অণ্ণার পরামর্শ নিয়েই দেশ জুড়ে প্রার্থী মমতার
ণ্ণা হজারেকে পাশে নিয়ে লোকসভা ভোটে সর্বভারতীয় স্তরে অভিযান আজ শুরু করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রবীণ গাঁধীবাদী নেতার সঙ্গে আলোচনা করে উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দিলেন তিনি। আর অণ্ণাও যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে মমতাকে তুলে ধরলেন তাঁর পছন্দের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে। বললেন, লোকসভা ভোটের আগে গোটা দেশ ঘুরে সমস্ত তৃণমূল প্রার্থীকে সমর্থন করবেন তিনি। তৃণমূল অন্তত ১০০টি আসন পেলেই মমতার নেতৃত্বে দেশে পরিবর্তন আসবে বলে তাঁর বিশ্বাস।
অণ্ণা আজ বলেন, “অনেকেই ভাবছেন কেন আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করছি। অনেকে উল্টোপাল্টাও বলছেন। আমার বক্তব্য, যে গাছে ফল ধরে, সেই গাছেই লোকে পাথর ছোড়ে! মমতা সমাজের এবং মানুষের উন্নতির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি তাই তাঁকেই সমর্থন করব।” অণ্ণার যুক্তি, তৃণমূল নেত্রী বলে নয়, তিনি সমর্থন করেন মানুষ মমতাকে। আজ আরও এক বার মমতার জীবনযাত্রার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিলাসবহুল জীবন কাটাতেই পারতেন মমতা। কিন্তু তিনি সরকারি গাড়ি নেন না, ছোট বাড়িতে থাকেন। এ ধরনের ত্যাগ ছাড়া দেশ ও সমাজ এগোতে পারে না।”
মমতাকে ‘আম আদমির নেত্রী’ হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে এক সময়ের রাজনৈতিক শিষ্যের সঙ্গে চূড়ান্ত বিচ্ছেদের কথা আজই সম্ভবত প্রথম বার প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন অণ্ণা। বলেছেন, অরবিন্দ কেজরীবালকে তাঁর সমর্থন করার আর কোনও প্রশ্ন ওঠে না। কেন এই সিদ্ধান্ত, তা-ও জানিয়েছেন। দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের প্রবীণ নেতা বলেছেন, “আমার ১৭ দফা দাবির কথা জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি লিখেছিলাম। একমাত্র দিদি উত্তর দিয়েছেন ও সেগুলির বাস্তবায়নে রাজি হয়েছেন। অরবিন্দ কেজরীবালকেও লিখেছিলাম। উত্তর পাইনি। সুতরাং তাঁকে সমর্থনের প্রশ্ন নেই।” তবে সমর্থন যেমন করবেন না, তেমন কেজরীবালের বিরোধিতাও তিনি করবেন না বলে জানিয়েছেন অণ্ণা।
যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে অণ্ণা হজারে ও
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: রাজেশ কুমার।
তবে অণ্ণা-কেজরীবাল বিরোধের বিষয়টি আজ ছিল নেহাতই অনুষঙ্গ। কাল তৃণমূলের দিল্লির দফতরে অণ্ণার হাজির হওয়া থেকে আজকের যৌথ সাংবাদিক বৈঠক, গোটা সময়টা জুড়ে রাজধানীতে ঘুরপাক খেয়েছে একটাই প্রশ্ন মমতা নিজে প্রধানমন্ত্রিত্বের বিষয়টি কী ভাবে দেখছেন?
তৃণমূল নেত্রী আজ বলেছেন, “কে প্রধানমন্ত্রী হবেন-না হবেন তা এখনই ঠিক করার সময় নয়। বিষয়টি আদৌ ‘প্রি-পেড’ নয়, ‘পোস্ট-পেড’! অর্থাৎ ভোটের ফলাফলের পরেই সব নির্ধারিত হবে।”
মমতার হিসেব অনুযায়ী, বিজেপি ১৫০টি এবং কংগ্রেস ৫০টির বেশি আসন পাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে সমস্ত দরজা খোলা রেখে গোটা দেশে তাঁর প্রার্থী ছড়িয়ে দেওয়াকে যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করছেন কেউ কেউ। মমতার অবশ্য সাফ কথা,“আমি কোনও কিছুর জন্যই লালায়িত নই। তৃণমূল স্তর থেকে আন্দোলন করে উঠে এসেছি। নিজেকে সাধারণ মানুষ হিসেবেই ভাবতে ভালবাসি। তবে এটা ঠিক, আমরা চাই কেন্দ্রে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে একটি সুস্থির সরকার আসুক। আজ এল আর কাল চলে গেল, এমন সরকার চাই না।”
আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে বর্তমান সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে সর্বভারতীয় বিকল্পের দিশা দিয়েছেন মমতা। তার চেহারা কী হবে তা এখনই স্পষ্ট করতে চাননি। তবে আসন্ন লোকসভা ভোটে তৃণমূল যে দেশ জুড়ে আরও ব্যাপক ভাবে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে, তা ভালই বুঝিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে বলেছেন, মহারাষ্ট্র, উত্তর ভারত এবং দক্ষিণ ভারতে ক’টি আসনে তৃণমূল প্রার্থী দেবে, কে কে দাঁড়াবেন তা অণ্ণার সঙ্গে আলোচনা করেই স্থির করা হবে। তাঁর কথায়, “ত্রিপুরা, অসম, মণিপুরে আমাদের উপস্থিতি রয়েছে। এই রাজ্যগুলিতে তো আমরা লড়বই। এ ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ ভারত এবং মহারাষ্ট্রে ভাল আসন পেলে অবশ্যই লড়ব। এ ব্যাপারে অণ্ণাজি আমাদের পরামর্শ দেবেন।” পরে একটি সাক্ষাৎকারে মমতা আরও নির্দিষ্ট করে বলেন, “মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ সর্বত্রই লড়ব আমরা।” ঘটনাচক্রে এ দিনই মমতার সঙ্গে দেখা করেন উত্তরপ্রদেশের রামপুরের দলহীন সাংসদ জয়া প্রদা। বর্তমান ঘটনাপ্রবাহের নিরিখে নেত্রী ও অভিনেত্রীর এই সাক্ষাৎ ঘিরেও কিছুটা জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজধানীর রাজনীতিতে। তাঁদের মধ্যে কী কথা হয়েছে, সে সম্পর্কে অবশ্য মুখ খোলেনি কোনও পক্ষই।
মমতা আজ জানিয়েছেন, জাতীয় রাজনীতিতে লড়াইয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট নীতি ভোটের আগে ঘোষণা করবে তৃণমূল। অণ্ণার ১৭ দফা কর্মসূচি সেখানে থাকবে (যদিও কয়েকটি প্রস্তাব নিয়ে অণ্ণার সঙ্গে আলোচনা বাকি রয়েছে বলেও জানান মমতা)। কেন্দ্রের সঙ্গে বর্তমান বিরোধের জায়গাগুলির উল্লেখ থাকবে। তৃণমূল নেত্রীর কথায়, “খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আমরা মানিনি। সেই কারণেই সরকার থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, তেলের দাম আগুন করে দেওয়া হয়েছে। মানুষ তথাকথিত বড় দলকে ছুড়ে ফেলে দিতে চাইছে। যাদের অর্থবল নেই কিন্তু গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা আছে, সমর্থন করতে চাইছে তাকেই।”
এর পাশাপাশি সর্বভারতীয় সংখ্যালঘু ভোটের কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে মমতাকে। দলের নেতা মুকুল রায় যোগাযোগ রাখছেন জামা মসজিদের শাহি ইমামের সঙ্গে। শাহি ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারি যে ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম কনফারেন্স’-এর আয়োজন করতে চলেছেন, সেখানে উল্লেখের জন্য একটি চিঠি পাঠিয়েছেন মমতা। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সংখ্যালঘুদের উন্নতিকল্পে কী কী কাজ করছে তা জানানো হয়েছে চিঠিতে।

বরাবরই সম্মান করেছি অণ্ণাকে, বললেন মমতা

১৯ ফেব্রুয়ারি
অণ্ণা হজারের প্রতি তাঁর কখনওই কোনও ব্যক্তিগত বিদ্বেষ ছিল না। বরং সমাজকর্মী নেতা হিসেবে বরাবরই অণ্ণাকে তিনি যথেষ্ট সম্মান করে এসেছেন বলে আজ জানালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক বার অণ্ণা উপস্থিত হওয়ার পরে একটি চ্যানেলের অনুষ্ঠান ছেড়ে তিনি চলে এসেছিলেন বলে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। আজ তার জবাব দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। বলেছেন, “কিছু মানুষ পরিকল্পিত ভাবে এই রটনা করেছেন। আসল ঘটনাটি আমি কখনওই বলিনি। আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি।” মমতা জানান, যে সন্ধ্যায় ওই অনুষ্ঠানটি ছিল, সে রাতে মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত ছিলেন তিনি। তাঁর মা ছিলেন গুরুতর অসুস্থ। পরের দিনই মায়ের জীবনাবসান হয়। মমতা বলেন, “মা আমার জীবনে সবচেয়ে বড় ব্যক্তি। তাঁর ওই অবস্থার মধ্যেও আমি ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম নেহাত কথা দিয়েছিলাম বলে। ওখান থেকে কলকাতা ফিরে যাই। মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে ছিলাম পুরো সময়টা।” মমতা জানিয়েছেন, ওই চ্যানেলের তরফ থেকে বলা হয়েছিল যে, অনুষ্ঠানে শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই উপস্থিত থাকবেন। তাই অণ্ণাকে দেখে কিছুটা বিস্মিতই হয়েছিলেন তিনি। তবে সে সব অতীত। মমতার কথায়, “আমি কখনও মহারাষ্ট্রে ওঁর গ্রামে গিয়ে দেখা করিনি ঠিকই, কিন্তু ওঁর কাজের সম্মান করি। আমাদের দলকে তিনি যে আশীর্বাদ করেছেন, সে জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। গোটা দেশে উনি আমাদের সঙ্গে প্রচার করবেন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.