|
|
|
|
পণ্য ওঠানামার সমস্যা মেটাতে নতুন রেল ইয়ার্ড
সুশান্ত বণিক • আসানসোল |
শিল্প সংস্থার প্রয়োজনীয় সামগ্রী ওঠানামার ফলে এলাকায় দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছিলেন রেল ইয়ার্ডের আশপাশের বাসিন্দারা। আদালত দূষণ রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরে সব রকম পণ্য ওঠানামা নিয়ে সমস্যায় পড়েছিল রেল। মুশকিলে পড়েছিল নানা শিল্প সংস্থাও। শেষে শহরে আরও একটি রেল ইয়ার্ড তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। রেলের এই উদ্যোগে খুশি শিল্পাঞ্চলের বণিক মহল।
আসানসোলে বর্তমানে যে রেল ইয়ার্ডটি রয়েছে, সেটি নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শহরের অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত আপকার গার্ডেন অঞ্চল লাগোয়া এই রেল ইয়ার্ডটি গোটা এলাকায় দূষণ ছড়ায় বলে তাঁদের দাবি। খাদ্যশস্যের পাশাপাশি এই ইয়ার্ডে লোহা-আকর, সিমেন্ট, এমনকী কয়লাও তোলানামা হয়। এই সব সামগ্রী লরিতে চাপিয়ে বিভিন্ন প্রান্তে পরিবহণ করা হয়। এ সবের কারণে এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ছড়ায়, ঘরের মেঝেয় প্রতি দিন কয়েক ইঞ্চি পুরু ধুলোর আস্তরণ পড়ে। দূষনের ঠেলায় অসুস্থ হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। এই অভিযোগে বাসিন্দারা এলাকায় একাধিক বার বিক্ষোভ-অবরোধ করেছেন। রেল কর্তৃপক্ষের কাছেও দরবার করেছেন। শেষে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁরা। আদালত রেল কর্তৃপক্ষকে দূষণ রোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। |
|
জোরকদমে চলছে ইয়ার্ড তৈরির কাজ। ছবিটি তুলেছেন শৈলেন সরকার। |
কিন্তু এই নির্দেশ পালন করতে গিয়ে রেলকে খানিকটা সমস্যার মুখে পড়তে হয়। কারণ, দূষণ রোধ করতে হলে এই ইয়ার্ডে লোহা-আকর, সিমেন্ট, কয়লা, ক্লিঙ্কার ইত্যাদি পণ্য তোলানামা বন্ধ করতে হবে। যা সম্ভব নয়। আবার বিকল্প পথ খুঁজতে গিয়ে এই সব পণ্য অন্য ইয়ার্ডে তোলানামার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেওয়া হলে শিল্পোদ্যোগীরা রাজি হননি। কারণ, সেক্ষেত্রে তাঁদের পণ্য আমদানি-রফতানির খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছিল। এই সব বিষয় বিবেচনা করে রেল কর্তৃপক্ষ পৃথক একটি রেল ইয়ার্ড তৈরির পরিকল্পনা করেন। অবশেষে সেটি আসানসোলের উপকণ্ঠে ধেমোমেন লাগোয়া এলাকায় তৈরি করা হচ্ছে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, নতূন অর্থবর্ষের শুরুতেই এই ইয়ার্ডটি চালু হবে। আসানসোলের ডিআরএম সঞ্জয় সিংহ গেহেলট বলেন, “পুরোনো ইয়ার্ডে শুধু মাত্র খাদ্যশস্য ও দূষণ ছড়ায় না, এ রকম পণ্য তোলানামা হবে। নতুনটিতে কয়লা, ইস্পাত ও অন্য শিল্প সহায়ক সামগ্রী তোলানামা হবে।’’ তিনি আরও জানান, এই অঞ্চলে ফ্রেট করিডর তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। তাতে দক্ষিণবঙ্গের অর্থনীতি ফুলেফেঁপে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। তার সঙ্গে এই নতুন ইয়ার্ডটি তৈরি হয়ে গেলে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যের শ্রীবৃদ্ধি হবে।
রেলের এই সিদ্ধান্তে খুশি আপকার গার্ডেন এলাকার বাসিন্দারা। দূষণ থেকে পাকাপাকি মুক্তি মিলবে বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের সঙ্গে খুশি এলাকার উদ্যোগপতিরাও। আসানসোল বণিকসভার সভাপতি সুব্রত দত্ত বলেন, “এই এলাকায় ফ্রেট করিডর তৈরি করছেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। এর ফলে শিল্পাঞ্চলে পণ্য আমদানি-রফতানির পরিমাণ বাড়বে। সেক্ষেত্রে একটি অতিরিক্ত রেল ইয়ার্ডের নির্মাণ ব্যবসার ক্ষেত্রে বাড়তি লাভ।” ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর কর্ণধার রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান বলেন, “দূষণ রোধ করতে গিয়ে এলাকার সিমেন্ট ও কয়লা সহায়ক শিল্পগুলি মার খাচ্ছিল। নতুন ইয়ার্ডটি তৈরি হওয়ায় এখন কোনও রকম সমস্যা ছাড়াই পণ্য আমদানি-রফতানি করা যাবে।”
|
|
|
|
|
|