খুলে গেল সীমান্তের দু’দিকে পেল্লায় গেট। দু’দেশের মানুষ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। বুকে কালো ব্যাজ, মুখে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...।’ ফুলে-ফুলে ছয়লাপ ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড।’
আগামী কাল, ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে পেট্রাপোল বা বেনাপোলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এই দৃশ্য আর দেখা যাবে না। এত দিন দু’দেশের সরকারি প্রতিনিধি ও মন্ত্রীরা পড়শি দেশে গিয়ে শহিদবেদিতে মালা দিতেন। সেই স্মারক বিনিময় এবং বক্তৃতা পর্বও বাতিল। ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’-এ যেখানে ভারতের মঞ্চ বাঁধা হত, বদলাচ্ছে সেই জায়গাও। বিএসএফ, শুল্ক দফতর এবং উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশকে এমনই নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
এর আগে টাকিতে বিজয়া দশমীর দিন ইছামতীর বুকে দু’দেশের বিসর্জন বন্ধ করেছে প্রশাসন। এ বার একুশের মেলামেশাও বন্ধ হল। কারণ মূলত নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়। এক দিকে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতা, অন্য দিকে ভারতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচন। বেড়ে গিয়েছে সোনা পাচার। পেট্রাপোল শুল্ক দফতরের ডেপুটি কমিশনার শুভেন দাশগুপ্ত বলেন, “নিরাপত্তার কারণেই মূলত এই সিদ্ধান্ত।” জেলার অতিরিক্ত এসপি ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “এ বার বিশেষ সতকর্তাও থাকবে।” |
একুশের প্রস্তুতি। ঢাকায় ভাষা শহিদ স্মারকে ২১ ফেব্রুয়ারির
অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। বুধবার বাপি রায়চৌধুরীর তোলা ছবি। |
জনসাধারণের জন্য সীমান্তের গেট খোলা হবে না, এই সিদ্ধান্ত হওয়ার পরেই দু’দেশের সরকারি প্রতিনিধিরা বিএসএফ এবং প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁদের প্রস্তাব ছিল, শুধু মন্ত্রী ও সরকারি প্রতিনিধিদের কিছুক্ষণের জন্য পড়শি দেশে যেতে দেওয়া হোক। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়।
এক সময়ে বনগাঁর কিছু সংস্কৃতি কর্মী ‘একুশে উদ্যাপন কমিটি’ গড়ে অনুষ্ঠান করা শুরু করেছিলেন। তখন থেকেই গেট খুলে দেওয়ার প্রথা চালু হয়। পরে তাঁদের সরিয়ে সিপিএম সাংসদ অমিতাভ নন্দীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেয় ‘গঙ্গা-পদ্মা মৈত্রী সমিতি’। রাজ্যে পালাবদলের পরে আবার নিয়ন্ত্রণ যায় তৃণমূল প্রভাবিত ‘দুই বাংলা মৈত্রী সমিতি’র হাতে। তাদের অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমরা এ বার বাংলাদেশে ঢুকছি না। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় প্রশাসনিক ভাবে বারণ করা হয়েছে। এ পারে আমরা, ও পারে বাংলাদেশ অনুষ্ঠান করবে।” শুভেনবাবু বলেন, “দু’পাশেই ব্যারিকেড হচ্ছে। তবে এমন ভাবেই ব্যারিকেড করে দেওয়া হবে, যাতে এক পার থেকে অন্য পারের অনুষ্ঠান দেখা যায়।” |