কুয়াশা ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই রবিবার দুপুরে টাইগার হিলে ঘোরাফেরা করছিলেন মাত্র জনা কয়েক পর্যটক। হঠাৎই বৃষ্টির ফোঁটার সঙ্গে তুলোর মতো দানা দানা পড়তে দেখে, আনন্দে চিৎকার করে ওঠেন কয়েক জন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই টাইগার হিলে তুষারপাতের খবর ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে জোড়বাংলো থেকে চলে আসেন স্থানীয়রাও। নিরাশ হননি তারাও। টানা দু’ঘণ্টা ধরে তুষারপাত হয় দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে টাইগার হিলে। প্রায় আড়াই ফুট পুরু তুষার স্তর জমে যায় অন্তত আড়াই হাজার মিটার উঁচু টাইগার হিলে। কচিকাচাদের মতো বড়দেরও দলা পাকানো বরফকুচি ছুঁড়ে খুনসুটি করতে দেখা যায় এ দিন দুপুরে। |
তিন দিনের মাথায় ফের তুষারপাত হল দার্জিলিঙে। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটে পর্যন্ত তুষারপাতে, সাদা বরফকুচিতে ঢেকে যায় টাইগার হিল। তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের নিচে। তুষারপাতের খবর পেয়েই, দার্জিলিঙে থাকা পর্যটকদের গন্তব্য হয় টাইগার হিল। এর আগে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি সান্দাকফুতে তুষারপাত হয়েছিল। প্রায় ১ ফুট পুরু তুষার জমে গিয়েছিল সান্দাকফু-র রাস্তায়। তার পরে ফের এই দিনের তুষারপাত পর্যটকদের যেমন রোমাঞ্চ জুগিয়েছে, তেমনিই দার্জিলিং শহরেও তুষারপাতের আশা জাগিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে।
শেষ বার দার্জিলিং শহরে তুষার পাত হয়েছিল ২০০৮ সালের ২৫ জানুয়ারি। তার চারবছর পরে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে টাইগার হিলে তুষারপাত হয়। চলতি মরসুমে গত ১৩-১৪ ডিসেম্বর এবং ১১ জানুয়ারি টাইগার হিলে সামান্য পরিমাণে হলেও তুষারপাত হয়। রবিবারের তুষারপাতের পরে দার্জিলিং শহরের তাপমাত্রা কমতে থাকে। গত কয়েকদিন ধরেই দার্জিলিঙের তাপমাত্রা ৩ থেকে ৬ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছিল। এ দিনও শহরের তাপমাত্রা ছিল ৪ ডিগ্রির কাছাকাছি। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণেই এই তুষারপাত। দার্জিলিঙে থাকা এক পর্যটকের কথায়, “শীতের এই সময়টা পর্যটকদের ভিড় কম থাকে বলে প্রতিবারই দার্জিলিঙে আসি। |
|
|
বৃষ্টিভেজা শিলিগুড়ি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
বৃষ্টিভেজা বালুরঘাট। ছবি:অমিত মোহান্ত। |
|
কিন্তু কোনও বারই তুষার-পাত দেখার সৌভাগ্য হয়নি। রবিবার সান্দাকফুতে তুষারপাতের কথা শুনেই, দার্জিলিং থেকে গাড়ি ভাড়া করে টাইগার হিলে চলে যাই। রাস্তায় পড়ে থাকা তুষারকুচি দেখেই মন ভরে গিয়েছে।” পর্যটকদের সঙ্গে বেজায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দারাও। আড়াই বছর ধরে দার্জিলিঙে বসবাস করেন জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক কল্যাণ ঘোষ। তিনি বলেন, “বরফ পড়ছে জানতে পেরেই স্ত্রীকে নিয়ে টাইগার হিলে চলে যাই। তারপরে যা দেখলাম, তা বলে বোঝানো যাবে না। প্রচুর ছবি তুলে রেখেছি।”
পাহাড়ে তুষারপাত হওয়ায় পর্যটক মাতোয়ারা হলেও, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণে এ দিন সকাল থেকে কখনও ঝিরঝিরি কখনও নাগাড়ে বৃষ্টির জেরে উত্তরবঙ্গ জুড়েই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। গত দু’দিনের মতো এ দিনও শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে আসে। তাপমাত্রা কম থাকার সঙ্গেই দিনভর বৃষ্টি জলপাইগুড়ি শিলিগুড়িদুই শহরের সিংহ ভাগ বাসিন্দাদের এই দিন কার্যত ঘরবন্দি করে রেখেছিল। এ দিন সকাল থেকেই আকাশের মুখ ছিল ভার। সকাল ১১টার পর থেকে শুরু হয় টানা বৃষ্টি। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। উত্তর সিকিমেও তুষারপাত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে এ দিন সিকিমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ ডিগ্রি। দফতরের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণে তাপমাত্রা কমেছে। সে কারণেই তুষারপাত এবং বৃষ্টি চলছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা এ অবস্থা চলবে।”
এ দিন সকালে কোচবিহারের আকাশে সূর্যের দেখা মিললেও বেলা বাড়ার পর থেকেই শুরু হয় কনকনে উত্তুরে হাওয়ার সঙ্গে টানা বৃষ্টি। অন্য রবিবার ছুটির দিনে সব্জি ও মাছ বাজারে ভিড় হলেও এ দিন তেমন ভিড় ছিল না। সন্ধে গড়ানোর আগেই শহরের নানা ব্যস্ততম এলাকা সুনসান হয়ে যায়। শনিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত প্রায় ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে রায়গঞ্জে। এ দিন মোহনবাটি হাইস্কুলে আবহাওয়া বিভাগ আধিকারিক বিশ্বজিৎ রায় বলেছেন, “গত শুক্রবার থেকে উত্তর পশ্চিম দিক থেকে ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করায় ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। আজ, সোমবার পর্যন্ত পরিস্থিতি একই রকম থাকতে পারে।” এ দিন দিনভর বৃষ্টি হয়েছে মালদহ জেলাতেও। |