শহরে আবার অটো-দৌরাত্ম্য, রুখে দাঁড়াতে ডাক মদনের
ভাল কথায় কাজ হয়নি। ধরপাকড় করেও দমানো যায়নি। অটোচালকদের দৌরাত্ম্য রুখতে এ বার তাই মানুষকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দিলেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। পাশাপাশি আজ, রবিবার থেকে ফের তিনি রাস্তায় নামবেন বলেও জানিয়ে দিলেন।
উপলক্ষ, ফের এক আরোহীকে অটোচালকের মারধরের ঘটনা। খুচরো নিয়ে বচসার জেরে শনিবার রানিকুঠিতে অমল মজুমদার নামে এক যাত্রীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন এক অটোচালক। পথচলতি মানুষই তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে অমলবাবুর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অটোচালক সাগর কর্মকারকে গ্রেফতার করে রিজেন্ট পার্ক থানা।
জ্বালানির দাম বাড়লেও বাসের ভাড়া বাড়াতে রাজি নয় সরকার। এর জেরে রাস্তা থেকে সরকারি-বেসরকারি বাস ক্রমশ উধাও হয়ে যাচ্ছে। বাস না পেয়ে অটোর চাহিদা বেড়েছে। আর সেই সুযোগে মহানগর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই তিন চাকার যান। ইচ্ছেমতো রুট ভেঙে চালানো, ট্র্যাফিক আইন না-মানা, খেয়ালখুশি মতো ভাড়া বেশি নেওয়া, বেশি যাত্রী নেওয়ার ঘটনা তো চলছিলই। সম্প্রতি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যাত্রী-পেটানোর সংস্কৃতি। অটোচালকদের হাতে নিয়মিত আক্রান্ত হচ্ছেন যাত্রীরা। এর মধ্যে মহিলাও রয়েছেন।
মারে জখম যাত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
তারাতলা, বেকবাগান, রামগড় কোথাও ভাড়া বেশি চাওয়ায় বিবাদ, কোথাও খুচরো-বিতর্কের জেরে চালকদের বিরুদ্ধে গায়ে হাত তোলার একের পর এক অভিযোগ উঠেছে। শুধু হাত নয়, সঙ্গে লোহার রডও।
অটোর এই দৌরাত্ম্য মাত্রাছাড়া হওয়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। অটোকে শাসনের শৃঙ্খলে বাঁধতে ২০১২ সালে একটি কমিটি তৈরি হয়। সেই কমিটির রিপোর্ট ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেয় সরকার। কিন্তু অটোর দাপট বেড়ে চলায় বিভিন্ন ইউনিয়নের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনায় বসেন পরিবহণ কর্তারা। তাতেও কাজ না হওয়ায় নানা হুঁশিয়ারি দেন পরিবহণ মন্ত্রী। তাঁর শেষ হুঁশিয়ারি ছিল, ২৬ জানুয়ারির মধ্যে নিজেদের না শোধরালে তিনি কড়া ব্যবস্থা নেবেন।
কিন্তু সেই হুঁশিয়ারিতেও কাজ না হওয়ায় পথে নামেন মদনবাবু। প্রয়োজনী কাগজপত্র না পেয়ে কয়েকটি রুটের বেশ কিছু অটো বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। পরিবহণমন্ত্রীর কথায়, “সব চেয়ে বেশি অভিযোগ আসছে ডানলপ, রাসবিহারী, দমদম, নাগেরবাজার, লেকটাউন, এয়ারপোর্ট, বালিগঞ্জ ও টালিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে।” মন্ত্রী-পুলিশের যৌথ অভিযানেও যে কাজ হয়নি, আক্ষেপের সঙ্গে মদনবাবু নিজেই শনিবার সে কথা জানিয়েছেন।
এ দিনের ঘটনার কথা শুনে তিনি বলেছেন, “জরিমানা, ধরপাকড় করেও কোনও লাভ হচ্ছে না। মানুষকেই তাই সচেতন ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তাঁদের প্রতিবাদ করতে হবে।”
চালকের কীর্তি
১৬ জানুয়ারি তারাতলায় নাক ফাটালো তরুণীর
২০ জানুয়ারি বেকবাগানে রড মেরে যুবতীর মাথা ফাটালো
২৪ জানুয়ারি রামগড়ে অটোর ধাক্কায় বৃদ্ধের মৃত্যু
২৫ জানুয়ারি নিউ আলিপুরে তরুণীর গলা টিপে ধরল
১৬ ফেব্রুয়ারি রিজেন্ট পার্কে ঘুষিতে মাথা ফাটালো যাত্রীর
এ বার লাইসেন্স ও পারমিট বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্তের পথেই যে তিনি হাঁটতে চান, সে কথা জানিয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রী। বলেছেন, রবিবার থেকে তিনি ফের পথে নামবেন। পরিবহন কর্তাদের বক্তব্য, সামনে অটোচালক থাকলেও আসলে অদৃশ্য ভাবে ইউনিয়নের দাপট চলে। আগে ছিল সিটু, এখন তৃণমূলের সংগঠন আইএনটিটিইউসি। তাই মন্ত্রী ও পুলিশও বার বার অটোর দাপটের কাছে হার মেনে দিশেহারা হচ্ছেন।
এ দিন ঠিক কী ঘটেছে?
মাথায় তিনটি সেলাই নিয়ে আহত যুবক অমলবাবুর অভিযোগ তিনি বিজয়গড়ের বাসিন্দা। কাজ করেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। এ দিন আলিপুর জজ কোর্টে কাজ সেরে একটি ট্যাক্সি নিয়ে বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ ধর্মতলায় পৌঁছন। সেখান থেকে মেট্রো ধরে টালিগঞ্জ স্টেশনে নেমে রানিকুঠি-র অটোরিকশায় চাপেন। অটোয় তিনি ছাড়া আরও দুই মহিলা যাত্রী ছিলেন। রানিকুঠি পর্যন্ত অটোর ভাড়া ৬ টাকা। তিনি অটোচালককে ১০ টাকা দেন। চালক তাঁর কাছে ৬ টাকা খুচরো চান। খুচরো না থাকায় তিনি এক টাকা দিতে পারবেন বলে জানান। তা হলে খুচরো চার টাকার পরিবর্তে একটি পাঁচ টাকার কয়েন দিতে পারবেন চালক। এতেই ক্ষুব্ধ হন চালক। তাঁর সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এই সময় আচমকাই তাঁকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে দেন চালক। উঠে দাঁড়িয়ে অমল তার প্রতিবাদ করলে চালক ঘুষি মারতে থাকেন। তাতেই মাথা ফেটে যায় তাঁর।
দিনের আলোয় প্রকাশ্য রাস্তায় এক যাত্রীকে চালক মারছেন দেখে ভয় পেয়ে নেমে যান অটোর দুই মহিলা যাত্রী। কিন্তু পথচলতি কয়েক জন অটোচালককে ধরে ফেলেন। তাকে রাস্তার ধারের পুলিশ কিয়স্কে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পাঠানো হয় রিজেন্ট পার্ক থানায়। পুলিশ সেখানে পৌঁছে অমলকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে অমলের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় চালককে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.