|
|
|
|
ছোট আঙারিয়া মামলা |
|
পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরানো
হয়, জানালেন বক্তারের দাদা
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
|
বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে আগুন দেওয়া ও একাধিক ব্যক্তিকে খুনের ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছিলেন বলে আদালতে দাবি করলেন বক্তারের দাদা সিদ্দিক আলি মণ্ডল। কাকা মহসিন মণ্ডলের বাড়ির জানলা থেকে তিনি যা দেখেছিলেন শুক্রবার ছোট আঙারিয়া মামলায় দ্বিতীয় দফা সাক্ষ্য দিতে এসে মেদিনীপুরের পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্যের কাছে তারই বর্ণনা দেন সিদ্দিক।
ছোট আঙারিয়া মামলায় প্রথমে সাক্ষ্যগ্রহণের পর বেকসুর খালাস পেয়ে গিয়েছিলেন ধৃতেরা। কিন্তু সিবিআই বেশ কয়েকজন অভিযুক্তকে ফেরার দেখিয়েই চার্জশিট জমা দিয়েছিল। তাদেরই একজন দিল মহম্মদ। দিল মহম্মদকে গড়বেতা থানার পুলিশ অস্ত্র সহ গ্রেফতারের পরই ফের মামলা শুরু হয়। দ্বিতীয় দফার শুনানি শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল থেকে। ১১ মাস হতে চললেও সবে ৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পূর্ণ হল। কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা নিম্ন আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যাওয়াতেই শুনানি ধীর গতিতে এগোচ্ছে। গতবার যে চারজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, সেই বক্তার মণ্ডল, বক্তারের স্ত্রী আনিসা মণ্ডল, রফিক মণ্ডল ও সিদ্দিক আলি মণ্ডলএই চার জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পরই অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী চারজনকে এক সঙ্গে জেরা করবেন বলে হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন। হাইকোর্ট সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে। শুক্রবার চার জনের শেষ জন সিদ্দিক আলি মণ্ডলের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হল।
আদালতে সিদ্দিক জানান, ২০০১ সালের ৪ জানুয়ারি সন্ধে সাড়ে ৬টা-৭টা নাগাদ কাকা মহসিন মণ্ডলের বাড়িতে রেডিওয় খবর শুনতে গিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ দেখেন কিছু লোক গ্রামে ঢুকছে। তারা বক্তারের বাড়ি ঘিরে ফেলে। ওই দলে থাকা সালেমৎ, ভোলা, আশাজুল, সেরাজুল, মজু, প্রশান্ত ও গোলাপকে (পরবর্তীকালে গোলাপ অবশ্য খুন হয়েছেন) তিনি চিনতে পেরেছিলেন। সিদ্দিকের কথায়, “বাড়ি ঘিরে ফেলার পর সালেমৎ আর প্রশান্ত আমার কাকার বাড়িতে এসে শুকনো লঙ্কা চায়। ওই লঙ্কা জ্বালিয়ে বক্তারের ঘরে ধোঁয়া দিতে চেয়েছিল। যাতে বক্তারের ঘর থেকে সকলে বাইরে বেরোতে বাধ্য হয় কিন্তু বৌদি সামেদা বিবি জানিয়ে দেন, এ বার তাঁরা লঙ্কা শুকনো করতে পারেননি। তখন ওরা চলে যায়।” এই সময়ই সিদ্দিক ও তাঁর কাকা গোপনে দোতলায় উঠে আসেন এবং জানলা দিয়ে সব ঘটনা দেখেন। সিদ্দিকের কথায়, “ওরা পেট্রোলের খোঁজ করে। একজন বলেন, বাবলার কাছে পেট্রোল রয়েছে। পেট্রোল দিয়েই বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।” পেট্রোল দিয়ে ঘর জ্বালাতেও দেখেন তিনি। সিদ্দিক বলেন, “প্রথমে মোক্তারকে বেরোতে দেখি। বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রশান্ত তলোয়ার দিয়ে তাঁর গলা কেটে ফেলে।” আর এক বোষ্টম মোড়ের বাসিন্দা, যার নাম মনে করতে পারেননি সিদ্দিকি, তিনিও পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁকে ধরে তাল গাছে মাথা ঢুকে ঘিলু বের করে দেয়। বাঁচার তাগিতে শালতোড়ার হইদুল জানলা দিয়ে লাফিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। সেই সময় ভোলা হইদুলকে গুলি চালিয়ে খুন করে বলে আদালতে জানান তিনি।
ঘন্টাখানেক পর সব চুপচাপ হতে নীচে নামেন সিদ্দিক। কাছাকাছি তিনটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে ভয়ে ফের ঘরে ঢুকে যান। পরে শুনতে পান গাড়ির আওয়াজ। সিদ্দিকের কথায়, “ভেবেছিলাম ওরা আমাদের খুন করতে আরও লোক আনছে। পরে দেখি, ওরা দড়ি খুঁজছে। তারপর লাশগুলি তুলে নিয়ে পালায়।” পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সিদ্দিক দেখেন, ভোলা দু’টি কাতান (তরোয়াল জাতীয় অস্ত্র) দু’হাতে ধরে গ্রামের মানুষকে হুমকি দিচ্ছে। সিদ্দিকের কথায়, “ভোলা বলছে, কেউ যদি এই ঘটনার কথা বলিস, তাহলে এই কাতান দিয়ে তাকেও কেটে দেব।”
সাক্ষ্য শেষে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীদের জেরা করার কথা ছিল। কিন্তু এ দিন জেরা করতে রাজি হননি অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী বিশ্বনাথ ঘোষ। তিনি জানান, তাঁর সহযোগী এক আইনজীবী অসুস্থ। তাছাড়া ১৭ জুন তিনি এই আদালতেই আবেদন জানিয়েছিলেন যে, এই সাক্ষীরা প্রথমবার এক রকম সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। আর দ্বিতীয়বার অন্যরকম সাক্ষ্য দিচ্ছেন। বিশ্বনাথবাবুর কথায়, “প্রথমবার শপথ নিয়ে এক রকম সাক্ষী দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার মিথ্যে বলছেন। তাই সাক্ষীদের মিথ্যে সাক্ষ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হোক। সেই আবেদনের শুনানি না হলে আমরা কী ভাবে জেরা করব।” সিবিআইয়ের আইনজীবী তাপস বসু অবশ্য বলেন, “সাক্ষীরা অপরাধীকে বাঁচাতে মিথ্যে সাক্ষ্য দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সাক্ষীরা স্ত্রী, সন্তানকে বাঁচাতে মিথ্যে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এরপর আদালত যা বলবে আমরা মেনে নেব।” ২৪ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। এই মামলায় ধৃত অসুস্থ দিল মহম্মদকে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য আলিপুর জেলে রাখা হয়েছে। তবে কলকাতা থেকে মেদিনীপুর আদালতে আনার সময় তাঁকে দু’বার ট্রেনে চাপিয়ে আনা হয়েছিল। দিল বিচারকের কাছে আবেদন জানান, যাতে তাঁকে গাড়িতে আনা হয়। বিচারক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য জানান, নিরাপত্তার কারণে ট্রেনে ভিড়ের মধ্যে বিচারাধীন বন্দিকে নিয়ে আসা ঠিক নয়। দিল মহম্মদের উপযুক্ত চিকিৎসা এবং গাড়িতে যাতায়াতের নির্দেশও দেন বিচারক। |
|
|
|
|
|