সিপিএম থেকে যাঁরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন এমন লোকজনদেরই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হিসাবে নিয়োগ করার অভিযোগে নিগৃহীত হলেন সিডিপিও। স্থানীয় তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। শুধু সিডিপিও-কে নিগ্রহই নয়, তাঁর দফতরে ভাঙচুর চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নষ্ট করার অভিযোগও উঠেছে। শুক্রবার দুপুর উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া থানার অদূরে শিশুবিকাশ সেবা প্রকল্পের দফতরে এই ঘটনা ঘটে। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, পরিস্থিতি সামাল দিতে র্যাফ নামাতে হয়েছে।
সিডিপিও শুভপ্রিয় মল্লিক বলেন, “বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগের ফল প্রকাশের পরে তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। ৯১ জন সফল প্রার্থীর যে তালিকা টাঙানো হয়েছিল তাতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এ দিন গুপুরে এক দল জনতা দফতরে ঢুকে ভাঙচুর করে। কাপজপত্র নষ্ট করে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশকে সমস্ত ঘটনা জানিয়েছি।” |
পুলিশ ও দফতর সূত্রে খবর, ২০১২ সালের মে-জুন মাসে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রায় আড়াই হাজার পরীক্ষার্থী ছিল। তাঁদের মধ্যে উত্তীর্ণ ৯১ জনের তালিকা বৃহস্পতিবার প্রকল্প আধিকারিকর দফতরে টাঙিয়ে দেওয়া হয়। বেলা ১২টা নাগাদ এক দল জনতা তালিকায় দুর্নীতি করা হয়েছে অভিযোগ তুলে দফচরে ঢুকে সিডিপিও-কে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। নিজেদের তৃণমূলের কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে বিক্ষোভকারীরা দাবি করে, তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে তারা এক সময় সিপিএম করত। বর্তমানে তারা তৃণমূলে। দলেরই একটি গোষ্ঠী সিডিপিও-র সঙ্গে যোগসাজশ করে এই তালিকা তৈরি করেছে। বিক্ষোভকারী তালিকা ছিঁড়ে ফেলে সিডিপিও-র দফতরে ভাঙচুর শুরু করে। কাগজপত্র নষ্ট করে। তাঁকে ধাক্কা দেয় বলে অভিযোগ। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সহকারি প্রকল্প আধিকারিক তনুজা অধিকারী বলেন, “স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার নিরিখে যাতে সকলে চাকরি পান সে জন্য ভাল করে খতিয়ে দেখেই তালিকা তৈরি হয়েছে। তা সত্ত্বেও এ দিন যে ভাবে প্রকল্প আধিকারিককে নিগ্রহ করে দফতরে ভাঙচুর চালানো হল তাতে আমরা আতঙ্কিত।” তাঁর অভিযোগ, পাশেই থানা, অথচ খবর দেওয়ার অনেক পরে পুলিশ আসে। যদিও পুলিশে র দাবি, খবর পাওয়া মাত্রই তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান।
হাড়োয়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি গাজিতলা মোড়ে মেছোভেড়ি নিয়ে দলের দু’টি গোষ্ঠীর গণ্ডগোল এতটাই চরমে ওঠে যে জেলায় দলের পর্যবেক্ষক ও রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে হস্তক্ষেপ করতে হয়। যদিও দলের হাড়োয়া ব্লক সভাপতি মাদার মোল্লা বলেন, “সিডিপিও-কে নিগ্রহ ও তাঁর দফতরে ভাঙচুরের ঘটনায় আমাদের দলের কেউ জড়িত নয়।”
সিপিএমের হাড়োয়া উত্তর লোকাল কমিটির সম্পাদক ভুবন মণ্ডল বলেন, “সিডিপিও-কে মারধর ও যথেচ্ছ ভাঙচুর চালানোর পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই কাজ করছে। সবাই তা জানে। অথচ তার পরেও দেখবেন আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা চলছে।”
আর মমতাজ বেগম, কামিলা খাতুনের মতো পরীক্ষার্থীরা কি বলছেন?
তাঁদের কথায়, “দুর্নীতি হয়েছে কি না বলতে পারব না। তবে এই নিয়ে তিন তিনবার পরীক্ষা দিয়েও চাকরি পেলাম না। অথচ দেখলাম অনেক কম যোগ্যতার লোকজন চাকরি পেয়েছে।” |