একটানা বৃষ্টিতে ক্ষতি আলু আর সর্ষে চাষে
কাল বর্ষণে ক্ষতির মুখে চাষবাস।
একটানা বৃষ্টিতে গাঁদা, গোলাপ, চেরি ফুলের পাপড়ি পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, সিম, বিন, শসার গায়ে দাগ ধরছে। তবে, সবচেয়ে ক্ষতি হবে আলু ও সর্ষে চাষের। এই দু’টিরই এখন খেত থেকে তোলার সময়। বৃষ্টির ফলে মাটিতে জল জমে যাওয়ায় সে কাজ ব্যাহত হচ্ছে। পচন ধরছে খেতেই।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা প্রণবেশ বেরা বলেন, “বৃষ্টির কারণে মাঠ থেকে আলু ও সর্ষে তোলার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ ভাবে বৃষ্টি চলতে থাকলে এই দুই চাষেই ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে।” একমত পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষি দফতরের তথ্য আধিকারিক দুলালদাস অধিকারীও। তাঁর পরামশর্র্, কোনও ভাবেই যাতে জমিতে জল না দাঁড়িয়ে থাকে, সেটা দেখতে হবে চাষিদের। পচন এড়াতে দাঁড়িয়ে থাকা জল দ্রুত বের করে দিতে হবে।
শনিবার সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা ছিল। বিকেলের পর থেকেই শুরু হয় বৃষ্টি। একটানা বৃষ্টি সারারাত হয়েছে। রবিবার সকাল থেকেও একই অবস্থা। ছুটি থাকায় দুই মেদিনীপুরের সব আবহাওয়া পরিমাপক কেন্দ্র থেকে তথ্য না পাওয়া গেলেও জানা গিয়েছে, গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩৫ মিলিমিটার।
জেলা কৃষি ও উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে সাধারণত খেত থেকে আলু ও সর্ষে তোলার কাজ করে থাকেন কৃষকরা। তিল বোনা, বাদাম লাগানোর কাজ শুরু হয়। এই সময় জমিতে বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সব্জি ও ফুল চাষ হয়ে থাকে। এই সব সব্জি ও ফুল চাষের জন্য অল্প জল ও পরিষ্কার আকাশ দরকার। এ বার দুই জেলায় শীতকালীন সব্জি ও ফুল চাষ ভালই হচ্ছিল। মাঠ থেকে আলু ও সর্ষে তোলার কাজ করছিলেন চাষিরা। কিন্তু শনিবার সকাল থেকে আবহাওয়া মেঘলা থাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দেয়। এদিন দুপুর থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়। আশঙ্কা সত্যি করে শনিবার রাত থেকে একটানা বৃষ্টি হতে থাকে। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া ব্লকের কৃষি আধিকারিক বিবেকানন্দ মহান্তি জানান, হালকা বৃষ্টিতে বোরোধান, তিল, বাদাম, মুগ ডাল চাষের সুবিধা হলেও আলু ও সর্ষে চাষের ক্ষতি হবে। কারণ কৃষকরা সবে মাঠ থেকে আলু ও সর্ষে তোলার কাজ করছিলেন। এ ছাড়াও এই বৃষ্টির জেরে ছত্রাকজাতীয় রোগপোকার আক্রমণে ফুল ও সব্জি চাষের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অকাল বৃষ্টির কারণে ছত্রাক জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব রুখতে কপার জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। এরপর ডাইথেন এম -৪৫ ও কারবান্ডাজিম’এর মিশ্রণের আড়াই গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। তাতেও কাজ না হলে স্থানীয় কৃষি প্রযুক্তি সহায়কদের কাছে গিয়ে পরামর্শ করতে হবে।”
পাঁশকুড়ার হাউর পঞ্চায়েতের কালিদান গ্রামের কৃষক কালীপদ সামন্ত বলেন, “আমার এক বিঘে জমিতে সর্ষে পেকে গিয়েছিল। শনিবারই খেত থেকে পাকা সর্ষে গাছ কেটে তুলতে শুরু করেছিলাম। মাত্র কাঠা দু’য়েক জমির তুলতে পেরেছিলাম। দুপুর থেকে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার জেরে বাকি সব সর্ষে গাছ মাটিতে মিশে গিয়েছে। বৃষ্টির জল লেগে পাকা সর্ষের খোলা ফুলে গিয়েছে। সব পচে যাবে।”
বৃষ্টির জেরে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কালিদান গ্রামেরই আলু ও গাঁদা ফুলচাষি প্রতাপ পাত্র। প্রতাপবাবু বলেন, “আমার এক একর জমিতে আলু চাষ রয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই আলু তোলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু শনিবার দুপুর থেকে বৃষ্টির জেরে জমিতে জল জমে গিয়েছে। ভেজা মাটিতে তুলতে অসুবিধা হবে। জমা জলে আলু পচবে।” প্রতাপবাবু জানান, এ ছাড়াও তিনি ১ একর ২৫ ডেসিমেল জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ করেছিলেন। প্রতাপবাবুর কথায়, “গতকাল থেকে বৃষ্টির জন্য গাঁদা ফুল তুলতে পারিনি। আজ দেখলাম গাঁদা ফুলের পাপড়িতে জলের ছিটে দাগ ধরতে শুরু করেছে। ওই ফুল আর বিক্রি করা যাবে না। বাজারে এখন ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে গাঁদাফুল বিক্রি হচ্ছিল। বৃষ্টির জন্য আমার প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেল।”
এছাড়াও অনেকেই তিলেরও বীজ বুনে দিয়েছেন। দ্রুত আবহাওয়ার উন্নতি না হলে তাঁদের ফের তিল চাষ করতে হবে হয়তো।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.