এক ব্যবসায়ীকে ধারালো অস্ত্রের কোপ মেরে পালাতে গিয়ে জনতার প্রহারে মৃত্যু হল আততায়ীর সঙ্গীর। আক্রান্ত ব্যবসায়ী গুরুতর জখম। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ পরে গ্রেফতার করেছে নিহতের সঙ্গী ওই হামলাকারীকে। টাকাকড়ি নিয়ে বিবাদের জেরেই এই হামলা বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান। শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ঘোলা থানার সি ব্লকে।
পুলিশ জানিয়েছে, জখম ব্যবসায়ীর নাম গৌতম সাহা। নিহত গোপাল সাহা (৩৭) তাঁর পরিচিত। গোপালের বাড়ি মধ্যমগ্রামে। শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ চিরঞ্জিত গুপ্ত নামে এক সঙ্গীকে নিয়ে গোপাল গৌতমবাবুর বাড়িতে যায়। শিয়ালদহ স্টেশন লাগোয়া শিশির মার্কেটে গৌতমবাবুর একটি জুতোর দোকান রয়েছে। গোপাল ও চিরঞ্জিতেরও দোকান ওই এলাকায়। পুলিশের দাবি, জেরায় চিরঞ্জিত বলেছে, বাজারের ব্যবসায়ীরা সকলে মিলে একটি তহবিল তৈরি করেছিলেন অনেক দিন আগে। সেই তহবিলের দেখভাল করেন গৌতমবাবু। কিন্তু বারংবার হিসেব চাওয়া সত্ত্বেও তিনি তহবিলের হিসেব দিচ্ছিলেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছে চিরঞ্জিত। ধৃতের দাবি, সেই হিসেব-নিকেশ ‘বুঝে নিতে’ই ওই রাতে তারা ঘোলায় গিয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, চিরঞ্জিতের কথার সত্যাসত্য যাচাই করতে গৌতমবাবুকে পৃথক ভাবে জেরা করাটা জরুরি। কিন্তু তিনি হাসপাতালে ভর্তি থাকায় এখনই তা সম্ভব নয়। |
গৌতমবাবুর ভাইপো গণেশবাবু এ দিন জানান, কাকার বাড়ির প্রায় উল্টো দিকেই তাঁর বাড়ি। ওই রাতে বাড়ি ঢোকার মুখে কাকার বাড়ির দোতলা থেকে গোঙানির শব্দ পেয়ে তিনি সদর দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকেন। দেখেন তাঁর কাকিমা, অর্থাৎ গৌতমবাবুর স্ত্রী একতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভয়ে, আতঙ্কে ঠকঠক করে কাঁপছেন। তাঁর পাশে সিঁড়ির ঠিক মুখেই দাঁড়িয়ে গোপাল। গণেশবাবু বলেন, “গোঙানির আওয়াজ শুনে দোতলায় উঠতে গেলে গোপাল আমার পথ আটকায়। বলে, ‘উপরে ওঠা যাবে না। ওখানে হিসেব-নিকেশ চলছে।’ সেই শুনে আমি গোপালকে ঠেলে সরিয়ে দোতলায় উঠেই দেখি, চিরঞ্জিত কাকাকে কোপাচ্ছে।” ওই দৃশ্য দেখে আগুপিছু না ভেবে কাকাকে বাঁচাতে গণেশবাবু লাফিয়ে পড়েন চিরঞ্জিতের উপরে। বাধা পেয়ে এ বার চিরঞ্জিত ভোজালির কোপ বসিয়ে দেয় গণেশবাবুর হাতেও। তাঁর চিৎকারে পাড়ার লোকজন জড়ো হয়ে যান বাড়ির সামনে।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চিরঞ্জিত ও গোপালও বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছুটতে শুরু করে। জনতা ধাওয়া করে তাদের। ইতিমধ্যে ঘোলা থানায় খবর পৌঁছয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই অবশ্য পাড়ার লোকজন ধরে ফেলেন গোপালকে। বেধড়ক মারে সেখানেই সে অচৈতন্য হয়ে পড়ে। তাকে প্রথমে পানিহাটি, পরে কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত আড়াইটে নাগাদ গোপালের মৃত্যু হয়।
গৌতমবাবুর স্ত্রী কাকলিদেবীর বক্তব্য, রাত ১১টার কিছু ক্ষণ আগে চিরঞ্জিতেরা বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ে। যে হেতু ওই দু’জন গৌতমবাবুর পরিচিত, তাই অত রাতে দরজা খোলার আগে সাতপাঁচ ভাবেননি তাঁরা। কাকলিদেবী বলেন, “বছর দশেকের ছেলে আবিরকে নিয়ে আমি দোতলারই একটি ঘরে শুয়েছিলাম। চিরঞ্জিত আমার স্বামীর সঙ্গে অন্য একটি ঘরে কাগজপত্র নিয়ে হিসেব কষতে বসে। গোপাল একতলায় দাঁড়িয়ে ছিল।” পুলিশকে কাকলিদেবী বলেছেন, চিরঞ্জিতের সঙ্গে গৌতমবাবুর কথা-কাটাকাটি হচ্ছে শুনে তিনি একতলায় নেমে গোপালের কাছে জানতে চান, কী হয়েছে। গোপাল তাঁকে জানায়, কিছুই হয়নি। শুধু হিসেব মিলছে না। এর পরেই গৌতমবাবু গোঙাতে শুরু করেন। কাকলিদেবীর দাবি, শিশির মার্কেটে তাঁর স্বামীর দোকানের পাশে ওই দুই যুবকের দোকান আছে বলে তিনি শুনেছেন। কিন্তু তহবিলের বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। |