা বিষয়টিই অনৈতিক।” দলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাওয়ারও ভাবনা-চিন্তা চলছে।
মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে দুর্নীতি সাম্প্রতিক অতীতে বহু অস্ত্রেই কংগ্রেস-বিরোধী রাজনীতি চালিয়ে এসেছেন মমতা। ভোট যত এগিয়ে আসছে, কংগ্রেস তথা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাঁর আন্দোলনও ততই তীব্র হয়ে উঠছে। সেই আন্দোলনে নবতম সংস্করণটি হল রাজ্যের সমর্থন ছাড়াই রাজ্য ভাগের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা। গোটা বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে নিজের কৌশলগত অবস্থান ঝালিয়ে নিতে চাইছেন নেত্রী। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিমল গুরুঙ্গের সঙ্গে তাঁর এই বিষয়ে অনেক আগেই কথা হয়ে গিয়েছে। গুরুঙ্গ তাঁকে জানিয়ে রেখেছেন যে, রাজ্যের সমর্থন ছাড়াই তেলঙ্গানা ভাগের ঘটনাকে সমর্থন করে রাজনৈতিক বিবৃতি তাঁরা দেবেন। কিন্তু এমন কোনও ধরনের পদক্ষেপ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা করবে না যাতে মমতা অস্বস্তিতে পড়েন।
মমতার বক্তব্য, কোনও রাজ্য ভাগ হবে কি হবে না, সাউথ ব্লক তা স্থির করবে না। রীতিমতো গায়ের জোরে বিলটি লোকসভায় পাশ করানো হয়েছে। মনে করিয়ে দেন, এর আগে ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড অথবা ছত্তীসগঢ় গঠনের সময়েও সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বিল পাশ হয়ে গিয়েছিল। কোনও ভোটাভুটি হয়নি। কিন্তু সেই বিভাজনগুলি নিয়ে রাজ্য স্তরে কোনও বিবাদ ছিল না। অন্ধ্রপ্রদেশ ভাঙার সঙ্গে তার কোনও তুলনা চলে না। অন্ধ্র ভাগের প্রতিবাদে আজ ইস্তফা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কিরণকুমার রেড্ডি। গত কালের পরে আজও তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, “কেন্দ্রের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্য থেকে কর আদায় করা, কথায়-কথায় সিবিআই লেলিয়ে দেওয়া, ধমকানো, রাজ্য সরকারের সমর্থন ছাড়াই এ ভাবে রাজ্য ভাঙার অর্থ দেশকে বেচে দেওয়া।” বিজেপি-ও লোকসভায় এই বিলটি পাশের ক্ষেত্রে সমর্থন জোগানোয় তাদেরও আক্রমণ করতে ছাড়েননি তৃণমূল নেতৃত্ব।
যে পদ্ধতিতে বিলটি লোকসভায় পাশ করানো হয়েছে, তা গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরার সামিল বলেই মন্তব্য করেছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ দুপুরে রাষ্ট্রপতিভবন থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, “আমরা রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছি, লোকসভা পরিচালনা করতে হলে যে নিয়মাবলি মানতে হয় তা আদৌ মানা হয়নি। গত কালের ঘটনা ভারতীয় গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরেছে।” মমতা যে ভাবে গোর্খাল্যান্ডের সমস্যা মিটিয়েছেন তার উল্লেখ করে সুদীপবাবু এ দিনও বলেন, “কেন্দ্রের উচিত ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে গোটা বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ নেওয়া।”
রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ফিরে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “১৯ সাংসদের দল তৃণমূল যখন ভোটাভুটি চাইছে, তখন আইন অনুযায়ী স্পিকার তা মানতে বাধ্য। কিন্তু তা না করে ধ্বনিভোটের মাধ্যমে নতুন রাজ্য গঠনের বিষয়টি সারা হল।” সৌগতবাবুর আরও অভিযোগ, “যে সংশোধনী প্রস্তাবগুলি আনা হয়েছিল তার উপরে আমি এবং সুদীপ বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সুষমা স্বরাজ এবং জয়পাল রেড্ডি ছাড়া কাউকে বলতে দেওয়া হয়নি।” |
|
|
|
|
|