প্লাস্টিক ব্যবহার কমার নাম নেই, বাড়ছে দূষণ
জিনিস কিনে প্যাকেটে ভরে দিতে বলছেন ক্রেতা। নির্বিকারে প্লাস্টিকের প্যাকেটে করে তা হাতে তুলে দিচ্ছেন বিক্রেতা। সব্জি বাজার থেকে ফাস্ট ফুডের দোকান, এই দৃশ্য সকলেরই খুব চেনা।
কিন্তু বাড়ি ফিরে জিনিসটা ঘরে ঢুকলেও প্লাস্টিকের প্যাকেটের জায়গা হয় ডাস্টবিনে। কখনও বা এমনিই ঘরের কোণে পড়ে থাকতে থাকতে উড়ে গিয়ে পড়ে নর্দমায়। তার পরে নদর্মা আটকে, জল জমে কেলেঙ্কারি। এ ছাড়া পরিবেশ দূষণ তো রয়েইছে।
দুর্গাপুর শহরে মাঠ-ঘাট থেকে রাস্তা, আবর্জনার স্তূপ, নর্দমাসর্বত্রই পলিথিনের ছড়াছড়ি। গত কয়েক বছরে শহরের কিছু জায়গায় নর্দমা বুজে গিয়ে আশপাশের বাড়িতে জল ঢুকে যাওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। শহরবাসীর আশঙ্কা, সমস্যা এখনও প্রকট না হলেও অদূর ভবিষ্যতেই প্লাস্টিকের ব্যবহার থেকে মুশকিলে পড়তে পারে দুর্গাপুর। নির্দিষ্ট গুণমান ছাড়া প্লাস্টিকের প্যাকেটের ব্যবহারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু আইন কার্যকর হচ্ছে কি না তা দেখার মতো পরিকাঠামো নেই বলে অভিযোগ অনেকেরই। পুর এলাকার গ্রামীণ ওয়ার্ড বিজড়া, শোভাপুর প্রভৃতি এলাকা ছাড়া বাকি সব ওয়ার্ডেই প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার দেখা গিয়েছে। সব্জির দোকান, মাছের বাজার, মুদির দোকান, স্টেশনারি দোকান থেকে চপ-সিঙাড়া, ফাস্ট ফুডের দোকানসর্বত্রই ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিক।
জঞ্জালের স্তূপে অধিকাংশই প্লাস্টিক। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলি ৪০ মাইক্রনের নীচে। আবার বিপজ্জনক ভাবে কাঁচা খাবার প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যও নজরে পড়ে মাঝে-মধ্যেই। শহরের বড় বড় বাজার সিটি সেন্টার, বেনাচিতি, মামরা, স্টেশন বাজারের বিভিন্ন দোকানে গিয়ে দেখা গিয়েছে, দেদার প্লাস্টিক প্যাকেট ব্যবহার হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রেই ক্রেতা ও বিক্রেতা, দু’তরফই প্লাস্টিক ব্যবহারের পক্ষে। ব্যবসায়ীদের মতে, জিনিসপত্র সহজেই প্যাকেটে ভরে দেওয়া যায়। ছেঁড়ার সম্ভাবনাও কম। আবার ক্রেতাদের মতে, প্লাস্টিকের প্যকেট পরেও ব্যবহার করা যায়। কাগজের প্যাকেটে যা সম্ভব নয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্লাস্টিক একসঙ্গে মাটি, জল ও বায়ুকে দূষিত করে। এর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার একমাত্র উপায়, যতটা সম্ভব ব্যবহার কমানো। কারণ প্লাস্টিক মাটিতে মেশে না। কোনও ব্যাকটেরিয়ার ক্ষমতা নেই তাকে ‘ডিকম্পোজ’ করার। তাই মাটিতে প্লাস্টিক পুঁতে ফেলার অর্থ, চিরকালের মতো সেই বিষ মাটিতে থেকে যাওয়া। আবার যদি পুড়িয়ে ফেলা হয় তাহলে এর মধ্যে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক বাতাসে মিশে যায়। যার প্রভাব পড়ে বাস্তুতন্ত্রের উপর। এছাড়া প্রাত্যহিক জীবনের কিছু অসুবিধে তো রয়েইছে। যেমন, বর্ষায় বেনাচিতির মতো ঘিঞ্জি এলাকার নর্দমা প্লাস্টিক জমে বুজে যাচ্ছে। ফলে আশপাশের বহু বাড়িতে জল ঢুকে গিয়ে বিপাকে পড়েন বাসিন্দারা। গত বর্ষাতেও বেশ কয়েক ঘন্টা কার্যত জলবন্দি ছিলেন বেনাচিতির বহু মানুষ।
কি বলছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ? পর্ষদের দুর্গাপুর শাখার এক আধিকারিক জানান, নির্দিষ্ট গুণমানের প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রবণতা আগের থেকে বেড়েছে। বিভিন্ন শপিংমলে তেমন প্লাস্টিকই ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বাজারের পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি। ক্ষতিকারক প্ল্যাস্টিকের প্যাকেট অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হয়। তখন পরিস্থিতি কিছুটা বদলালেও দু’দিন পরেই আবার যে কে সেই।” শহরের হাতেগোনা কয়েকটি দোকান আছে যেখানে পলিথিন ব্যবহার করা হয় না। তেমনই এক ব্যবসায়ী অবশ্য বলেন, “শেষ কবে অভিযান হয়েছে তা মনে পড়ছে না।”
কিন্তু নিয়মিত অভিযান হয় না কেন? পর্ষদের ওই আধিকারিকই জানান, দুর্গাপুর থেকে আশপাশের চার জেলায় নজরদারি চালানো হয়। পর্যাপ্ত লোকবল ও পরিকাঠামো না থাকাটা একটা বড় সমস্যা। মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “নর্দমায় প্লাস্টিক জমে যাওয়ার সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। নর্দমা পরিষ্কার রাখতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে সাফাইকর্মীদের। পুরসভার পক্ষ থেকে নাগরিকদের সচেতন করতে প্রয়াস চালানো হচ্ছে। তবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.