|
|
|
|
চালকলের টাকা লুঠের খবর, পাকড়াও কিশোর
নিজস্ব সংবাদদাতা • বর্ধমান |
বর্ধমানের চাল-গদি থেকে লক্ষ-লক্ষ টাকা নিয়ে চালকলের উদ্দেশে রওনা দেওয়া ব্যবসায়ী বা কর্মীদের খবর দুষ্কৃতীদের জানিয়ে দিত একটি চক্র। খবর আসতেই পথ আটকে টাকা ছিনতাই করত রায়না ও খণ্ডঘোষের কিছু দাগি দুষ্কৃতী।
এমনই এক দুষ্কৃতী চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে রায়নার খালের পুল এলাকা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র সমেত এক জনকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। একই কারণে শনিবার দুই কিশোরকে ধরেছিল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে ধৃত কিশোরের নাম মিলন দাস ওরফে আবির। বাড়ি বর্ধমানের তেলিপুকুরে। পুলিশের দাবি, সে-ই বর্ধমান থেকে সালুনের চালকলে এক ব্যবসায়ীর যাওয়ার খবর দুষ্কৃতীদের দিয়েছিল। বুধবার সিজেএম আদালতে তোলা হলে তাকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান থেকে চালকলে ফেরবার সময়ে পথ আটকে এক চালকল মালিকের টাকা ছিনতাই করবার চেষ্টা করে দু’জন। শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায় নামে ওই মালিকের কল খণ্ডঘোষের সালুনে। বর্ধমান-আরামবাগ রোডে রায়নার সগরাই মোড়ে ঘটনাটি ঘটে। প্রাক্তন সেনা কর্মী শুভজিৎবাবু বাধা দিলে তাঁকে লক্ষ করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালানো হয়। বুকে, পেটে, পায়ে গুলি লাগে। আপাতত তিনি বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি।
আহত শুভজিৎবাবু পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময়ে এক জন ছিনতাইকারী পড়ে গিয়েছিল। নিজের ছোড়া গুলি তার নিজেরই পায়ে লাগে। ছিনতাইকারীর চেহারার বর্ণনা শুনে পুলিশ শেখ নজরুল নামে এক কিশোরকে আটক করে। তার পায়ে দেখা যায় টাটকা ক্ষত। চিকিৎসককে দিয়ে ক্ষত পরীক্ষা করিয়ে পুলিশ নিঃসন্দেহ হয়, তা গুলিরই। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে নজরুল চালকল মালিককে লক্ষ করে পাঁচ রাউন্ড গুলি চালানোর কথা কবুল করে। তার সঙ্গে মোটরবাইকে ছিল স্থানীয় এক দুষ্কৃতী। শুভজিৎবাবুকে আটকানোর জন্য কুতব শেখ নামে এক কিশোর আগে থেকে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ছিল।
ওই দুই কিশোরকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, বর্ধমানে ছড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকটি চালগদিতে অন্তত সাত-আট জন কর্মী রয়েছে, যারা কখন কোথায় টাকা যাচ্ছে, তার খবর দুষ্কৃতীদের দিয়ে কমিশন পায়। যদিও ১৩ তারিখ সালুনের উদ্দেশে রওনা হওয়া শুভজিৎবাবু কাছে কোনও টাকা ছিল না। টাকা না পেয়ে দুষ্কৃতীদের নিজেদের মধ্যে গোলমালও শুরু হয়ে গিয়েছিল। পুলিশের দাবি, ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হওয়া ন নিয়ে হইচই হওয়ায় এলাকা ‘ঠান্ডা’ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল মিলন। ছিনতাই হওয়া টাকার ভাগ না মেলায় শেষমেশ সে সশস্ত্র অবস্থায় খালের পুল এলাকায় যায়। কিন্তু গোপন সূত্রে আগাম খবর পেয়ে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে।
এসডিপিও (বর্ধমান) অম্লানকুসুম ঘোষের দাবি, “ধৃতকে জেরা করে আমরা অন্তত সাত-আট জন চালগদির কর্মচারির নাম-ধাম জানতে পারব, যারা এত দিন টাকা নিয়ে রায়না বা খণ্ডঘোষে যাওয়া ব্যবসায়ীদের খবর দুষ্কৃতীদের জানিয়েছে।” পুলিশের হিসেবে, গত বছর থেকে এই বছরের গোড়া পর্যন্ত বর্ধমান, রায়না ও খণ্ডঘোষ থানা এলাকায় অন্তত সাত-আট জন চালকল মালিক বা কর্মীর থেকে টাকা ছিনতাই হয়েছে। আরও সাত-আটটি ঘটনায় দুষ্কৃতীরা ছিনতাই করার চেষ্টা চালিয়েও সফল হয়নি। এসডিপিও বলেন, “আমরা চালকল মালিকদের সাবধান হতে পারামর্শ দিয়েছি। শীঘ্রই বর্ধমানের সব চালকল মালিকদের নিয়ে সভা ডাকবে পুলিশ। সেখানে তাঁদের মোটরবাইকে করে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|