|
|
|
|
ঘাটতি কমাতে কোথায় কোপ, উঠছে প্রশ্ন |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি
১৬ ফেব্রুয়ারি |
বাজেট তৈরির কাজটা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পালানিয়প্পন চিদম্বরমের কাছে নতুন কিছু নয়। সোমবার জীবনের নবম বাজেট পেশ করবেন তিনি। কিন্তু ভোটের বছরে অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ চিদম্বরমের জীবনে এ বারই প্রথম। শিল্প মহলের আশা, রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টানতে এ বারও পদক্ষেপ করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তাতে শেয়ার বাজার এবং শিল্প মহল দু’পক্ষই খুশি হবে। কিন্তু ঘাটতিতে রাশ রাখতে গিয়ে তিনি কোন কোন খাতে খরচ কমাবেন, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
ভারতীয় অর্থনীতির এখন গভীর অসুখ। আর এই অসুখের প্রসঙ্গ উঠলেই শিল্পমহল ও অর্থনীতিবিদরা মূলত তিনটি কথা বলছেন। কারখানার উৎপাদন কমেছে, নতুন চাকরি তৈরি হচ্ছে না এবং লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি। বৃদ্ধির হারকে টেনে তুলতে বা মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম দিতে চিদম্বরম বিশেষ কিছুই করেননি বলে বারেবারে অভিযোগ উঠেছে। শেষ বাজেটে অর্থমন্ত্রী তাই ঘাটতিতে রাশ টানার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক বার্তা দিতে শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা করার একটা চেষ্টা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আর সেটা করতে গিয়ে বাজেটে সড়ক, পরিবহণ, বিদ্যুতের মতো জরুরি পরিকাঠামো ক্ষেত্রের খরচে বড়সড় কোপ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের। জ্বালানি, সার ও খাদ্যে ভর্তুকি বাবদ প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার খরচ পরের বছরের হিসেবের খাতায় ঠেলে দিতে পারেন চিদম্বরম। তাতে রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও আখেরে অর্থনীতিরই ক্ষতি। ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি আইসিআরএ-র অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ার যেমন বলছেন, “এ ভাবে চললে পরের বছরের জন্যও একটা চাপ রেখে দেওয়া হচ্ছে। তাতে আখেরে আর্থিক বৃদ্ধিই ধাক্কা খাবে।” রিজার্ভ ব্যাঙ্কও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, পরিকল্পনা খাতে ৫৫ থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ছাঁটাই করতে চলেছেন চিদম্বরম। এর পুরোটাই খরচ হতো পরিকাঠামো তৈরিতে। সেখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ পরিকাঠামোয় খরচ হলে আখের অর্থনীতির ভিতই মজবুত হয়। যার সূত্র ধরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ সমীরণ চক্রবর্তী বলেন, “খরচ কোথায় ও কী ভাবে কমানো হচ্ছে, সেটাই চিন্তার।” অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, গত বাজেটে ভর্তুকি বাবদ ২.২১ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন চিদম্বরম। কিন্তু বছর শেষে দেখা যাচ্ছে, ভর্তুকির বহর ৩ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছচ্ছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়লে সার উৎপাদনের খরচ বাড়বে। ভর্তুকির বোঝাও বাড়বে। সে কথা মাথায় রেখেই জ্বালানি, সার ও খাদ্যে ভর্তুকির পরিমাণ জিডিপি-র (দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) ২ শতাংশে বাঁধতে চাইছেন চিদম্বরম।
অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের দাবি, এ ছাড়া উপায় নেই। ভোটের বছরে গ্রামোন্নয়ন, স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রে ব্যয়বরাদ্দ বাড়াতেই হবে। শেষ বেলায় স্পেকট্রাম নিলাম থেকে ভাল আয় হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি মিললেও শিল্পে মন্দার কারণে কর বাবদ আয় কমেছে সরকারের। ফলে ঘাটতিকে বেঁধে রাখতে পরিকল্পনা খাতে খরচ কমানো ছাড়া উপায় নেই। তাতে অর্থনীতির আখের মঙ্গল হবে না অমঙ্গল, সেটাই প্রশ্ন। |
|
|
|
|
|