বাঙুর যদি পারে, তা হলে অন্যরা পারবে না কেন? দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা হাসপাতাল এম আর বাঙুর হাসপাতালকে ‘মডেল’ করে রাজ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব মেটানোর পথ বাতলাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঠিত স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটি। কমিটির সদস্যদের বক্তব্য, ডাক্তার নেই বলে হা-হুতাশ না করে বিকল্প পথের কথা ভাবতে হবে। কবে রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা বাড়বে, কবে সেখান থেকে পাশ করে নতুন বিশেষজ্ঞেরা জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়বেন, সে জন্য অপেক্ষা না করে ‘শিক্ষানবিশ’ বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগানোর ব্যাপারে পথ দেখাচ্ছে বাঙুর হাসপাতাল। তাই ‘বাঙুর মডেল’ই রাজ্যে আদর্শ হয়ে উঠুক বলে স্বাস্থ্য দফতরকে সুপারিশ করেছে তারা।
বিশেষজ্ঞ কমিটির বক্তব্য, স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল লক্ষ্যই ছিল, পরিকাঠামোর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা। এ ক্ষেত্রে সেটাই করা হচ্ছে। সাধারণ জেলা হাসপাতাল হিসেবে সর্বদা কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে রোগী রেফার করে দায় না এড়িয়ে স্বনির্ভর হচ্ছে বাঙুর হাসপাতাল।
ঠিক কী করছে ওই হাসপাতাল? বাঙুরে স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠ্যক্রম হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ে ডিএনবি পড়ানো হয়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন ‘ন্যাশনাল বোর্ড অব এগজামিনেশনস্’-এর অন্তর্ভুক্ত হল ডিপ্লোমেট ইন ন্যাশনাল বোর্ড বা সংক্ষেপে ডিএনবি। গোটা দেশ জুড়েই এই স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম স্বীকৃত। বাঙুর হাসপাতালে এই পাঠ্যক্রমের জন্য কয়েক জন শিক্ষক-চিকিৎসকও রয়েছেন। যাঁরা বাঙুরে ডিএনবি পড়ছেন, সেই পড়ুয়ারাই তাঁদের ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন বিভাগে রোগী দেখছেন। হাতেকলমে তাঁদের কাজ শিখিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষক-চিকিৎসকেরা। স্নাতকোত্তর স্তরের ওই চিকিৎসকদের সহায়তা পেয়ে বাঙুরের পরিষেবা অনেকটাই উন্নত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
স্নাতকোত্তর স্তরে পঠনপাঠনের পরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসের অঙ্গ হিসেবে মেডিক্যাল কলেজগুলিতেই কাজে যোগ দেন বিশেষজ্ঞেরা। ফলে জেলা হাসপাতালগুলির বরাতে খুব বেশি শিকে ছেঁড়ে না। সেকেন্ডারি কেয়ার হাসপাতাল হয়েও এম আর বাঙুর হাসপাতালে বিভিন্ন বিষয়ে ডিএনবি কোর্স পড়ানো শুরু হয়েছে। এই কোর্সগুলি পড়ানোর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদেরই নিয়োগ করতে হয়েছে হাসপাতালে। ওই ডিএনবি কোর্সের পড়ুয়ারাই বিভিন্ন বিভাগে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাজে সহায়তা করছেন।
বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সুব্রত মৈত্রের প্রস্তাব, এম আর বাঙুর হাসপাতাল যদি পারে, তা হলে অন্যান্য জেলা হাসপাতালগুলিতেই বা এই পন্থা অনুসরণ করা হবে না কেন?
কিছু জেলা হাসপাতালকে বেছে নিয়ে সেখানে ডিএনবি কোর্স চালু করার সুপারিশ করেছে কমিটি। সুব্রতবাবুর বক্তব্য, ডিএনবি কোর্স চালু করতে পরিকাঠামো নির্মাণ দফতরের কিছু বাড়তি অর্থ ব্যয় হবে। কিন্তু তার পরিবর্তে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব অনেকটাই মিটবে।
বাঙুরের সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ২০০৮ সাল থেকে তাঁদের হাসপাতালে ওই পাঠ্যক্রম চালু রয়েছে। তাঁর কথায়, “চারটি বিষয়ে দু’টি করে আসন। দু’বছরের কোর্স। অর্থাৎ প্রতি বছর আমরা আট জন করে শিক্ষানবিশ বিশেষজ্ঞকে পাচ্ছি, যাঁরা সিনিয়রদের সঙ্গে রোগী দেখার কাজে সাহায্য করছেন। সময়ে-অসময়ে তাঁদের সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। এতে দুটো সুবিধা হচ্ছে। এক দিকে, রাজ্যের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরি হচ্ছে। অন্য দিকে, আমাদেরও ঘাটতি মিটছে।”
বাঙুরের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাস বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী চান সমস্ত জেলা হাসপাতাল স্বনির্ভর হোক। আমরাও সেই পথেই এগোচ্ছি। এত দিন এই হাসপাতালে হার্ট এবং মস্তিষ্কের চিকিৎসা হত না। নতুন ১০ তলা বাড়িতে শীঘ্রই ওই দুই বিভাগের উদ্বোধন হতে চলেছে।” |