সাবেক নাম বাঘা যতীন পার্ক। কিন্তু, শহরের তরুণ প্রজন্মের একাংশ সংক্ষেপে ‘বিজেপি’ বলে থাকেন। কেউ কেউ আবার নতুন নামকরণ করেছেন ‘লার্ভাস পার্ক’। সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি তো বটেই দিনভর তরুণ-তরুণীর ভিড়ে ঠাসা থাকে পার্ক। জনসভা, ক্রিকেট-ফুটবল প্রতিযোগিতা, পুজো, ডগ শো, গাড়ি প্রদর্শনী, ধর্না থেকে শুরু করে গাড়ি শেখার প্রশিক্ষণ কী হয় না সেখানে। আর গোটা মাঠকে জুড়ে চলছে ফাস্টফুডের রকমারি দোকান। তাতে আশপাশের বাসিন্দার প্রাণ কার্যত ওষ্ঠাগত। পার্কের মাঠেরও বেহালর দশা। সেই পার্কের হাল ফেরাতে আসরে নামার কথা ঘোষণা করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বর্তমানে শিলিগুড়ি পুরসভার অধীন থাকলেও পার্কে হাল ফেরানোর দায়িত্ব নেয় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। এ সপ্তাহ থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর ৫৫ লক্ষ টাকায় প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। আপাতত পাঁচিলের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ কাজের আনুষ্ঠানিক শিলান্যাসও হবে। |
বাঘাযতীন পার্ক সংস্কারের কাজ শুরু। ছবি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
|
মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “শহরের গর্ব বাঘা যতীন পার্ককে আমরা ঢেলে সাজছি। শিলিগুড়ি পুরসভার কাছে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। প্রথমে মাঠকে ঘিরে সকাল, সন্ধায় হাঁটার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভিতরে দিনভর বসে আড্ডা, গল্পগুজব, গাড়ি চালানো এ সব বন্ধ করা হবে। পরের দফায় মাঠের সংস্কার ও রবীন্দ্র মঞ্চের সংস্কার হবে। দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” এই মাঠটি শহরের ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে সীমানা বরাবর রয়েছে। আর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মন্ত্রী গৌতমবাবু।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রথম দফায় ৯ ফুট উচ্চতার পাকা ও লোহার নকশা করা গ্রিলের পাঁচিল দিয়ে গোটা মাঠকে ঘিরে ফেলা হবে। থাকবে তিন মিটার পরপর পিলার এবং গ্রানাইটের আধুনিক কারুকার্য। তার পরে পার্কের দেওয়ালের বাইরে তৈরি হবে ‘জর্গাস ট্র্যাক’। হালকা দৌড়ের পাশাপাশি সকাল বিকাল বাসিন্দারা হাঁটতে পারবেন। পার্কে সকালে ও সন্ধ্যায় দুঘণ্টা করে বাজবে মিউজিক। হবে গ্রিন টয়লেটও। আগামী ৩ মাসের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন গৌতমবাবু। এর পরে পর্যায়ে গোটা মাঠে নতুন করে ঘাস, ফুলের বাগান, সুসজ্জিত আলো, এবং নানা মূর্তি বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঠিক করা হবে মাঠের এক কোণে থাকা রবীন্দ্রমঞ্চের সংস্কার করা হবে। তবে রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক সভা বা সমাবেশের জন্য আগের মতই শর্ত সাপেক্ষে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি মিলবে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানান, আগামী দিনেও মাঠ ব্যবহারের অনুমতি মিলবে। কিন্তু তাতে পরিচ্ছন্নতা, মাইকের সীমাবদ্ধ ব্যবহারের মত শর্ত থাকবে। পুরসভাকে বিষয়গুলি জানিয়ে দেওয়া হবে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের এই উদ্যোগে খুশি এলাকার বাসিন্দারা। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা সুজিত বসু বলেন, “এলাকার আইনশৃঙ্খলা এখন আগের থেকে অনেকটা ভাল। তবে মাঠে কিছু আপত্তিকর কাজকর্ম হয়। সেটা বন্ধ করা দরকার। মাঠটি সংস্কার হলে খুব ভাল হবে।” এলাকার আরেক দীর্ঘদিনের বাসিন্দা গীতাংশু কর বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর এই উদ্যোগে আমরা খুশি। তবে পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার। আর বাঘা যতীন পার্কে অনিয়ন্ত্রিত মাইক ব্যবহার বন্ধ করা ভীষণ জরুরি।”
|