মহারথী টক্করে প্রথম দফায় আপের কুড়ি
দিল্লি বিধানসভা নিয়ে উদ্বেগের পর্ব আপাতত শেষ। আপাতত রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ায় আগামী ছ’মাসের মধ্যে সেখানে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ও বিজেপির একাধিক রথী-মহারথী নেতাকে নিশানা করে আজ থেকেই লোকসভা নির্বাচনের ময়দানে নেমে পড়ল অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি।
আজ প্রথম দফায় দেশের কুড়িটি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলেন আপ নেতৃত্ব। এর মধ্যে দিল্লিতে দু’টি, উত্তরপ্রদেশে ৭টি, মহারাষ্ট্রে ৬টি এবং হরিয়ানা, অরুণাচল প্রদেশ, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ ও পঞ্জাবে একটি করে কেন্দ্র রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রগুলির মধ্যে অমেঠীতে রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন কুমার বিশ্বাস। চাঁদনি চকে কপিল সিব্বলের বিরুদ্ধে প্রাক্তন সাংবাদিক আশুতোষ, নাগপুরে নিতিন গডকড়ীর বিরুদ্ধে সমাজকর্মী অঞ্জলি দামানিয়া, মুম্বই দক্ষিণে মিলিন্দ দেওরার বিরুদ্ধে প্রাক্তন ব্যাঙ্ক-কর্ত্রী মীরা সান্যাল, মৈনপুরী কেন্দ্রে মুলায়ম সিংহ যাদবের বিরুদ্ধে প্রাক্তন আমলা বাবা হরদেব। আপ শিবিরের দাবি, কংগ্রেস-বিজেপি বা সপা-র এই নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তবু এঁরা সংসদীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। আপ নেতা সঞ্জয় সিংহের কথায়, “সংসদকে দুর্নীতিমুক্ত করতেই দলের এই পদক্ষেপ।”
কোথায় কে
আসন সাংসদ আপ প্রার্থী
অমেঠী রাহুল গাঁধী কুমার বিশ্বাস
চাঁদনি চক কপিল সিব্বল আশুতোষ
ফারুকাবাদ সলমন খুরশিদ মুকুল ত্রিপাঠী
পুণে সুরেশ কলমডী সুভাষ ওয়াড়ে
মৈনপুরী মুলায়ম সিংহ যাদব হরদেব সিংহ
মুম্বই দক্ষিণ মিলিন্দ দেওরা মীরা সান্যাল
মুম্বই উত্তর-পূর্ব সঞ্জয় দিনা পাটিল মেধা পাটকর
ইতিমধ্যেই গোটা দেশে প্রায় সাড়ে তিনশো আসনে লড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে দল। এর মধ্যে বেশ কিছু আসনে জনভিত্তি না থাকলেও কেবল নীতির প্রশ্নে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। তার মধ্যে আজ প্রকাশিত একাধিক কেন্দ্রও রয়েছে। আপ নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, ইতিমধ্যেই জন লোকপাল বিল পাশ না হওয়ায় সরকার ফেলে দিয়েছেন কেজরীবাল। এখন এই সব নেতার বিরুদ্ধে ভোটে নামলে অন্তত এই বার্তা দেওয়া যাবে যে, হার-জিত নয়, দুর্নীতি রোখার প্রশ্নে দল আন্তরিক। দুর্নীতি-প্রশ্নে দিল্লি, হরিয়ানা বা উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে ভাল ফলের আশা করছেন আপ নেতারা। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি হরিয়ানা থেকে লোকসভার প্রচার শুরু করবেন কেজরীবাল। অনেকেই মনে করছেন, হরিয়ানা থেকে প্রচার শুরু করাটাও আপের নির্বাচনী কৌশল। হরিয়ানায় ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এমন একটি রাজ্য থেকে প্রচার শুরু করলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বার্তা দেওয়াও সম্ভব হবে।
প্রথম তালিকায় যোগেন্দ্র যাদব, আশুতোষের মতো শীর্ষ নেতার নাম থাকলেও কেজরীবাল নিজে আদৌ লোকসভা ভোটে লড়বেন কিনা, তা স্পষ্ট করেনি দল। আপ শিবিরের একাংশের বক্তব্য, দিল্লি বিধানসভায় শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে কেজরীবাল লড়ায় আখেরে দলেরই রাজনৈতিক ফায়দা হয়েছিল। এ বারও কেজরীবাল যদি বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লড়ার কথা ঘোষণা করেন, তা হলে কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গা হবে। দলের এক নেতার মতে, সে ক্ষেত্রে মোদী কোন নির্বাচনী এলাকা থেকে লড়ছেন, তা চূড়ান্ত হওয়ার পরেই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কেজরীবাল। দলেরই অন্য অংশ অবশ্য চাইছেন, অন্য কোনও রাজ্যে নয়, দিল্লিরই কোনও একটি কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন কেজরীবাল।
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের মতো লোকসভা নির্বাচনেও যে দুর্নীতিই আপের প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে, তা তাদের কার্যপদ্ধতি থেকে স্পষ্ট। সেই কারণেই লোকপাল বিল নিয়ে সরকার ফেলে দিতেও পিছপা হয়নি তারা। কারণ দল মনে করে, এতে জনগণকে বোঝানো যাবে যে, দিল্লিতে দুর্নীতি রুখতে লোকপাল বিল পাশ করাতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু যে হেতু মুকেশ অম্বানীর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কেজরীবাল, তাই বিজেপি ও কংগ্রেস হাত মিলিয়ে তাদের আটকেছিল। আগামী দিনে মুকেশ অম্বানীও আপের প্রচারের অন্যতম বিষয় হতে চলেছেন বলে মনে করেছেন অনেকে। ইতিমধ্যেই দিল্লির সরকার ফেলার পিছনে মুকেশ অম্বানীর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করার পরে আজ ফের মুকেশ-প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদী ও রাহুল গাঁধী কেন চুপ রয়েছেন, তা জানতে চেয়ে টুইট করেছেন কেজরীবাল।
আজ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, বিজেপির একজনেরই বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে আপ। বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি নিতিন গডকড়ী। আপ নেতা মণীশ সিসৌদিয়া অবশ্য পরে বলেন, “এ যাত্রায় না দিলেও আগামী দিনে দেওয়া হবে না, এমনটা নয়। পরবর্তী তালিকাগুলির জন্য অপেক্ষা করুন।” আপ শিবিরের ব্যাখ্যা, কংগ্রেস তথা ইউপিএ সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা কার্যত তলানিতে এসে ঠেকেছে। সেখানে বিকল্প হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে অনেকটাই সক্ষম মোদী তথা বিজেপি। আপ নেতৃত্বের ধারণা, আসন্ন নির্বাচনে তাঁদের মূল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে চলেছে বিজেপিই। তাই আগামী দিনে মোদী-সহ বিজেপি নেতৃত্বকে যে তাঁরা নিশানা করবেন, তা আজ বুঝিয়ে দিয়েছেন সঞ্জয় সিংহ। তাঁর কথায়, “গ্যাসের বর্ধিত দামের প্রশ্নে মোদী কেন চুপ, সেই জবাব তাঁকে দিতে হবে।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.